
জার্মানির স্টুর্টগার্টে চলছে নিউজ নাইন গ্লোবাল সামিট। আর সেখানেই বক্তব্য রাখেন ভারত ও জার্মানির একাধিক বড় বড় কূটনীতিবিদ। তার মধ্যে অন্যতম হলেন ইন্দো-জার্মানি সোসাইটির সভাপতি ও অবসরপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত ডঃ ইয়ুর্গেন মোরহার্ড। আর এখানেই তিনি বলেন প্যারাডিপ্লমেসির কথাও। প্যারাডিপ্লমেসি অর্থাৎ দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কেই বাইরে বেরিয়ে দুই দেশের দুই শহর বা রাজ্যের মধ্যে যে কূটনৈতিক সম্পর্ক।
ডঃ মোরহার্ড তাঁর বক্তব্যের শুরুতেই একটি তীক্ষ্ণ প্রশ্ন রাখেন। তিনি বলেন, যখন দুই রাষ্ট্রপ্রধান বা মন্ত্রী একে অপরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন, তখন তাকে ‘স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশিপ’-এর মতো বিরাট নাম দেওয়া হয়। কিন্তু এই বৈঠক কয়েক মাস আগে থেকেই পরিকল্পনা করা হয়। ফলে ‘এই এক ঘণ্টার বৈঠক কি সত্যিই দুই দেশের বন্ধুত্ব বাড়িয়ে দেয়?’ তিনি বলেন, তাঁর বিশ্বাস দুই দেশের বন্ধুত্ব ক্যামেরার সামনে করমর্দনের মাধ্যমে হয় না। বরং দুই দেশের মানুষ একে অপরের জীবনের অংশ হয়ে ওঠে যখন, সেটাই আসল বন্ধুত্ব।
এখানেই ‘প্যারাডিপ্লমেসি’র কনসেপ্ট নিয়ে কথা বলেন তিনি। তিনি ব্যাখ্যা করেন, এটি আসলে একটি গভীর মানবিক ও বাস্তবিক সংযোগ। দুই দেশের দুটি শহর বা বিশ্ববিদ্যালয় যখন একে অপরের অংশীদার হয়ে উঠবে, তখনই এই গভীরতর কূটনীতি সম্ভব। তিনি বলেন, কীভাবে ফুটবল ম্যাচ বা কোনও সঙ্গীত প্রদর্শনী দুই দেশের মধ্যের ক্ষত সারিয়ে তুলতে পারে। এই ক্ষত কখনই কোনও দেশের সরকার ঠিক করতে পারে না।
ডঃ ইয়ুর্গেন মোরহার্ড আরও বলেন, বাইরের কোনও দেশ থেকে আসা শিক্ষকও বা ছাত্রের সঙ্গে তিনি দেখা করতেন, তাদের মধ্যে এক অদ্ভূত খুশির ঝিলিক দেখতে পেতেন। আসলে, অন্য দেশে থাকা, তাদের সঙ্গে দীপাবলি থেকে ক্রিসমাস পালন করার যে অভিজ্ঞতা, সেখান থেকে এসেছে। তিনি বলেন, এই সব ছোট ছোট অভিজ্ঞতাই কোনও ব্যক্তিকে চিরতরে বদলে দেয়।
ডঃ মোরহার্ড তাঁর বক্তব্য শেষ করেন একটি বার্তা দিয়েই। তিনি বলেন, ‘সরকার চুক্তির মাধ্যমে বন্ধুত্ব স্থাপনের কথা বলতেই পারে। কিন্তু সেই চুক্তিকে বাস্তবে পরিণত করতে পারে শুধুমাত্র দেশের সাধারণ মানুষই’। এই সামিটে উপস্থিত সকলকেই ভারত ও জার্মানির মধ্যে যে মানবিক সংযোগ, তার অংশ হতে আহ্বান জানান যাতে ভারত ও জার্মানির মধ্যে এই আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক একটি প্রাণবন্ত ও গভীর বন্ধুত্বে পরিণত হয়।