
দেশের তরুণ প্রজন্ম ইদানিং এক নতুন অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে। কিছুই না সাধারণ দোকানে গিয়ে এটা ওটা কিনতে ইউপিআই, আর তাতেই হু হু করে খরচ হয়ে যাচ্ছে অনেক টাকা। চায়ের দোকান থেকে রেস্তোরাঁর বিল, সর্বত্র ইউপিআই মানুষকে বিরাট সুবিধা দিলেও এই ইউপিআই কিন্তু বাড়িয়ে দিচ্ছে মানুষের খরচের চাপ। অর্থনীতিবিদরা একে বলছেন ‘ডোপামিন স্পেন্ডিং লুপ’।
সহজ অনলাইন পেমেন্টের কারণে খরচ করতে যে মানসিক কষ্ট হওয়ার কথা, তা আর হচ্ছে না। আর এটাই সমস্যার মূল কারণ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফিজিক্যাল ক্যাশ খরচ করার সময় যে ‘ফ্রিকশন’ তৈরি হয়—নোট গোনা, মানিব্যাগ পাতলা হওয়া—তা মানুষকে ভাবনা-চিন্তা করতে বাধ্য করে। কিন্তু UPI-এর ক্ষেত্রে এই মুহূর্তের অভাবের সুযোগেই হয়ে যাচ্ছে এই ধরনের খরচ।
SEBI রেজিস্টার্ড উপদেষ্টারা বলছেন, ‘সহজ ব্যবহার ও তাৎক্ষণিক পেমেন্ট করার ক্ষমতা হাতে আসায় খরচ করার যে মানসিক যন্ত্রণা, তা কমে যায়। ফলে পরিকল্পনা ছাড়া কেনাকাটার প্রবণতা বাড়ে’। এই ডোপামিন লুপ এমনই যেখানে ১৯৯ টাকার OTT সাবস্ক্রিপশন বা ২৭৯ টাকার কফি এমন কিছু বাড়তি চাপ সৃষ্টি করে না। কিন্তু এই ছোট ছোট খরচগুলো একসঙ্গে মাসের বেতনের একটি বড় অংশ শেষ করে ফেলে।
কলকাতার মতো বড় শহরে হঠাৎ পুরোপুরি ক্যাশ-নির্ভর হওয়া কঠিন। দোকানে গেলেই শুনতে হয়, ‘চেঞ্জ নেই, ইউপিআই করে দিন।’ আর সেই কারণেই ইউপিআই মানুষের একটা বিরাট ভরসার জায়গা। এমন হলে কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করবেন খরচ?
৫০০ টাকার বেশি দামের কিছু কেনার আগে অন্তত ২৪ ঘণ্টা অপেক্ষা করুন। আরও বেশি সময়ও অপেক্ষা করতে পারেন আপনি। আসলে, আপনার বেশিরভাগ ‘চাই’-ই এই সময়ের মধ্যে মরে যাবে।
সেভ করা কার্ড, ওয়ান-ক্লিক পেমেন্ট এবং সব অটো-পে সিস্টেম সবার আগে বন্ধ করে দিন। প্রতিবার ডেবিট কার্ড ব্যবহার করার সময় সামান্য হলেও ‘ফ্রিকশন’ তৈরি হবে।
ওয়ারেন বাফেট বলেছেন, ‘আপনার অপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে গেলে শীঘ্রই প্রয়োজনীয় জিনিস বিক্রি করতে হতে পারে’।
২ হাজার টাকার জামা কিনতে আপনাকে কত ঘণ্টা কাজ করতে হয়েছে, তা হিসেব করুন। তাহলেই দেখবেন কিছুটা হলেও খারাপ লাগবে।
ডিজিটাল সুবিধা দরকার, কিন্তু পকেট বাঁচাতে লাগাম লাগানো জরুরি। আর উপরের ওই পদ্ধতিগুলি আপনার অর্থকে দীর্ঘমেয়াদে সুরক্ষিত রাখতে পারে।