
মধ্যবিত্ত সমস্যায় রয়েছে। লেখক ও অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞ সৌরভ মুখার্জি সংবাদসংস্থা মিন্টকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এই কথা বলছেন। কেন তিনি এমন বলছেন তাও পরিষ্কার করেছেন ওই পডকাস্টে। তিনি বলছেন, সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানরা পড়াশোনা করে, ডিগ্রি অর্জন করে। তারপর ২১ বা ২২ বছরে কোনও তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা বা কোনও ব্যাঙ্ক বা কোনও মিডিয়া হাউসে কোনও চাকরি পায় তারা।
আর এখানেই ভয়ঙ্কর কথা শুনিয়েছেন তিনি। তাঁর বক্তব্য, প্রযুক্তি এই ধরণের সব চাকরি খেয়ে নেবে। তিনি আরও বলছেন, তাঁর পরিবারেও এমন ঘটনার সাক্ষী রয়েছেন তিনি। এ ছাড়াও, দেখা গিয়েছে অনেক বড় সংস্থা ছাঁটাই করছে বা অনেক সংস্থা নতুন কোনও লোক নিচ্ছে না। তিনি বলছেন, দেশের বড় বড় সংস্থাগুলোতেও গত কয়েকবছরে সেভাবে নতুন নিয়োগ হয়নি।
তবে, শুধুমাত্র এন্ট্রি লেভেলের চাকরি নয়, মিডল ম্যানেজমেন্টে চাকরিরতরাও এআই-এর কারণে বিপদে। যদিও, পশ্চিমা বিশ্বে এর প্রভাব অতটাও নয়। তিনি বলছেন, সেখানে তরুণ প্রজন্মের তুলনায় বয়স্ক মানুষ বেশি থাকায়, কর্মক্ষম জনসংখ্যা অনেকটা কম। ফলে সে সব দেশে অতটাও সমস্যায় পড়বেন না সেখানের তরুণ প্রজন্ম।
তাহলে ভারত সমস্যায় কেন? আমাদের দেশের মানুষের গড় বয়স মাত্র ২৮ বছর। বেশিরভাগই বয়সে তরুণ। প্রতিবছর ভারতে ১ কোটি যুবক-যুবতী গ্র্যাজুয়েট হয়। সৌরভবাবু বলছেন, আসল সমস্যা সেখানে নয়। ভারতের তরুণ প্রজন্ম যারা নতুন চাকরিতে যোগ দিচ্ছে, তাদের পক্ষে নিজেদের আপগ্রেড করা অনেক সহজ। ফলে চাপ বাড়ছে যাঁদের বয়স খানিকটা বেড়ে গিয়েছে তাদের উপর।
আলোচনায় সৌরভ মুখার্জি বলছেন মধ্যবিত্তের উপর আসতে থাকা চাপের কথা। তিনি বলছেন বর্তমানে মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ টাকা জমানো ও বিনিয়োগের কথা চিন্তা না করে বিভিন্ন বিষয়ের উপর টাকা খরচ করছে। তিনি বলছেন, মধ্যবিত্তের ঋণের পরিমাণের ক্ষেত্রে ভারত এখন বিশ্বসেরা। যদিও এর মধ্যে হোমলোনের পরিমাণ খুবই কম। অর্থাৎ, ভারতীয়রা বর্তমানে কনজিউমার লোন, ক্রেডিট কার্ডের লোনের উপর তাদের জীবন কাটাচ্ছেন।
আগামীতে ভারতে গিগ ওয়ার্কারের সংখ্যা বাড়বে বলে মনে করছেন সৌরভবাবু। বর্তমানে যাঁরা হোয়াইট কলার জব করেন, তাঁরা এই ধরণের কাজ এবার হয়তো শুধুই ফ্রিল্যান্সিংয়েই করবে। বিভিন্ন সংস্থা এখন আর একই কাজের জন্য লোক রাখবে না। সেই সব কাজ এবার থেকে জেনারেটিভ এআই করবে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, কয়েকদিন পর থেকে সংস্থাগুলো আর মাইনে দিয়ে এইচআর ম্যানেজার রাখবে না। এবার থেকে হয়তো সেই কাজ করবে কোনও চ্যাটবট। এমনই ভয়ঙ্কর কথা শুনিয়েছেন এই অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞ।
ভারতের অর্থনীতিতে এমন অবস্থা আসতে কতদিন লাগতে পারে? সংবাদসংস্থা মিন্টকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সৌরভ মুখার্জি জানিয়েছেন অনেকেই বলছেন এমন অবস্থা আসতে হয়তো ৫-৬ বছর সময় লাগতে পারে। কিন্তু তিনি এই বিষয়ে সহমত পোষণ করেন না। তাঁর মতে আগামী ৩ বছরের মধ্যেই এমন অবস্থা দেখতে পেতে পারেন ভারতের সাধারণ মানুষজন।