ওয়াশিংটন: ইলন মাস্ক ৪৪০০ কোটি মার্কিন ডলারের বিনিময়ে টুইটার অধিগ্রহণের কথা ঘোষণা করার দিন থেকে এই চুক্তি নিয়ে চর্চা চলছে। বলা যেতে পারে, শুক্রবার (৩ জুন) এই চুক্তি চূড়ান্ত হওয়ার পথে একটা বড় বাধা অতিক্রম করল। মার্কিন অর্থনৈতিক লেনদেন নিয়ন্ত্রকরা যে সময়কালে এই চুক্তির প্রস্তাব নিয়ে আপত্তি করতে পারতেন, তার মেয়াদ ফুরিয়েছে। টুইটার সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘ইলন মাস্কের টুইটার অধিগ্রহণের জন্য ৪৪০০ কোটি মার্কিন ডলারের চুক্তির ক্ষেত্রে এইচএসআর আইনের অধীনে নির্ধারিত অপেক্ষার মেয়াদ শেষ হয়েছে। এখন, চুক্তির শেষটা অবশিষ্ট প্রথাগত সমাপ্তির শর্ত সাপেক্ষে হবে। যার মধ্যে রয়েছে টুইটারের স্টকহোল্ডারদের অনুমোদন এবং নিয়ন্ত্রক অনুমোদন হাতে পাওয়ার মতো শর্ত’।
১৯৭৬ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ‘এইচএসআর আইন’ বা ‘হার্ট-স্কট-রোডিনো অ্যাক্ট’ লাগু হয়। এই আইন অনুসারে, ১০ কোটি ১০ লক্ষ (২০২২-এর জন্য) মার্কিন ডলারের বেশি অর্থের চুক্তির ভিত্তিতে দুটি সংস্থার একীভূতকরণ বা অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে, সংস্থাগুলিকে চুক্তিটি করার আগে অবশ্যই সেই দেশের ‘ফেডারেল ট্রেড কমিশন’ এবং ‘ইউএস ডিপার্টমেন্ট অফ জাস্টিস অ্যান্টিট্রাস্ট ডিভিশনের’ কাছে তাদের পরিকল্পনা জমা দিতে হয়। পরবর্তী ৩০ দিনের অপেক্ষার মেয়াদকালে নিয়ন্ত্রক সংস্থা দুটি তিনটি সিদ্ধান্ত নিতে পারে। প্রথমত, অতি দ্রুত মঞ্জুর করে জানাতে পারে লেনদেনের ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা নেই। দ্বিতীয়ত, আরও তথ্যের জন্য তারা দ্বিতীয় একটি ফাইল জমা করার অনুরোধ জানাতে পারে এবং তদন্ত শুরু করতে পারে। তৃতীয়ত, কিছুই না করে অপেক্ষার মেয়াদকাল শেষ হতে দিতে পারে। এই ক্ষেত্রে তিন নম্বর পন্থাই নেওয়া হল।
‘টুইটার’ সংস্থা বলেছে, ‘নিয়ন্ত্রকরা ধীর গতিতে চুক্তি নিয়ে তাদের আপত্তি জানানোর সুযোগ শেষ করেছে। বস্তুত, (আপত্তি জানানোর) সম্ভাবনা খুব কম ছিল। এইচএসআর এবং অন্যান্য অ্যান্টিট্রাস্ট আইন কোনও সেক্টরে ব্যবসায়ী সংস্থাগুলির মধ্যে প্রতিযোগিতা রক্ষা করার জন্যই তৈরি করা হয়েছে। কোনও একক ব্যক্তি ৪৪০০ কোটি মার্কিন ডলারের সংস্থা ক্রয় করছেন, এটা আগে কখনও ঘটেনি, এরকম নিদর্শন নেই’।
প্রতিযোগিতার নিয়ন্ত্রকরা হস্তক্ষেপ করতে অস্বীকার করলেও, এই চুক্তি পাকা হওয়ার পথটা একেবারে খানাখন্দে ভরা। প্রধান বাধা খোদ ইলন মাস্ক। ‘টুইটার’ শেয়ারহোল্ডাররা তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা করেছেন। মাস্কের বর্তমানে ‘টুইটারে’ থাকা শেয়ার নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। তিনি কীভাবে সেই শেয়ার অর্জন করেছিলেন, প্রশ্ন করেছে মার্কিন ‘সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন’।
পাশাপাশি, অতি সম্প্রতি তিনি ‘টুইটার’ অধিগ্রহণের জন্য তাঁর প্রস্তাবিত চুক্তির মূল্য কমানোর, এমনকি চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ারও উপায় খুঁজছেন বলে দাবি করেছেন একাংশের শিল্প বিশ্লেষক। গত মাসে টুইটারের ভুয়ো অ্যাকাউন্ট সম্পর্কে আরও তথ্য দাবি করে, চুক্তিটি ‘সাময়িকভাবে স্থগিত’ বলে জানিয়েছিলেন মাস্ক। টুইটারের দাবি, তাদের প্ল্যাটফর্মে স্প্যাম বা ভুয়ো অ্যাকাউন্টের সংখ্য়া মোট অ্যাকাউন্টের ৫ শতাংশেরও কম। এদিকে মাস্কের অভিযোগ, এই পরিসংখ্যানকে সমর্থন করে এমন যথেষ্ট তথ্য নেই।