
পারস্পরিক আচরণের একটা সহজ নীতি আছে – চোখের বদলে চোখ। তাই, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পারস্পরিক শুল্ক আরোপের কথা বললে, ভ্রু কুঁচকে ওঠে গোটা বিশ্বের। যদিও ‘রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ’ হিসাবে তিনি অর্ধেক ট্যারিফের কথাই বোঝাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু কেন এই সিদ্ধান্ত ট্রাম্পের? কী মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা?
২ এপ্রিল, ট্রাম্প ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছাড়প্রাপ্ত পারস্পরিক শুল্ক’ শীর্ষক একটি চার্ট প্রকাশ্যে আনেন।
দূরের বা কাছের, বন্ধু বা শত্রু সব দেশে রপ্তানিকৃত আমেরিকান পণ্যের উপর উচ্চ শুল্ক আরোপের বর্ণনা দিতে গিয়ে লুটপাট, লুণ্ঠন, ধর্ষণ-এর মতো বেশ কিছু কঠিন শব্দবন্ধ প্রয়োগ করেন তিনি। যদিও ট্যারিফ বসানোর তাঁর বক্তব্যের সঙ্গে খুব একটা সামঞ্জস্য দেখা যায়নি।
চিন আমেরিকান পণ্যের উপর ৬৭ শতাংশ শুল্ক নেয়, তাই চিনা পণ্যের উপরে ৩৪ শতাংশ পারস্পরিক শুল্ক আরোপ করেছে ট্রাম্প। ভারতীয় পণ্যের উপর ২৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে। ৯ এপ্রিল থেকে প্রযোজ্য হবে এই হারে শুল্ক নেওয়া।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে একজন ব্যবসায়ী। তাই তিনি যাই সিদ্ধান্ত নেন না কেন, তাঁর সহজ ব্যবসায়ীক প্রবৃত্তি করে। ট্রাম্পের ট্যারিফ নীতিও সেই সহজাত স্বভাবের প্রতিফলন।
যদিও আমেরিকা সমস্ত আমদানিকৃত পণ্যের উপর অভিন্ন ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ শুরু করেছে, এমনকি যেসব দেশ কোনও শুল্ক আরোপ করে না, তাদের উপরও এই নিয়ম কার্যকর হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন ট্রাম্পের এই ‘রেসিপ্রোক্যাল ট্যারিফ’, আসলে অর্থনীতির উপরে প্রভাবের কথা ভেবেই প্রণয়ন করা। কারণ উচ্চতর শুল্ক আমেরিকানদের দৈনন্দিন জীবনকেও প্রভাবিত করবে। এমনকি দোকানের কেনাকাটা থেকে বাড়ি তৈরির ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলবে।
অর্থনৈতীক বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা ট্রাম্পের শুল্ক আমেরিকানদের জন্য উচ্চ আমদানি ব্যয়, মুদ্রাস্ফীতির চাপের কারণ হতে পারে। নির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে চাকরি হারাতে পারেন কেউ কেউ।
বিদেশী নির্মাতারা ট্রাম্প-আরোপিত শুল্কের অতিরিক্ত খরচ আমেরিকান ব্যবসা এবং ভোক্তাদের উপর বাড়িয়ে দিতে পারে চাপ। যার ফলে বাড়তে পারে দৈনন্দিন পণ্যের দামও।
আমদানিকৃত পণ্যের উচ্চ মূল্য সামগ্রিক মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধি করতে পারে, যা ভোক্তাদের ক্রয় ক্ষমতা হ্রাস করতে পারে।
যদিও শুল্ক আরোপের উদ্দেশ্য আমেরিকান শিল্পের প্রতিযোগিতামূলক প্রবণতা বৃদ্ধি করা, তবুও এর ফলে চাকরির বাজারে তৈরি হতে পারে বেকারত্ব।
যেমন ধরুন, ইস্পাতের উপর বেশি শুল্ক গাড়ি এবং যন্ত্রপাতি প্রস্তুতকারকদের উপর প্রভাব ফেলবে। ২০১৮ সালে, ইস্পাত এবং অ্যালুমিনিয়াম আমদানির উপর উচ্চ শুল্ক পণ্যগুলিকে ব্যয়বহুল করে তোলে, যা বাজারে চাহিদা কমায় এবং কর্মী ছাঁটাইয়ের কারণ হয়ে ওঠে।
প্রসঙ্গত, রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে কিছুদিন আগে বলা হয়, দুই মাস টানা বৃদ্ধির পর মার্চ মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে, অন্যদিকে আমদানিকৃত পণ্যের উপর শুল্ক বৃদ্ধির উদ্বেগের মধ্যে মুদ্রাস্ফীতির পরিমাপ প্রায় তিন বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছেয়। ফলে নষ্ট হয়েছে ব্যবসায়িকদের আস্থার উপরেও।
এই বিষয়ে অর্থনীতিকদের মত, ব্যবসায়িক কার্যকলাপের গতি কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দাম বৃদ্ধির অর্থ, অর্থনীতি স্থবিরতার দিকে এগিয়ে যেতে পারে। আমেরিকান অর্থনীতিকে মন্দার চেয়েও বড়কনো বিপদের দিকে ঠেলে দিতে পারে। তাই এমন কিছু যে ট্রাম চাইবেন না সেটাই স্বাভাবিক। অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞদের দাবি তাই ট্যারিফের কথা শুনে সকলে ভয় পেলেও, বাস্তবে শুল্কে যে ছাড় ট্রাম্প সরকার দিয়েছে তা এই ভাবনার প্রতিফলন।