
পাকিস্তানের কোনও বাজারের পার্কিং লটে হঠাৎ গেলে মনে হতেই পারে সময় যেন এক ধাক্কায় কয়েক দশক পিছিয়ে গিয়েছে। কিন্তু এমন কেন? কারণ, পাকিস্তানে এখনও বেস্ট সেলার ৭০ সিসির বাইক। অন্তত ৪০ বছর আগে ভারতের বাজারে যে ধরণের বাইক চলত, সেই বাইক।
হন্ডা সিডি ৭০ যেন পাকিস্তানের জাতীয় বাইক। পাকিস্তানের অ্যাটলাস সংস্থার সঙ্গে হাত মিলিয়ে পাকিস্তানেই এখনও এই ৭০ সিসির বাইক তৈরি করে হন্ডা। ১৯৯১ সাল থেকে এই বাইকই তৈরি হচ্ছে ভারতের এই প্রতিবেশী দেশে। আজকের দিনে দাঁড়িয়ে এই বাইকের দাম পাকিস্তানি টাকায় ১ লক্ষ ৫০ হাজারের বেশি। ভারতীয় টাকায় যা প্রায় ৫০ হাজার টাকা।
কিন্তু গত ৩৫ বছরে ভারতের বাইক বাজারে অনেক বড় বড় পরিবর্তন এসেছে। আগে ভারতে হিরোর সঙ্গে মিলে বাইক তৈরি করত হন্ডা। অনেকটা পাকিস্তানের অ্যাটলাসের মতোই। কিন্তু হিরো ও হন্ডার ব্যবসা আলাদা হওয়ার পর ভারতীয় ব্র্যান্ড হিরো ভারতের সবচেয়ে বড় মোটরবাইক ম্যানুফ্যাকচারার। এ ছাড়াও ভারতীয় সংস্থা বাজাজ বা টিভিএসও খুব একটা পিছনে নেই। আফ্রিকা, দক্ষিণ আমেরিকায় এখন ভারতে তৈরি বাইকেরই রমরমা। আর তার প্রধান কারণ হল ভারতীয় বাইক দামে সস্তা। চলে অনেকদিন। আর এ ছাড়াও আর এক ভারতীয় সংস্থা আইখারের অধীনস্ত রয়্যাল এনফিল্ডের কথা তো এখানে না বললেই নয়। রয়্যাল এনফিল্ডের বাইক রফতানি হয় ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার বাজারে। এ ছাড়াও ইলেকট্রিক বাইকের বাজারে ভারত দ্রুত উন্নতি করছে। একাধিক ভারতীয় সংস্থা এমন ইলেকট্রিক বাইক তৈরি করছে যা গোটা বিশ্বের বাজারকে টেক্কা দিতে পারবে।
ভারতের বাইক বাজারে পরিবর্তন, কিন্তু পাকিস্তানের বাইক বাজারে এর মধ্যে কোনও পরিবর্তন হয়নি? ভারতে যেখানে হিরো তাদের সঙ্গী হন্ডার থেকে আলাদা হয়ে নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়, সেখানে পাকিস্তানি সংস্থা অ্যাটলাস এমন কিছু করে উঠতে পারেনি। আর পাকিস্তানিদের মাথাপিছু আয় খুব বেশি না হওয়ায় বাইকের দাম বাড়লে তারা সেটা তাদের সামর্থ্যের বাইরে চলে যাবে। ফলে, এখনও সেই কম দামের বাইকই ভরসা আম পাকিস্তানি নাগরিকের।
তবে, পাকিস্তানে কি কোনও দাবি বাইক নেই? পাকিস্তানে কিছু ভিডিয়োয় দামি বাইকের র্যালি হয় বা সুপার বাইকের ছবিও দেখা গিয়েছে। তবে, সেই বাইক যাঁরা চড়ছেন, তাঁরা পাকিস্তানের আম নাগরিক কখনই নন। ফলে, পাকিস্তানের সাধারণ মানুষের অবস্থা ৩৫ বছর আগে যে তিমিরে ছিল, এখনও সেই তিমিরেই রয়েছে।