Defense Exporter: সস্তায় পুষ্টিকর, অস্ত্রের বাজারে রাশিয়া-আমেরিকাকে মাত করতে ‘মাস্টারস্ট্রোক’ ভারতের

Defense Exporter: ওষুধ এবং আইফোনের সঙ্গেই আরও একটি সেক্টরে নিজেদের উৎপাদনের শীর্ষে নিয়ে যেতে চায় ভারত। সেটি হল প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম তৈরিতে। সেই উদ্দেশ্যেই ক্ষেপণাস্ত্র, হেলিকপ্টার, এবং যুদ্ধজাহাজ নির্মাণের ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা নিতে চাইছে ভারত।

Defense Exporter: সস্তায় পুষ্টিকর, অস্ত্রের বাজারে রাশিয়া-আমেরিকাকে মাত করতে মাস্টারস্ট্রোক ভারতের
Image Credit source: PTI

Apr 17, 2025 | 1:36 PM

ভারত এখন বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হওয়ার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ভারত। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর এই ভিশনের আরেকটি দিক হল ভারতকে বৈশ্বিক কারখানায় রূপান্তরিত করা। তার ফলে এখন অনান্য জায়গার তুলনায় অনেক কম দামে আইফোন এবং ওষুধ তৈরি হয় এই দেশে। যা ব্যপক হারে রপ্তানি হয় গোটা বিশ্বে।

শুধু এখানেই শেষ নয়। ওষুধ এবং আইফোনের সঙ্গেই আরও একটি সেক্টরে নিজেদের উৎপাদনের শীর্ষে নিয়ে যেতে চায় ভারত। সেটি হল প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম তৈরিতে। সেই উদ্দেশ্যেই ক্ষেপণাস্ত্র, হেলিকপ্টার, এবং যুদ্ধজাহাজ নির্মাণের ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা নিতে চাইছে ভারত।

বিভিন্ন সূত্রে খবর, ইউক্রেনের পর বিশ্বের বৃহত্তম অস্ত্র আমদানিকারক দেশ এবার রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন রপ্তানি-আমদানি ব্যাংক (EXIM/ state-owned Export-Import Bank) ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সচেষ্ট। এমনকি ক্লায়েন্টদের দীর্ঘমেয়াদী, কম খরচে ঋণ প্রদানের ক্ষমতা বৃদ্ধি করছে।

চারজন ভারতীয় কর্মকর্তা জানিয়েছেন, নয়াদিল্লি তার বিদেশী মিশনগুলিতে প্রতিরক্ষা অ্যাটাশেদের সংখ্যাও তীব্রভাবে বৃদ্ধি করবে। নতুন কর্মসূচির অংশ হিসেবে যেখানে সরকার সরাসরি অস্ত্র চুক্তি নিয়ে আলোচনা করবে। বিশেষ করে যেসব দেশ এতদিন ধরে অস্ত্র কেনার জন্য রাশিয়ার উপরে নির্ভরশীল ছিল তাদের জন্য অস্ত্র বানাতে সচেষ্ট ভারত।

প্রসঙ্গত, দুই পারমাণবিক অস্ত্রধারী ‘সুপ্রতিবেশী’ চিন ও পাকিস্তানকে প্রতিরোধ করার জন্য ভারতীয় আমলারা দীর্ঘদিন ধরেই রাশিয়ার সুখোই থেকে যুদ্ধবিমান এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হাউইটজার কেনার উপর জোর দিয়েছেন। ভারতে দীর্ঘদিন ধরেই ছোট অস্ত্র উৎপাদনের ক্ষেত্র রয়েছে। বেসরকারি সংস্থাগুলি সম্প্রতি উচ্চমানের অস্ত্রশস্ত্র এবং যুদ্ধের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম তৈরিও শুরু করেছে।

কিছুদিন আগেই প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিংহ নিজে এক্স মাধ্যমে লেখেন, “ভারত প্রতিরক্ষা রপ্তানি বৃদ্ধির লক্ষ্য অর্জনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।”

বিশেষজ্ঞদের মতে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি থেকেই ইউক্রেন- রাশিয়ার মধ্যে যুদ্ধ পরিস্থিতি সমগ্র অস্ত্র বাজারের চেহারাটা বদলে দিয়েছে। রাশিয়ার কারখানাগুলি যখন প্রায় একচেটিয়াভাবে যুদ্ধের জন্য অস্ত্র তৈরি করতে ব্যস্ত, তখন অতিরিক্ত পশ্চিমা অস্ত্রাগার কিয়েভে পাঠানো হয়েছিল। এর ফলে অন্যান্য দেশগুলি যারা এতদিন মূলত অস্ত্রের জোগানের জন্য ওয়াশিংটন এবং মস্কোর উপর নির্ভর করত, তারা এই দুই উৎস ছেড়ে বিকল্প রাস্তা খুঁজতে থাকে।

সেই চাহিদা পূরণ করতেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে চাইছে ভারত। সরকারি তথ্য অনুসারে, ভারত ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ১৪.৮ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র উৎপাদন করেছে। যা ২০২০ সালের তুলনায় ৬২% বেশি। কিয়েভের প্রতিরক্ষার সমর্থনে ইউক্রেনের ফ্রন্টলাইনে কিছু ভারতে তৈরি অস্ত্র পাওয়া গিয়েছে।

মোদী সরকার ২০২৯ সালের মধ্যে অস্ত্র ও সরঞ্জাম রপ্তানি দ্বিগুণ করে ৬ বিলিয়ন ডলারে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। বর্তমানে বেশি বিক্রি হওয়া গোলাবারুদ, ছোট অস্ত্র এবং প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের উপাদানগুলির বাইরেও অনান্য সামরিক রপ্তানির অংশ হয়ে উঠবে ভারত। বিশ্বব্যাপী বাজেটের টানাপোড়েন এবং ক্রমবর্ধমান প্রতিরক্ষা চাহিদার এই সময়ে, ভারত আংশিকভাবে তুলনামূলকভাবে কম খরচের উৎপাদনকারী হিসেবে নিজেকে তুলে ধরছে।

যেখানে ১৫৫ মিমি আর্টিলারি গোলাবারুদ ইউরোপীয় দেশগুলির থেকে কিনতে খরচ পড়ে প্রায় ৩,০০০ ডলারেরও বেশি। সেখানে ভারত তা প্রতি পিস প্রায় ৩০০ থেকে ৪০০ ডলারে উৎপাদন করতে পারে। ভারতীয় কোম্পানিগুলিও প্রায় ৩ মিলিয়ন ডলারে হাউইটজার বিক্রি করেছে, যা ইউরোপীয় তৈরি সংস্করণের দামের প্রায় অর্ধেক।

ঠান্ডা লড়াইয়ের পর কামান এবং অন্যান্য প্রতিরক্ষা উৎপাদন কমিয়ে দেওয়া পশ্চিমের দেশগুলি যখন কারখানা পুনরায় চালু করার জন্য তাড়াহুড়ো করছে, তখন রাষ্ট্রায়ত্ত মুনিশনস ইন্ডিয়া ভারতীয় সংস্থাগুলির মধ্যে ছিল যারা এই ক্ষমতা বজায় রেখেছিল।

কেপিএমজির ভারতীয় মহাকাশ ও প্রতিরক্ষা পরামর্শদাতা অবসরপ্রাপ্ত নৌ কমান্ডার গৌতম নন্দ জানান, সাম্প্রতিক বছরগুলিতে পাকিস্তান ও চিনের সঙ্গে যুদ্ধে মুখোমুখি হওয়া দিল্লির কৌশলগত পরিস্থিতি ছিল ভিন্ন। আমাদের উৎপাদন ক্ষমতায় কোনও কাটছাঁট করা হয়নি।

আদানি ডিফেন্স অ্যান্ড অ্যারোস্পেস এবং বর্ম ও গোলাবারুদ প্রস্তুতকারক এসএমপিপির মতো বেসরকারি নির্মাতারা ১৫৫ মিমি আর্টিলারি শেল তৈরি শুরু করেছে। তারা বলেছে যে বিভিন্ন বিদেশী সরকারগুলি ইতিমধ্যেই অর্ডারও দিয়েছে।

ব্রাজিল, আফ্রিকা, দক্ষিণ আমেরিকা এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলিতে অস্ত্র সরবরাহের ক্ষেত্রে মনোনিবেশ করছে ভারত। ভারত ২০২৬ সালের মার্চ মাসের মধ্যে বিদেশী দূতাবাসে কমপক্ষে ২০ জন নতুন প্রতিরক্ষা অ্যাটাশে পাঠানোর পরিকল্পনা করছে। সেই সব দেশের তালিকায় রয়েছে আলজেরিয়া, মরক্কো, গায়ানা, তানজানিয়া, আর্জেন্টিনা, ইথিওপিয়া এবং কম্বোডিয়া। দিল্লির বিশ্বাস এই সব দেশে অস্ত্র রপ্তানি উল্লেখযোগ্যভাবে সম্প্রসারণ করার ক্ষমতা রয়েছে ভারতের।