
কোনও দেশের রাজা বা রাজকুমার যদি আপনাকে আমন্ত্রণ জানান, আপনি কোনও কারণে কি সেই আমন্ত্রণ বাতিল করতে পারবেন? বরং আপনি যে কোনও মূল্যে সেই আমন্ত্রণ রক্ষা করতে চাইবেন। তাই না? আর যদি রাজকুমার হন ইংল্যান্ডের আর আপনাকে কোনও সম্মান প্রদান করার কথা থাকে, তাহলে তো আর কথাই নেই। কিন্তু আপনি কি জানেন এমনই এক আমন্ত্রণ বাতিল করে দিয়েছিলেন রতন টাটা। আর কারণটা শুনলে অবাক হবেন আপনিও।
২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাস, লন্ডনের বাকিংহাম প্যালেসে আমন্ত্রিত ছিলেন রতন টাটা। অবশ্য শুধু আমন্ত্রিত ছিলেন বললে বড়ই কম বলা হবে। আসলে ব্রিটিশ এশিয়ান ট্রাস্ট আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে রতন টাটাকে লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড দিয়ে সম্মানিত করার কথা ছিল ইংল্যান্ডের বর্তমান রাজা বা তৎকালীন রাজকুমার চার্লসের। কিন্তু শেষ মুহূর্তে সেই সফর বাতিল করেন রতন টাটা।
কিন্তু কেন এই সফর বাতিল করেছিলেন টাটা? কোনও ব্যবসায়ীক সঙ্কট নাকি অন্য কিছু? আসলে তাঁর প্রিয় পোষ্য কুকুর ট্যাঙ্গো-টিটোর মধ্যে একজন গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। আর সেই মুহূর্তে রাজকীয় সম্মানের চেয়ে অসুস্থ পোষ্যের পাশে থাকাই নিজের কর্তব্য বলে মনে করেছিলেন তিনি। আর তাঁর এই সিদ্ধান্ত বা না যাওয়ার বার্তা যখন প্রিন্স চার্লসের কাছে পৌঁছায় তখন তিনি কিন্তু একটুও অবাক বা বিরক্ত হননি। সূত্রের খবর, তিনি নাকি বলেন, এই কারণেই রতন টাটা অন্যদের থেকে আলাদা।
পশুদের প্রতি রতন টাটার এই ভালবাসা কেবল তাঁর ব্যক্তিগত জীবনেই কিন্তু সীমাবদ্ধ ছিল না। স্বামী বিবেকানন্দের ‘জীবে প্রেম করে যেই জন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বর’-এর যথার্থ বাস্তবায়ন দেখা যায় তাঁর কাজেই। তিনি মুম্বইতে একটি অত্যাধুনিক পশু হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেন। এই পশু হাসপাতালে আজ হাজার হাজার অবলা প্রাণীর চিকিৎসা হয়। রতন টাটার মৃত্যুর পর তাঁর পোষ্য টিটোর দেখাশোনার জন্য ১২ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করেছিলেন তিনি। আর টিটো এখন রতন টাটার দীর্ঘদিনের রাঁধুনি রাজেন শ-এর তত্ত্বাবধানে রয়েছে। শুধু রতন টাটা নন তাঁর পূর্বসূরীরাও এমন অনেক মানবিকতার নজির তৈরি করেছেন। টাটাদের ক্যান্সার হাসপাতাল বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আজও দেশের মধ্যে অগ্রগণ্য। আর সেই ধারাকেই এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন রতন টাটাও। আর সেই সব ঘটনা রতন টাটার চরিত্রকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছে। আর সব ছেড়ে পোষ্যের পাশে থাকা প্রমাণ করে মানবিকতাই তাঁর কাছে সবচেয়ে বড় পুরস্কার।