
আগেও বারে বারে বিভিন্ন পরীক্ষায়, চাপের মুখে সামনে নির্দ্বিধায় পাশ করে গিয়েছে ভারতীয় নৌবাহিনী। আর এখন এক নতুন অধ্যায়ের সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে রয়েছে তারা। দেশের একাধিক শিপইয়ার্ডে তৈরি হচ্ছে মোট ৫৪টি যুদ্ধজাহাজ। যা কি না ভারতীয় নৌবাহিনীর ইতিহাসে সবচেয়ে বড় দেশীয় নির্মাণ কর্মসূচি। এই কর্মসূচির মূল লক্ষ্য কেবল নৌবাহিনীতে থাকা জাহাজের সংখ্যা বাড়ানো, এমন নয়, বরং আত্মনির্ভরশীলতা অর্জন।
ভারত মহাসাগর, বঙ্গোপসাগর ও আরব সাগরে চিনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব আর চিনের বলে বলীয়ান হয়ে ওঠা পাকিস্তানের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এটিকে ভারতের দীর্ঘমেয়াদী কৌশল বলাই যায়। প্রধানমন্ত্রীর ‘সাগর’ (SAGAR) ভিশন আর ‘আত্মনির্ভর ভারত’ নীতির অধীনে এই বিপুল কর্মযজ্ঞ চলছে। নৌবাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা জানাচ্ছেন, ২০৩০ সালের মধ্যে এই সবকটি জাহাজ নৌ সেনায় যুক্ত হবে। ২০৩৫ সালের মধ্যে ভারতের হাতে থাকবে ২০০টির বেশি যুদ্ধজাহাজ ও ডুবোজাহাজে। অন্তত লক্ষ্য তাইই বলছে।
কলকাতা কি এর বাইরে? মোটেও না। গার্ডেন রিচ শিপবিল্ডার্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার্স (GRSE) এই কর্মসূচির অন্যতম স্তম্ভ। সম্প্রতি এই GRSE থেকেই তৈরি হয়ে বেরিয়েছে ‘আইএনএস অন্ধ্রথ’, যা একটি অত্যাধুনিক অ্যান্টি-সাবমেরিন ওয়ারফেয়ার ক্র্যাফট। এই জাহাজের ৮০%-এর বেশি উপাদান দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি। এটি গার্ডেন রিচ শিপবিল্ডার্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার্সের মতো দেশীয় সংস্থার দক্ষতার এক জ্বলন্ত প্রমাণ।
নৌবাহিনীর এক সিনিয়র কর্মকর্তা বলেছেন, ‘আমরা এখন আর কেবল ক্রেতা নই, আমরা নির্মাতা।’ এই কর্মসূচি দেশের প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে হাজার হাজার নতুন কর্মসংস্থান তৈরি করছে। আইএনএস তামাল নামক শেষ বিদেশী যুদ্ধজাহাজটি এই বছরই নৌবহরে যোগ দিয়েছে, যা ভারত-রাশিয়ার দীর্ঘদিনের সম্পর্কের প্রতিফলন। এখন সব নজর দেশীয় নির্মাণের দিকে। আগামী কয়েক মাসে আরও ১০টি দেশীয় যুদ্ধজাহাজ ভারতীয় নৌ বাহিনীতে যোগ দেওয়ার কথা।
এই কর্মসূচি শুধু যুদ্ধজাহাজ তৈরিতে সীমাবদ্ধ নয়, এটি ভারতের কৌশলগত স্বনির্ভরতার প্রতীক। যখন বিশ্বজুড়ে ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়ছে, তখন ভারতের এই পদক্ষেপ নিশ্চিত করছে যে আগামী দিনগুলিতে ভারত মহাসাগরের নিরাপত্তা ভারতের হাতেই থাকবে।