
আমেরিকা থেকে এলপিজি আমদানির জন্য ঐতিহাসিক চুক্তি করল ভারত। কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী হরদীপ সিং পুরী সোমবার এই ঘোষণা করেন। ট্রাম্পের দেশ থেকে আগামী এক বছরে প্রায় ২২ লক্ষ টন লিক্যুইফায়েড পেট্রোলিয়াম গ্যাস আমদানি করা হবে। দেশের বার্ষিক আমদানির প্রায় ১০ শতাংশ এবার আসবে আমেরিকা থেকে।
কিন্তু কেন এই চুক্তি? মনে করা হচ্ছে এর নেপথ্যে রয়েছে চরম ভূ-রাজনীতি ও ট্রাম্পের বসানো ৫০ শতাংশ শুল্কের ধাক্কা।
গত অগস্টে রাশিয়া থেকে তেল আমদানি না কমানোয় আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের রোষের মুখে পড়েছিল আমাদের দেশ। কারণ, ট্রাম্প সেই সময় ভারতীয় পণ্যের উপর একতরফা ৫০ শতাংশ শুল্ক চাপিয়ে দেন। এর ফলে দেশের বস্ত্র, রত্ন, বা সি-ফুডের মতো রপ্তানি-নির্ভর শিল্পগুলি বড়সড় সংকটের মুখে পড়ে।
আসলে, চলতি অর্থবর্ষের এপ্রিল থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত ভারতের সঙ্গে আমেরিকার বাণিজ্য ঘাটতি কমে গিয়েছে। বর্তমানে সেই ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১৪৫ কোটি ডলার। আর এই বাণিজ্য ঘাটতি নিয়ে খুবই অসন্তুষ্ট ট্রাম্প প্রশাসন।
ট্রাম্পের ৫০ শতাংশ শুল্কের বোঝা ১৫ থেকে ১৬ শতাংশে নামিয়ে নিয়ে আসতে দিল্লির হাতে প্রধান অস্ত্র ছিল শক্তি আমদানিতে ছাড় দেওয়া। মার্কিন তেল ও গ্যাস কেনা বাড়িয়ে সেই কৌশলই প্রয়োগ করল মোদী সরকার।
ভারতের এলপিজি চাহিদার ৬০ শতাংশের বেশি আসে আমদানির মাধ্যমে। আর সেই চাহিদা মেটাতে এতদিন মূল ভরসা ছিল পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলি। এখন একাধিক আমেরিকান সংস্থার সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হওয়ায় ভারতের আমদানির উৎসের বৈচিত্র্য বাড়ল।
পেট্রোলিয়াম পুরী বলেছেন, ‘দেশের মানুষকে সাশ্রয়ী মূল্যে এলপিজি সরবরাহ সুনিশ্চিত করাই আমাদের লক্ষ্য’। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আমদানির একাধিক উৎস থাকায় এখন ভারতের দর কষাকষির ক্ষমতা বাড়বে। তাই সরাসরি না কমলেও, আগামী দিনে আপনার রান্নার গ্যাসের দাম নিয়ন্ত্রণে আসার একটা আশা তৈরি হল। ভারতের এই কৌশলগত পদক্ষেপ প্রমাণ করল—আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে নিজেদের পায়ের নীচের মাটি শক্ত করতে তথাকথিত ‘বন্ধু’ দেশের সঙ্গেও পেশি শক্তির খেলা চলতেই পারে।