
ডিসেম্বরের শুরুতেই এবার বিরাট ঘোষণা করল ভারতের রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। ৫ ডিসেম্বর, শুক্রবার সকালে ২৫ বেসিস পয়েন্ট রেপো রেট কমিয়ে দিল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া। বর্তমানে রেপো রেট গিয়ে দাঁড়াল ৫.২৫ শতাংশে। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের মানিটারি পলিসি কমিটির তিন দিনের বৈঠকের পর এই রেট কাটের ঘোষণা করলেন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর সঞ্জয় মালহোত্রা। এর ফলে একটা বিরাট স্বস্তি পেল দেশের মধ্যবিত্তরা।
রেপো রেট কাটের ফলে বেশ খানিকটা কমবে হোন লোন সহ একাধিক ঋণের মাসিক কিস্তি। কেউ মাসিক কিস্তি কমাতে না চাইলে কমবে তাঁর লোনের সময়কাল। তবে, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের এই পদক্ষেপে কিছুটা হলেও চিন্তা বাড়ল বিভিন্ন ব্যাঙ্কে টাকা জমা রেখেছেন যাঁরা, তাঁদের।
রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর সঞ্জয় মালহোত্রা জানিয়েছেন, বর্তমানে দেশের অর্থনীতির অবস্থাকে ব্যাখ্যা করা যায় একটাই শব্দে, ‘গোল্ডিলক্স পিরিয়ড’। অর্থাৎ, একটি আদর্শ অর্থনৈতিক অবস্থা। যেখানে দেশের অর্থনীতি স্থিতিশীল, বৃদ্ধি ভাল, বেকারত্ব কম ও মুদ্রাস্ফীতি কম বা মাঝারি থাকে।
চলতি অর্থবর্ষে মুদ্রাস্ফীতি রেকর্ড লো হিট করেছে। অক্টোবরে মুদ্রাস্ফীতি ছিল মাত্র ০.২৫ শতাংশ। এ ছাড়াও প্রথম ৬ মাসে দারুণ জিডিপি বৃদ্ধি দেখেছে দেশ। এমনকি চলতি অর্থবর্ষের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে জিডিপি বেড়েছে ৮.২ শতাংশ। যা রিজার্ভ ব্যাঙ্কের পূর্বাভাসকেও ছাপিয়ে গিয়েছে। আর এই পরিস্থিতিতে বৃদ্ধিকে আরও স্থিতিশীল ও চাঙ্গা করতে সুদের হার কমানো জরুরি ছিল। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এই সিদ্ধান্ত বাজারকে আরও গতি দেবে।
রেপো রেট কমায় ব্যাঙ্কগুলো তাদের ঋণের সুদের হার কমাতে বাধ্য হবে। এক বিশেষজ্ঞের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, রেপো রেট কমার ফলে ফ্লোটিং রেট হোম লোনে প্রতি এক লক্ষ টাকায় আপনার ইএমআই কমতে পারে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত। এর ফলে, যাঁরা দীর্ঘমেয়াদের লোন নিয়েছেন, তাঁরা অনেকটা স্বস্তি পাবেন। ফলে, গ্রাহকদের হাতে আসবে বাড়তি টাকা। আর বাজারে বাড়বে নগদের জোগান। তৈরি হবে চাহিদা।
সাধারণত ঋণ সস্তা হলে কমে আমানতের সুদও। কারণ, দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক দেশের মধ্যে নগদের জোগান বাড়ানোর জন্যই সাধারণত ঋণের সুদ কমায়। আর নগদের জোগান বাড়াতে ব্যাঙ্ক তখন আমানতকারীদের টাকা জমানোতেও অনুৎসাহী করে, আর সেই কারণেই ফিক্সড ডিপোজিট থেকে রেকারিং ডিপোজিটের সুদ কমে যায়। আর এই সিদ্ধান্তে সমস্যায় পড়তে পারেন দেশের প্রবীণ নাগরিকরা। যাঁরা সুদের উপর নির্ভর করে জীবনধারণ করেন। তবে, বিশেষজ্ঞরা বলছেন এই পদক্ষেপ দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক স্বাস্থ্যের জন্য বেশ ভাল।
শুধু রেপো রেট কমানোই নয়, বাজার এবং ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থায় নগদ অর্থের জোগান বা লিক্যুইডিটি বজায় রাখতে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া ১ লক্ষ কোটি টাকার ওপেন মার্কেট অপারেশন ঘোষণা করেছে। এর পাশাপাশি, ৫০০ কোটি ডলারের ফরেন সোয়াপও করা হবে। এই পদক্ষেপগুলি বোঝায় যে কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক অর্থনৈতিক বৃদ্ধির পথে কোনও বাধা চায় না। আর সেই কারণেই ফেব্রুয়ারির বৈঠকে আবারও ২৫ বেসিস পয়েন্ট সুদের হার কমার সম্ভাবনা দেখছেন বাজার বিশেষজ্ঞরা।