ওয়াশিংটন: ভারত এখনও বিশ্বের বৃহত্তম ক্রমবর্ধমান অর্থনীতির দেশ। এমনটাই জানালেন ইন্টারন্যাশনা মনিটরি ফান্ড বা আইএমএফ-এর এশিয়া প্যাসিফিক বিভাগের ডিরেক্টর, কৃষ্ণ শ্রীনিবাসন। মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর), সংবাদ সংস্থা পিটিআই-কে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছন তিনি। তিনি বলেছেন, “ভারত এখনও বিশ্বের বৃহত্তম ক্রমবর্ধমান অর্থনীতির দেশ। আমাদের অনুমান, ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে ভারতের জিডিপি সাত শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। কারণ, গ্রামীণ এলাকায় ফসল উৎপাদন ভাল হওয়ায় কেনাকাটা আগের জায়গায় ফিরেছে। কিছু অস্থিরতা সত্ত্বেও, খাদ্যের দাম স্বাভাবিক হওয়ার কারণে ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে মুল্যবৃদ্ধি ৪.৪ শতাংশে নেমে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। নির্বাচন সত্ত্বেও, ফিস্কাল কনসোলিডেশন ঠিকঠাক জায়গায় রয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার ভাঁড়ারের অবস্থাও বেশ ভাল। ভারতের জন্য ম্যাক্রো ফান্ডামেন্টাল্সগুলিও ভাল জায়গায় আছে।”
নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে আর্থিক সংস্কারের ক্ষেত্রে ভারতকে তিনটি বিষয়কে অগ্রাধিকার দিতে হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, “প্রথম বিষয়টি হল, ভারতে কর্মসংস্থান তৈরির ক্ষেত্রে একটি সমস্যা রয়ে গিয়েছে। সেই প্রেক্ষিতে, আমি মনে করি ২০১৯-২০ সালে অনুমোদিত শ্রম বিধিগুলি বাস্তবায়ন করা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই বিধিগুলি শ্রমিকদের সামাজিক সুরক্ষা দেওয়ার পাশাপাশি শ্রমবাজারকে নমনীয় হতে দেবে।”
“দ্বিতীয় বিষয়টি হল, যদি ভারত প্রতিযোগিতামূলক হতে চায়, তবে আপনাদের এই মুহূর্তে বাণিজ্য বিষয়ক কিছু বিধিনিষেধও সরাতে হবে। কারণ, আপনি যখন বাণিজ্য উদারীকরণ করেন, তখন শুধুমাত্র উত্পাদনশীল সংস্থাগুলিই টিকে থাকে। প্রতিযোগিতা আরও বাড়ে এবং সেই ক্ষেত্রে আপনাআপনিই চাকরি তৈরি হয়। আমি মনে করি, বাণিজ্যের বিধিনিষেধ আরও বেশি করে অপসারণ করা গুরুত্বপূর্ণ।”
“পরিশেষে, আমি বলব যে সংস্কারের কাজ চালিয়ে যান। পরিকাঠামো বৃদ্ধি, তা ভৌত পরিকাঠামোই হোক বা ডিজিটাল পরিকাঠামো, সেটা তো করে যেতেই হবে। এটা অন্যতম বড় অর্জন। কিন্তু এর বাইরে গিয়ে, আমি বলব আপনাকে কৃষি এবং ভূমি সংস্কারের দিকে মনোনিবেশ করতে হবে। শিক্ষা এবং দক্ষতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে আপনাকে আরও ভাবতে হবে। যে অর্থনীতিতে পরিষেবা খাতে অনেক বেশি চাকরি তৈরি হয়, সেখানে সঠিক ধরনের দক্ষতা থাকা গুরুত্বপূর্ণ৷ তাই, শিক্ষায় বিনিয়োগ করা, শ্রম বাহিনীকে দক্ষ করে তোলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীকে শক্তিশালী করা আরও একটি সংস্কার।”
মোদী সরকার প্রথম থেকেই ব্যবসার পরিবেশ সহজ করার উপর জোর দিয়েছে। লাল ফিতের ফাঁস যতটা সম্ভব কমানোর চেষ্টা করেছে। তবে আরও অনেকটা পথ যাওয়া বাকি বলে জানিয়েছেন শ্রীনিবাসন। তিনি বলেছেন,”আপনাদের এখনও অনেক লাল ফিতের ফাঁস আছে। ব্যবসার পরিবেশের উন্নতি করা গুরুত্বপূর্ণ দিক। এই ধরনের কিছু সংস্কারকে, আমি মনে করি, অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত।” তিনি জানিয়েছেন, বিশ্বের একাংশের বিনিয়োগকারীদের ধারণা, ভারতীয় বাজারে প্রবেশ করা, বিনিয়োগ করা, বড় বিনিয়োগের জন্য জমি পাওয়া সমস্যা হতে পারে। এমনকী, ব্যবসা বন্ধ করা, ভারতীয় বাজার থেকে বেরিয়ে আসাটাও সমস্যার বলে মনে করেন অনেকে।
বেকারত্বের হার ৪.৯ শতাংশে নেমে এসেছে উল্লেখ করে তিনি জানান, শ্রমশক্তির অংশগ্রহণ এবং কর্মসংস্থান-জনসংখ্যার অনুপাত বাড়ছে। তিনি বলেন, “শ্রমবাজারে অংশগ্রহণের হার ৫৬.৪ শতাংশ এবং কর্মসংস্থান-জনসংখ্যার অনুপাত প্রায় ৫৩.৭ শতাংশ। গত শতাব্দীর চারের দশকের তুলনায় এটা অনেকটাই বেড়েছে। বেশিরভাগ উন্নতি হয়েছে স্ব-নিযুক্ত কর্মীদের ক্ষেত্রে।” তবে, যে ধরনের চাকরি তৈরি হচ্ছে তা সর্বোত্তম নয় বলেও জানিয়েছেন তিনি। দেশের শ্রমশক্তিতে মহিলাদের অংশগ্রহণ কম থাকা এবং যুবদের মধ্যে বেকারত্বের বিষয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তিনি। তিনি বলেছেন, “তাই, কর্মসংস্থান সৃষ্টির পরিবেশ উন্নত করার উপর জোর দিতে হবে।”