
আমাদের প্রতিদিনের আর্থিক লেনদেনের মূল ভিত্তি কিন্তু সেভিংস অ্যাকাউন্ট। কোনও পেমেন্ট, টাকা ট্রান্সফার, টাকা তোলা বা জমা; সবই হয় আপনার সেভিংস অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে। কিন্তু জানেন কি, এই সাধারণ লেনদেনগুলোও আপনাকে টেনে নিয়ে যেতে পারে আয়কর দফতরের নজরে? ফলে, এই বিষয়ে সতর্ক হয়ে যান আগে থেকেই।
এক অর্থবর্ষে যদি আপনি আপনার সেভিংস অ্যাকাউন্টে সব মিলিয়ে ১০ লাখ টাকার বেশি নগদ জমা করেন, তবে ব্যাঙ্ক তা সরাসরি আয়কর দফতরে রিপোর্ট করতে বাধ্য। চাটার্ড অ্যাকাউন্টেন্টরা বলছেন, ‘এর মানে এই যে ১০ লক্ষ টাকা, তা বেআইনি, এমন নয়। তবে আপনাকে অবশ্যই এই অর্থের উৎস ব্যাখ্যা করতে হবে। ফলে, যে যে উৎস থেকে এই টাকা আপনার কাছে এসেছে, সেই কাগজপত্র আপনাকে রেডি রাখতে হবে।’
আপনার ক্রেডিট কার্ডের পেমেন্টেও নজর রয়েছে। নগদে ১ লাখ টাকা বা অনলাইন-চেক মিলিয়ে মোট ১০ লাখ টাকার বেশি বিল পেমেন্ট করলেই তা রিপোর্ট করা হয়। আপনার জীবনযাত্রার খরচ ও আপনার ঘোষিত আয়ের সঙ্গে এই তথ্য মেলানো হয়।
যদি আপনার ঘোষিত আয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য না রেখে আপনি অস্বাভাবিক বড় অঙ্কের নগদ তোলেন, তবে সেটি সন্দেহজনক হতে পারে। চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্টরা এই ক্ষেত্রে পরামর্শ দিচ্ছেন, যা কোনও লেনদেনের প্রমাণ কিন্তু তৈরি রাখা দরকার।
৩০ লাখ টাকা বা তার বেশি মূল্যের যে কোনও স্থাবর সম্পত্তি ক্রয় বা বিক্রয় হলে রেজিস্ট্রার বা সাব-রেজিস্ট্রার তা রিপোর্ট করেন। এই লেনদেনগুলোও আয়কর দফতর খুঁটিয়ে দেখে।
ব্যাঙ্ক আপনার অ্যাকাউন্টে জমা হওয়া মোট সুদের হিসাব আয়কর দফতরে জানায় (Annual Information Statement বা Form 26AS-এ দেখা যায়)। যদি আপনার জমা দেওয়া আয়কর রিটার্ন ফাইলের সঙ্গে এই তথ্যের যদি সামান্যতম অমিল হয়, তবে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নোটিস আসতে পারে। এমনকি ১০ হাজার টাকার কম সুদও কিন্তু Annual Information Statement-এ দেখা যায়।
উৎসবের সময় অনেকে বন্ধুর কার্ড ধার করে ডিসকাউন্ট নিতে বড় অঙ্কের পেমেন্ট করেন। সেই টাকা পরে নগদে শোধ করা হয়। চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্টরা বলছেন, এই ধরনের লেনদেন অন্যের অ্যাকাউন্টে রিপোর্ট করার সীমা বাড়িয়ে দিতে পারে এবং Statement of Financial Transactions-এর আওতায় চলে আসতে পারে এই ধরনের লেনদেন।
আয়কর ডিপার্টমেন্ট এখন PAN-এর মাধ্যমে সব ডিজিটাল লেনদেন ট্র্যাক করে। ফলে, আপনার প্রথম ও প্রধান কাজ হল, আয়কর পোর্টালে আপনার Annual Information Statement-এ নিয়মিত নজর রাখুন। ব্যাঙ্কের রিপোর্ট করা সুদ, বিনিয়োগ ও সম্পত্তির লেনদেনের সঙ্গে আপনার আয়কর রিটার্ন মিলিয়ে নিন। আপনার ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে অন্য কেউ যেন হিসাব বহির্ভূত টাকা আদান-প্রদান বা নগদ পরিশোধ না করে, সেটা খেয়াল রাখুন। লেনদেনের উৎস ও উদ্দেশ্য স্পষ্টভাবে লিখে রাখুন—প্রশ্ন এলে যেন উত্তর দিতে পারেন।
এই সতর্কতাগুলি মেনে চললে আপনি যেমন স্বচ্ছ থাকতে পারবেন, তেমনই এড়ানো যাবে ভবিষ্যতে আইনি জটিলতা। কারণ সময়ের দাবি মেনে আগামীতে কিন্তু এই ধরনের ডিজিটাল ট্র্যাকিং আরও বাড়বে।