স্বাস্থ্যবিমা ও জীবনবিমা, অনেকে খুব একটা গুরুত্ব না দিলেও আমার আপনার মতো সাধারণ মানুষের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। কিন্তু এই ধরণের বিমার প্রিমিয়ামে ১৮ শতাংশ জিএসটি দিতে হয়। এমন গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক পণ্যে কোনও ধরণের কর থাকা একেবারেই উচিৎ নয়। এই নিয়ে দেশজুড়ে চাপের মুখে বিশেষ কাউন্সিল গঠন করা হয়। সেই কাউন্সিল মূলত তিনটি সুপারিশ করেছে।
বহুদিন ধরে অপেক্ষায় বসে ‘আম আদমি’। তাঁদের কথা মাথায় রেখে এবার নয়া সুপারিশ নিয়ে এল জিএসটি কাউন্সিল। প্রথমত, প্রবীণদের স্বাস্থ্যবিমায় আর কোনও জিএসটি দিতে হবে না। দ্বিতীয়ত, পাঁচ লক্ষ টাকা পর্যন্ত কভারেজে কোনও জিএসটি লাগবে না। তৃতীয়ত, বিমায় এনডাওমেন্ট পলিসিতে জিএসটি থাকলেও টার্ম পলিসিতে লাগবে না কোনও জিএসটি । সবকিছু ঠিকঠাক চললে দ্বীপাবলির আগেই এই তিন সুপারিশে সিলমোহর দিতে পারে জিএসটি কাউন্সিল।
আমার-আপনার জীবনে এর প্রভাব কী?
টার্ম পলিসিতে জিএসটি উঠে গেলে সাধারণ মানুষ কি এনডাওমেন্ট পলিসির বদলে টার্ম পলিসির দিকেই ঝুঁকবে? কলকাতার এক নামকরা বিমা বিশেষজ্ঞ বলছেন, এমন কোনও সম্ভাবনা এখনও অন্তত দেখা যাচ্ছে না। কারণটা খুবই সাধারণ। টার্ম পলিসি আর এনডাওমেন্ট পলিসির লক্ষ্য সম্পূর্ণ আলাদা। টার্ম ইন্সিওরেন্সের প্রিমিয়াম খুব কম হলেও আর আমাদের রাজ্যে এই পলিসির চল খুবই কম। এর প্রথম বা প্রধান কারণ হল, গ্রাহক জীবিত অবস্থায় কোনও রিটার্ন পান না। নির্দিষ্ট একটি বয়সের মধ্যে যদি গ্রাহক মারা যান, তবে তাঁর অনুপস্থিতিতে তাঁর পরিবার যেন আর্থিক সমস্যায় না পড়ে, এটাই টার্ম পলিসির প্রধান উপজীব্য।
অন্যদিকে, এনডাওমেন্ট পলিসিতে প্রিমিয়াম বেশি। তবে মেয়াদ শেষের পরে একটা থোক টাকা পাওয়া যায়। মেয়াদ শেষে টাকা মিলবে না, এটা জানার পরই টার্ম পলিসি বাঙালিরা প্রায় করাতেই চান না। আবার বিমা এজেন্টরাও টার্ম পলিসি করিয়ে তেমন কমিশন পান না। ফলে তাঁরাও এই বিষয় নিয়ে গ্রাহককে সচেতন করার গরজ দেখান না। অথচ পরিবারের সুরক্ষার কথা ভাবলে টার্ম পলিসির বিকল্প নেই।
বর্তমানে স্বাস্থ্যবিমা বা জীবনবিমায় ১৮ শতাংশ জিএসটি দিতে হয়। তবে, মেডিক্লেমে বা টার্ম পলিসিতে জিএসটি কমলেই যে বিমার খরচ কমবে – এমনটা এখনই জোর দিয়ে বলা যাচ্ছে না। জিএসটি কমার পর যেন বিমা সংস্থাগুলো প্রিমিয়াম না বাড়াতে পারে, সেটা কেন্দ্রকে অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে। সেটা করা গেলেই সাধারণ মানুষ এর সুবিধা পাবেন। আরও একটা বিষয় এই ক্ষেত্রে নিজর করার মতো। গত অর্থবর্ষে স্বাস্থ্যবিমায় প্রিমিয়াম বাবদ প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকার জিএসটি আদায় হয়েছে। টার্ম ইনসিওরেন্সের উপর জিএসটি আদায় বারোশো কোটি টাকার মতো। এই টাকা না এলে কোষাগার ভরাতে অন্যান্য জিনিসের ওপর জিএসটি বেড়ে যাবে না তো? সেদিকেও নজর রাখতে হবে অবশ্যই।