
সকলের জন্য স্বাস্থ্যবিমা। এটাই লক্ষ্য কেন্দ্রীয় সরকারের। ২০৪৭ সালের মধ্যে দেশের সব মানুষ যাতে স্বাস্থ্য বিমার আওতায় আসে, তারই প্রচেষ্টায় কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু এই লক্ষ্যপূরণ নিয়ে একাধিক সমস্যা দানা বাঁধছে। ‘মহাভারত’-এ একটি শ্লোক রয়েছে, ‘যতঃ ধর্মস্ততো জয়ঃ’। এর অর্থ, ‘যেখানে ধর্ম, সেখানেই জয়’। অর্থাৎ, এই স্বাস্থ্যবিমা নিয়ে গ্রাহকের আস্থা অর্জন করতে না পারলে এই লক্ষ্য হয়তও অধরাই থেকে যাবে।
আগের প্রজন্মের মানুষরা স্বাস্থ্যবিমা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল ছিলেন না। আর যাঁরা জানতেন তাঁরা কিছু ক্ষেত্রে করাতেন। যদিও আগে হাসপাতালের খরচ আজকের মতো এত বেশি ছিল না। আর সেই কারণেই অনেকেই এই বিমার প্রয়োজনীয়তাই অনুভব করেনি। তবে, বর্তমানে যে হারে চিকিৎসার খরচ বাড়ছে তাতে স্বাস্থ্যবিমা একটি অতি প্রয়োজনীয় জিনিসে পরিণত হচ্ছে। আর একই সঙ্গে নতুন প্রজন্মের মধ্যে স্বাস্থ্যবিমা নিয়ে সন্দেহ বাড়ছে। তারা এখন থেকেই বিকল্প খুঁজছে। কারণ, বিমা সংস্থাগুলো একাধিক সমস্যা তৈরি করে।
একটা অদ্ভূত সমস্যা এই বিমা সংস্থাগুলো তৈরি করে। বিমান বিক্রির সময় তারা এক রকম আচরণ করে। দাবি করে ৯৯ শতাংশের বেশি ক্লেম তারা পাস করিয়ে দেয়। আর সেই একই সংস্থা বিমার কভারেজ দেওয়ার সময় ঠিক উল্টো ব্যবহার করে। প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে এই সংস্থাগুলো সামান্য গোলমালও পাত্তা না দিয়ে বিমা বিক্রি করে দেয়। আর ক্লেম দেওয়ার সময় সেই সমস্যাগুলো নিয়ে অদ্ভূত আচরণ করে ও ক্লেম দিতে চায় না। শুরু হয় চুলচেরা তদন্ত।
অনেক ক্ষেত্রে পুরনো পলিসি থেকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ফিচার তুলে নেওয়া হয়। ফলে, এই পলির সঙ্গে যে সব গ্রাহক রয়েছেন, তাঁরা পড়েন সমস্যায়। আসলে, এই ক্ষেত্রে পলিসির কাগজের নীচের দিকে সূক্ষ ভাবে লেখা থাকে শর্তাবলী। আর সেই শর্তাবলীর জুজু দেখিয়ে গ্রাহকদের খরচ করানো হয় বাড়তি টাকা। আর এতেই বিভ্রান্তি বাড়ে গ্রাহকদের।
কোনও পলিসির ক্ষেত্রে যদি গ্রাহক ভুল করে তাহলে সেই গ্রাহকের পলিসি বাতিল হয়। আর যদি কোনও বিমা সংস্থা কোনও ভুল করে বসে, তাহলে সাফার করতে হয় সেই গ্রাহককেই। কারণ সেই সময় একাধিক জটিল প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যেতে হয় ওই গ্রাহককে। আর এই কারণেই গ্রাহকরা মনে করেন, ‘ক্লেম রিজেকশন’ আসলে একটি ব্যবসায়িক কৌশল। আবার ক্লেম পাওয়ার জন্য অনেকেই লড়াই শুরু করেন, তারপর মাঝপথে হাল ছেড়ে দেন। যদিও ২০২৩-২৪ সালের ইন্স্যুরেন্স ন্যায়পাল রিপোর্ট বলছে, অর্ধেকের বেশি অভিযোগের ক্ষেত্রে রায় গ্রাহকদের পক্ষেই গিয়েছে, যার মধ্যে ৬২ শতাংশ নিষ্পত্তি হয়ে গিয়েছে কোনও বিচার ছাড়াই। অর্থাৎ, বিমা সংস্থাগুলি জানে যে ন্যায্য দাবি কোনটা। তারপরও তারা গ্রাহককে অপেক্ষা করায়।
গ্রাহকের আস্থা ফেরাতে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। ‘মোরাটোরিয়াম ধারা’ আরও শক্তিশালী করতে হবে। পাঁচ বছরের বেশি পুরনো ক্লেমে যেন ‘প্রতারণা’-র অজুহাতে তদন্ত না হয়। এছাড়া, ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থার সিবিলের মতো গ্রাহকের ঝুঁকি সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহের একটি কেন্দ্রীয় ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে। গ্রাহকের ওপর স্বাস্থ্য সংক্রান্ত ইতিহাস ঘোষণার বোঝা চাপানো চলবে না। দেশে মাত্র ১৭টি ন্যায়পাল অফিস রয়েছে; এই সংখ্যা বাড়াতে হবে এবং ব্যাঙ্কিং ন্যায়পালের মতো এদের ক্ষমতাও বাড়াতে হবে। তথ্য প্রকাশ, এই সংক্রান্ত আইনকে সঠিক ভাবে প্রয়োগ ও সংস্থাগুলোর অসৎ আচরণের বিষয়গুলো প্রকাশ্যে নিয়ে এলেই ২০৪৭-এর মধ্যে স্বাস্থ্য বিমার লক্ষ্য পূরণ হবে।