
দীর্ঘ তিরিশ বছরের সঞ্চয়, অথচ অবসর জীবনে সেই টাকা প্রয়োজনের তুলনায় সামান্যই! বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফিক্সড ডিপোজিট বা প্রভিডেন্ট ফান্ডে চোখ বন্ধ করে টাকা রাখার কারণেই আমাদের দেশের অনেক মানুষ এমন নির্মন পরিণতির মুখোমুখি হচ্ছেন। আবার অনেকি ভেবেছেন শেয়ার বাজার সম্পর্কে কিছুই জানেন না। ধীরে ধীরে শিখে তারপর বিনিয়োগ করছেন। আর এই ভাবতে ভাবতেই সময় যে কোথা দিয়ে কেটে গিয়েছে তা বুঝতে পারেননি অনেকেই।
তিরিশ বছর ধরে বার্ষিক ১ লক্ষ টাকা ফিক্সড ডিপোজিটে বিনিয়োগ করলে মোট সঞ্চয়ের অঙ্কটা গিয়ে দাঁড়ায় ৭৫ লক্ষ টাকায়। অথচ, যদি সঠিক ভাবে এই অর্থ একাধিক মাধ্যমে বিনিয়োগ করা হত, তাহলে এই সঞ্চয়টা দাঁড়াতে পারত প্রায় ৩ কোটি টাকায়।
অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞ ও ফার্স্ট গ্লোবালের প্রতিষ্ঠাতা দেবীনা মেহরা বলছেন, বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সফল হওয়ার চাবিকাঠি হল শৃঙ্খলা। তার পর আসে আরও কয়েকটি নিয়ম। বাজার জটিল নয়, আবার অতি সরলও নয়। তাঁর মতে শৃঙ্খলা ছাড়াও যে নিয়মগুলো রয়েছে সেগুলো মানলে অবসরের সময় একটা বড় তহবিল তৈরি হতে পারে।
বেতন থেকে মাত্র ৫ শতাংশ সঞ্চয়ও বড় কাজ দেয়। ২৫ বছর বয়স থেকে প্রতি মাসে ১০,০০০ টাকা জমালে ৬০ বছর বয়সে ৫ কোটি টাকার তহবিল তৈরি করা সম্ভব। আর সেই শুরুটা ৩৫ বছর বয়সে করা হলে, লক্ষ্য পূরণের জন্য আপনাকে তিনগুণ বেশি সঞ্চয় করতে হবে। অর্থাৎ, মাসিক ৩০ হাজার টাকা জমাতে হবে ওই একই তহবিল তৈরি করতে।
কোন স্টকে বিনিয়োগ করব, শুধু সেটা বেছে নেওয়া নয়, ইক্যুইটি, ফিক্সড ইনকাম ও সোনা সহ বিভিন্ন মাধ্যমে কীভাবে টাকা ভাগ করা হচ্ছে, সেটাই ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ ফলাফল নির্ধারণ করে।
ভারতীয় টাকা ও আমেরিকান ডলারের বিনিময়ে পতনের ইতিহাস আছে। অর্থাৎ, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দাম বেড়েছে ডলারের। আবার অন্যদিকে বিশ্ব বাজারের মাত্র ৫ শতাংশ রয়েছে ভারতের কাছে। ফলে, শুধুমাত্র দেশীয় বাজারে বিনিয়োগ যথেষ্ট নিরাপদ বা লাভজনক নয়।
আপনার প্রধান কাজ যেহেতু অন্য, তাই ফান্ড ম্যানেজারদের উপরই ভরসা করুন। কারণ তাঁরা এই কাজটা করতেই সিদ্ধহস্ত। তবে, আপনি কতটা শিখছেন, সেটা নিজে বোঝার জন্য নিজের মতো করে ১০ থেকে ২০ শতাংশ টাকা বিনিয়োগ করুন।
সেরা রিটার্নের পিছনে দৌড়ানো একেবারেই উচিত নয়। ধারাবাহিক এবং যুক্তিসঙ্গত বৃদ্ধিই চক্রবৃদ্ধি হারে সবচেয়ে বেশি কাজ করে। ফলে, কপিবুক স্টাইল ছেড়ে ফাটকা বিনিয়োগ একেবারে ভাল কথা নয়।
আর বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ঝুঁকি কি জানেন? সবএয়ে বড় ঝুঁকি হল বিনিয়োগ না করা বা খুব দেরিতে শুরু করা। ফলে আগামীতে এই কয়েকটি মন্ত্র যদি আপনি মেনে চলেন তাহলে আপনার পোর্টফোলিও দারুণ হবে। আপনার অবসরকালীন তহবিলও বেশ ফুলে, ফেঁপে উঠবে।