
আগে কোনও চেক ক্লিয়ার হতে দিন দুয়েক মতো সময় লাগাত। কিন্তু ২০২৫ সালের ৪ অক্টোবর রিজার্ভ ব্যাঙ্ক একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ করে। সেই প্রথাগত দু’দিনের চেক ক্লিয়ারেন্স পদ্ধতি বাতিল করে চালু হয় ‘একই দিনে চেক ক্লিয়ারিং’ পদ্ধতি। নতুন এই পদ্ধতি চলু করার লক্ষ্য ছিল, আজ সকালে জমা হওয়া চেকের টাকা যাতে আগামিকালের আগেই অ্যাকাউন্টে ঢুকে যায়। কিন্তু পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছে গিয়েছে, যাতে শোনা যাচ্ছে একের পর এক অসন্তোষের গল্প।
নতুন নিয়মে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে চেক পাস হওয়ার কথা ছিল। সেই জায়গায় লেগে যাচ্ছে এক সপ্তাহ। কিছু কিছু ক্ষেত্রে পেরিয়ে যাচ্ছে ১০-১৫ দিনও। কিন্তু এই সমস্যা কেন হচ্ছে?
এই সমস্যার আসলে একটি সমস্যা হয়। দুটি ক্ষেত্রের সমস্যা একসঙ্গে জোট বেঁধে তৈরি হয়েছে এই সমসাটি। প্রথম সমস্যাটি প্রযুক্তিগত। ব্যাঙ্কগুলির সফটওয়্যার কেন্দ্রীয় ক্লিয়ারিং সিস্টেমের সঙ্গে ঠিকমতো জুড়তে পারেনি। আর সেই কারণেই রিয়েল-টাইম ডেটা আদান-প্রদানে তৈরি হচ্ছে বিপুল দেরি।
আর দ্বিতীয় সমস্যা পরিচালনগত। ব্যাঙ্ক কর্মীদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ হয়নি। ফলে, হঠাৎ চালু হয়ে যাওয়া নতুন প্রক্রিয়ায় মানিয়ে নিতে হিমশিম খাচ্ছেন তাঁরা। কর্মীদের কাজের চাপ বেড়েছে, অনেককে অতিরিক্ত সময় দিতে হচ্ছে। ছোটখাটো ভুলের কারণেও চেক প্রক্রিয়াকরণ থমকে যাচ্ছে।
এই ধাক্কা সবথেকে বেশি লেগেছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের উপর। উৎসবের মরশুমে বাজারে অর্থের জোগান অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু চেক সময়মতো ক্লিয়ার না হওয়ায় ব্যবসার প্রয়োজনীয় নগদ অর্থে টান পড়ছে।
অনেক শহরে ব্যবসায়ীরা বলছেন, সাত দিনের বেশি সময় লাগছে। ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে অনেক ব্যবসায়ীই চেকের উপর নির্ভর করেন। তাঁদের ব্যবসায় ক্রমাগত ক্ষতি হচ্ছে। ন্যাশনাল পেমেন্টস কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়া বা NPCI এই সমস্যা মেটাতে উদ্যোগী হয়েছে, কিন্তু ত্রুটি এখনও সম্পূর্ণ দূর হয়নি।
বর্তমানে নতুন নিয়মে সন্ধ্যে সাতটার মধ্যে ক্লিয়ারেন্স করার কথা বলা হলেও, জানুয়ারি ২০২৬ থেকে মাত্র তিন ঘণ্টার মধ্যে চেক প্রক্রিয়াকরণের লক্ষ্য রয়েছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, প্রযুক্তিগত পরিকাঠামোয় দ্রুত উন্নতি না করলে এই স্বপ্ন অধরাই থেকে যাবে। ব্যাঙ্কগুলিকে খুব তাড়াতাড়ি এই দিকে নজর দিতে হবে। না হলে, যা প্রযুক্তির কাজ ছিল গোটা সিস্টেমকে দ্রুততর করে তোলা, সেই প্রযুক্তিই অর্থনীতির গতি কমিয়ে দেবে।