
চলতি বছরে ১২০ বেসিক পয়েন্ট রেপো রেট কমিয়েছে ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। সুদের হার দাঁড়িয়েছে ৫.২৫ শতাংশ। আর তার ফলে অনেকেই আশা করেছিলেন অনেকটা কমবে তাঁর লোনের ইএমআই। কিন্তু বাস্তবটা দেখলে দেখা যাচ্ছে অনেক ক্ষেত্রেই এই সুবিধা পাননি গ্রাহকরা। অনেকেরই ইএমআই একটুও কমেনি। আসলে হচ্ছেটা কী?
এই ক্ষেত্রে দেখলে দেখা যাবে, গ্রাহকদের সঙ্গে দুটো ব্যাপার ঘটছে। প্রথমত, অনেক ব্যাঙ্ক গ্রাহককে পুরো বিষয়টা জানিয়ে মেল করছে। গ্রাহক সেই মেলে দেওয়া সময় অনুযায়ী ব্যাঙ্কে না পৌঁছালে ব্যাঙ্ক গ্রাহকের ইএমআই না কমিয়ে লোনের সময়কাল কমিয়ে দিচ্ছে। ফলে, গ্রাহকের মনে হচ্ছে সুদের হার কমে যাওয়ার কোনও সুবিধা পাচ্ছেন না গ্রাহক।
এ ছাড়াও আরও একটা বিষয় ঘটছে। ব্যাঙ্কিং মহলে এটিকে ‘মার্জিন ট্র্যাপ’ বলা হচ্ছে। আর এই বিষয়টা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন নন ব্যাঙ্কিং ফাইন্যান্স কোম্পানি বা এনবিএফসি থেকে নেওয়া হোম লোনের ক্ষেত্রে কমছে না সুদের হার। এমনকি কমছে না লোনের সময়কালও।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্যাঙ্ক ও নন ব্যাঙ্কিং ফাইন্যান্স কোম্পানিগুলো এই ক্ষেত্রে তাদের ‘লোন মার্জিন’ বাড়িয়ে দিয়েছে। লোন মার্জিন হল বেঞ্চমার্ক রেটের (এই ক্ষেত্রে রেপো রেট) উপরে ধার্য করা অতিরিক্ত সুদ, যা তাদের লাভের অংশ।
বিশেষজ্ঞ বিপুল প্যাটেল বলছেন, ‘রেপো রেট কমার সম্পূর্ণ সুবিধা গ্রাহক পাচ্ছেন না। ব্যাঙ্কগুলো মার্জিন বাড়িয়ে নিচ্ছে ও সুদের হার মাত্র ০.০৫ শতাংশ থেকে ০.১৫ শতাংশ কমাচ্ছে। কারণ হিসাবে তারা দায়ী করছে গ্রাহকের ‘ক্রেডিট স্কোর’ ও ‘ঝুঁকির মূল্যায়ন’কে। অর্থাৎ, কাগজপত্রে সুদ কমলেও লাভের অঙ্ক ধরে রাখতে কৌশলী হচ্ছে ঋণদাতা সংস্থা।
এই বিশেষজ্ঞের স্পষ্ট পরামর্শ, আপনি যদি ফ্লোটিং রেটে লোন নিয়ে থাকেন, তবে ইএমআইয়ের টাকার অঙ্ক না কমিয়ে লোনের সময়কাল কমানোর জন্য চাপ দিন।
লোনের ইএমআই কমাবেন না: লোনের সময়কাল বা মেয়াদ কমলে আপনার মোট সুদের পরিমাণ অনেক কমবে। ৭৫ লাখ টাকার ২৫ বছরের লোনে এই সুদের হার বদলের ফলে লোনের সময়কাল কমে যেতে পারে ৭০ মাস পর্যন্ত। আর তার ফলে বেঁচে যেতে পারে ৪২ লক্ষ টাকা সুদ।
৩০ দিনের সময়সীমা: আপনার ঋণদাতাকে লিখিতভাবে আবেদন জানান। যদি ৩০ দিনের মধ্যে উত্তর না আসে, তবে গ্রিভান্স রিড্রেসাল অফিসার বা রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ব্যাঙ্কিং ওমবুডসম্যানের কাছে অভিযোগ জানান। এ ছাড়াও অন্য ব্যাঙ্কের অফার দেখিয়ে পুরনো ব্যাঙ্ককে চাপ দিলে ১০০ শতাংশ ক্ষেত্রেই সুদ কমানোর নজির রয়েছে। মনে রাখবেন, কম ইএমআইয়ের ফাঁদে আপনি যদি পা না দেন, উল্টে লোন্র মেয়াদ কমালে আসল সুবিধা পাবেন আপনিই।