
বিশ্বজুড়ে অস্থিরতা, অর্থনৈতিক মন্দা আসার সম্ভাবনার কথাও একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। আর এর মধ্যেই নিজেদের গোল্ড রিজার্ভের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মরিয়া কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কগুলো। ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের তৃতীয় ত্রৈমাসিকে তাই সোনার মজুত এক লাফে অনেকটা বাড়িয়েছে তারা। ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের রিপোর্ট অনুযায়ী, এই ত্রৈমাসিকে ২২০ টন সোনা কেনা হয়েছে, যা আগের ত্রৈমাসিকের তুলনায় ২৮ শতাংশ বেশি। বিশ্বজুড়ে সোনার দাম যখন রেকর্ড উচ্চতায়, ঠিক তখনই কেন এই পদক্ষেপ? কী বলছেন বাজার বিশেষজ্ঞরা?
আসলে এই ঝাঁপিয়ে পড়ে সোনা কেনার মূল কারণ; সোনাকে একটি নিরাপদ সম্পদ হিসেবে দেখা। বিশেষ করে বিভিন্ন কারণে যখন গোটা বিশ্বে ভূ-রাজনৈতিক সংঘাতের ঝুঁকি বাড়ছে।
ভারতের রিজার্ভ ব্যাঙ্ক কিন্তু এই অস্থিরতার মধ্যে চুপ করে বসে নেই। চলতি বছরের এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া প্রায় ৬০০ কিলোগ্রাম সোনা তাদের ভাণ্ডারে যোগ করেছে। সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত ভারতের মোট সোনার রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৮৮০ টনে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি কেবলমাত্র আর্থিক সুরক্ষা নয়, আন্তর্জাতিক বাজারে ডলারের উপর নির্ভরতা কমানোর একটি কৌশলগত পদক্ষেপও বটে।
চলতি অর্থবর্ষের তৃতীয় ত্রৈমাসিকের রিপোর্ট অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশি সোনা কিনেছে ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক অফ কাজাখস্তান। পরিমাণ প্রায় ১৮ টন। আর ১৫ টন সোনা কিনে ঠিক তার পরই রয়েছে সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক অফ ব্রাজিল। এই ব্রাজিলীয় ব্যাঙ্ক কিন্তু ২০২১ সালের পর প্রথম সোনা কিনল। তবে আসল চমক অন্য জায়গায়। ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিল জানাচ্ছে, তৃতীয় ত্রৈমাসিকে মোট সোনার চাহিদার ৬৬ শতাংশ ক্রেতার নাম অপ্রকাশিত। অর্থাৎ, কোন দেশ বা প্রতিষ্ঠান এত বিপুল পরিমাণ সোনা কিনছে, তা একেবারেই জানা যায়নি।
এই সময়ে ডিজিটাল গোল্ড ইনভেস্টমেন্ট, বিশেষত ইটিএফে বিনিয়োগ আকাশ ছুঁয়েছে। এই সেক্টরে যেখানে ১৩৪ শতাংশ বৃদ্ধি দেখা গিয়েছে। অস্থির বাজারে বিনিয়োগকারীরা এখন সোনার দিকেই ভরসা রাখছেন। অন্যদিকে, সোনার এই ঊর্ধ্বগতি বিশ্ব অর্থনীতিতে এক নতুন ইঙ্গিত দিচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কগুলি হয়তো বড় কোনও ঝুঁকির জন্য তৈরি হচ্ছে, যেখানে সোনা হয়ে উঠবে শেষ ভরসা।