
দারিদ্র্য কি শুধু অভাব? নাকি আরও গভীর কোনও রোগ? সম্প্রতি আন্তর্জাতিক গবেষকদের একটি রিপোর্ট এমন এক মারাত্মক সত্য সামনে নিয়ে এসেছে। রিপোর্ট বলছে, অর্থনৈতিক অনটন কেবল পেটে নয়, আঘাত হানে মস্তিষ্কেও। যখন একজন মানুষ চূড়ান্ত অভাবে থাকেন, তখন তাঁর সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা কমে যায়। আর এটা শুধু একটা পরিসংখ্যান নয়।
২০১৩ সালের একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে, অর্থ নিয়ে চিন্তা করার ভারেই গরিব মানুষের কগনিটিভ পারফরম্যান্স বা জ্ঞানের ক্ষমতা কমে যায়। আবার দেশের ধনী বা মধ্যবিত্তদের ক্ষেত্রে এমনটা হয় না। যেন দেশের গরিব মানুষদের মন সব সময় একটা বাড়তি বোঝা টেনে চলেছে: এই মাসে ভাড়া দেব কীভাবে? সন্তানের খাবার জুটবে তো?
কৃষকদের ওপর করা একটি পরীক্ষা এই সম্পর্ককে আরও স্পষ্ট করেছে। চাষের ঠিক আগে যখন কৃষকের হাতে টাকা কম, তখন তাঁদের বুদ্ধি বা যুক্তির পরীক্ষা তুলনামূলকভাবে খারাপ ফলাফল প্রকাশ করে। কিন্তু ফসল ওঠার পর, যখন হাতে বেশ কিছুটা টাকা থাকে তাঁদের হাতে, তখনই তাঁদের ফ্লুইড ইন্টেলিজেন্স বা তাৎক্ষণিক যুক্তির বা সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা বেড়ে যায়। অর্থাৎ, অভাবের সময় বুদ্ধি যেন কাজ করতে চায় না।
স্নো-বল এফেক্ট: বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একটা খারাপ সিদ্ধান্ত থেকে আসে আরও একটা খারাপ সিদ্ধান্ত। যেমন, বিল মেটাতে চড়া সুদের আর একটা লোন নেওয়া। এই ঋণ পরের মাসে আরও বড় ঋণের বোঝা চাপায়। আর এর ফলে, দারিদ্রা আরও জাঁকিয়ে বসে।
মনোযোগের ঘাটতি: ক্রমাগত আর্থিক দুশ্চিন্তা মনকে এমনভাবে গ্রাস করে যে জীবনের অন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে, যেমন: স্বাস্থ্য, শিক্ষা বা দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগে ফোকাস করা কঠিন হয়ে পড়ে।
ভারতের প্রান্তিক মানুষ, যারা দৈনিক আয়ের ওপর নির্ভরশীল—রিকশা চালক থেকে শুরু করে ছোট ব্যবসায়ী—তাঁরা এই ধরনের ফাঁদের প্রধান শিকার। স্থানীয় অর্থনীতিবিদদের মতে, এই মানসিক চাপ তাঁদের ভুল জায়গায় অর্থ বিনিয়োগ, ভুল সময়ে বাড়ি বা জমি বিক্রি কিংবা ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে ভুল সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করে।
দেশের সরকারকে আসলে এই বিষয়ে নজর দিতে হবে। শুধু আর্থিক সাহায্য নয়, এমন নীতি তৈরি করতে হবে যা গরিব মানুষের ওপর থেকে দুশ্চিন্তার চাপ কমায়। ব্যক্তিগতভাবেও আমাদের উচিত, চূড়ান্ত আর্থিক সঙ্কটের সময় গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো এড়িয়ে যাওয়া। যতক্ষণ না আর্থিক চাপ কিছুটা কমে, ততক্ষণ অপেক্ষা করাই বুদ্ধিমানের কাজ।