
ভারতের বন্ধু রাষ্ট্র রাশিয়া নাকি পাকিস্তানকে যুদ্ধবিমানের ইঞ্জিন বিক্রি করছে, খবর এমনই। জানা গিয়েছে পাকিস্তানের জেএফ ১৭ যুদ্ধবিমানের জন্য রাশিয়া নাকি তাদের আরডি ৯৩ ইঞ্জিন বিক্রি করছে। আর এই খবর নিয়ে ভারতে বেড়েছে রাজনৈতিক উত্তেজনা। কিন্তু রুশ প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা আবার অন্য কথা বলছেন। তাঁরা বলছেন, এতে নাকি আসলে ভারতেরই সুবিধা।
রুশ সমর বিশেষজ্ঞ পয়ত্র টপিকানভ জানিয়েছেন, যদি রিপোর্ট সত্যি হয়, তবে দুটি কারণে ভারতের সুবিধা। প্রথমত, এই রিপোর্ট প্রমাণ করছে চিন বা পাকিস্তান এখনও এই রুশ ইঞ্জিনের বিকল্প তৈরি করতে পারেনি। দ্বিতীয়ত, যেহেতু ইঞ্জিনটি রাশিয়ায় তৈরি আর ভারত মে ২০২৫-এর অপারেশন সিঁদুরের সময় জেএফ ১৭-এর ব্যবহার দেখেছে, তাই এই বিমান ভারতীয় সেনার কাছে বেশ পরিচিত।
এই ইঞ্জিন চুক্তির সমালোচনাকে ‘অযৌক্তিক’ আখ্যা দিয়েছেন টপিকানভ। উল্লেখ্য, যে ইঞ্জিন নিয়ে এত কথা সেই আরডি ৯৩ ইঞ্জিন হল ভারতের মিগ ২৯ যুদ্ধবিমানে ব্যবহৃত আরডি ৩৩ ইঞ্জিনের একটি ভ্যারিয়েন্ট। তবে আরডি ৯৩ ইঞ্জিনের লাইফ-স্প্যান অনেক কম। মাত্র ২ হাজার ২০০ ঘণ্টা চলে এই ইঞ্জিন। যেখানে ভারতের আরডি ৩৩ ইঞ্জিন চলে ৪ হাজার ঘণ্টা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অন্য এক রুশ বিশেষজ্ঞের দাবি, মস্কো ভারতকে নিশ্চিত করেছে যে আরডি ৯৩ ইঞ্জিনের চুক্তি একটি বাণিজ্যিক চুক্তি। কোনও ধরনের প্রযুক্তি হস্তান্তর এই চুক্তির অধীনে হবে না। যদিও উন্নত আরডি ৩৩ ইঞ্জিনের লাইসেন্স অনেক আগেই পেয়েছে ভারত। বর্তমানে ওই ইঞ্জিন ভারতেই তৈরি হয়।
এ ছাড়াও, আরও একটা কথা বলা যায় এই ক্ষেত্রে। পাকিস্তানের যুদ্ধবিমান জেএফ ১৭, চিনের চেংদু এয়ারক্র্যফট কর্পোরেশন ও পাকিস্তান অ্যারোনটিক্যাল কমপ্লেক্স একসঙ্গে বানিয়েছে বলে জানা যায়। আর, চিন বহুদিন ধরেই জেট ইঞ্জিনের জন্য নির্ভর করে এসেছে রাশিয়ার উপর। ফলে, জেএফ ১৭ যুদ্ধবিমানে সম্ভবত প্রথম থেকেই রাশিয়া থেকে সোর্স করা ইঞ্জিন লাগানো হয়েছিল।
অতএব, আপাতদৃষ্টিতে পাকিস্তানকে রাশিয়ান ইঞ্জিন সরবরাহের ব্যাপারটা ক্ষতিকারক মনে হতেই পারে। কিন্তু, রাশিয়া যদি পাকিস্তানকে আরডি ৯৩ ইঞ্জিন দেয়ও তার মধ্যে অবশ্যই রয়েছে কৌশলগত একটা ব্যাপার। এ ছাড়াও ভারতের কাছে যে প্রযুক্তি রয়েছে তার সঙ্গে বিরাট পার্থক্যও লক্ষ্য করা যায় এই পাকিস্তানের জন্য পাঠানো ইঞ্জিনে।
এই খবরে ভারতে শুরু হয়েছে তীব্র রাজনৈতিক বিতর্ক। কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ প্রশ্ন তুলেছেন, ভারতের ‘সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য কৌশলগত মিত্র’ কেন পাকিস্তানের সঙ্গে সামরিক সহযোগিতা করছে? অন্যদিকে, বিজেপি এই অভিযোগকে ‘রেকলেস ইনফরমেশন ওয়ারফেয়ার’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে। তারা জোর দিয়ে জানিয়েছে যে ভারত-রুশ প্রতিরক্ষা সম্পর্ক S-400 এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম এবং নিউক্লিয়ার সাবমেরিন সহযোগিতার মতো দীর্ঘমেয়াদী সামরিক চুক্তির ভিত্তিতে এখনও অটুট।