নয়া দিল্লি: বাজারে অগ্নিমূল্য শাক-সবজির দাম। কিন্তু তার থেকেও চাপ বাড়াচ্ছে রান্নার গ্যাসের দাম (LPG Price Hike)। গৃহস্থের হেঁশেলে আগুন ধরিয়ে আজ, শনিবার ফের একবার বেড়েছে ১৪.২ কেজি এলপিজি সিলিন্ডারের দাম। এক ধাক্কায় ৫০ টাকা দাম বাড়ায়, এবার থেকে সিলিন্ডার পিছু খরচ হবে হাজার টাকার উপরে। তবে গ্যাসের এই মূল্যবৃদ্ধি নতুন কিছু নয়। বিগত দুই বছরের পরিসংখ্যানে নজর রাখলেই দেখা যাবে কমপক্ষে ১৫ থেকে ২০ বার গ্যাসের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। যেখানে দেশের প্রায় ৭০ শতাংশ গৃহস্থ বাড়িতেই রান্নার জন্য এলপিজি সিলিন্ডারের উপর ভরসা করা হয়, সেখানে এই ক্রমাগত মূল্যবৃদ্ধি যথেষ্ট উদ্বেগজনক। কিন্তু গ্যাসের দাম বাড়ছে কেন? শুধু এই প্রশ্নই বারবার উঠে আসছে সাধারণ মানুষের মনে। সদুত্তর মিলছে না তেমন।
যদি ২০২০ সালের নভেম্বর মাস থেকে রান্নার গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির হিসাব করা হয়, তবে দেখা যাবে বিগত দুই বছরে ১৪.২ কেজি এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডারের দাম ৪০৫ টাকা বেড়েছে। অর্থাৎ দুই বছরেই ৬০ শতাংশ দাম বৃদ্ধি হয়েছে।
করোনা সংক্রমণের শুরুতে কার্যত থমকে দাঁড়িয়েছিল গোটা বিশ্ব। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে করোনা টিকা আবিষ্কার হওয়ার পরই ফের জীবনে গতি ফিরেছে। আন্তর্জাতিক বাজারে ক্রুড তেলের চাহিদা বাড়তেই পাল্লা দিয়ে বেড়েছে দামও। দুই মাস আগে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর তেলের বাজারে চরম সঙ্কট দেখা দিয়েছে। ফলে আরও বেড়েছে ক্রুড তেলের দাম।
বর্তমানে ক্রুড তেলের দাম ব্যারেল প্রতি ১১১.৪০ ডলার। অপরিশোধিত তেলের উপরেই নির্ভর করে দেশে পেট্রোল-ডিজেল ও এলপিজির দাম। ক্রুড তেলের দাম যত বৃদ্ধি পাবে, ততই পাল্লা দিয়ে বাড়বে রান্নার গ্যাসের দাম।
রান্নার গ্যাসের ক্ষেত্রে দুটি ভাগ রয়েছে। ভর্তুকিযুক্ত ও ভর্তুকিবিহীন। এরমধ্যে ভর্তুকিযুক্ত গ্যাস সিলিন্ডার অর্থাৎ ১৪.২ কেজির গ্যাস গৃহস্থের বাড়িতে ব্যবহার করা হয়। ভর্তুকিবিহীন ১৯ কেজির বাণিজ্যিক এলপিজি গ্যাসগুলি মূলত রেস্তরাঁয় ব্যবহার হয়। সাধারণ মানুষের পকেটে চাপ কমানোর জন্যই সরকারের তরফে রান্নার গ্যাসে ভর্তুকি দেওয়া শুরু হয়েছিল। ২০১৩ সালে ইউপিএ সরকার গ্রাহকদের অ্যাকাউন্টে টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে তা নির্দিষ্ট কিছু অঞ্চলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। ২০১৪ সালে মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পর দেশের সমস্ত গ্রাহককেই ১২টি সিলিন্ডার অবধি ভর্তুকি দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়। তবে অধিকাংশ গ্রাহকই ২০২০ সালের মে মাস থেকে সেই ভর্তুকি পাচ্ছেন না বলেই দাবি করেছেন।
মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে বিগত বেশ কয়েক বছর ধরেই সরব বিরোধী দলের নেতারা। ক্রমাগত মূল্যবৃদ্ধির জেরে সাধারণ মানুষের উপরে যে ব্যাপক আর্থিক চাপ সৃষ্টি হচ্ছে, তা নিয়ে বারংবার কেন্দ্রীয় সরকারকে আক্রমণ করেছে বিরোধীরা। সংসদের যেকোনও অধিবেশনেই মূল্যবৃদ্ধি ও মুদ্রাস্ফীতির ইস্যু তুলে ধরে তারা। সরকার জনদরদী নয়, এই অভিযোগও আনা হয়েছে বিরোধীদের তরফে। এদিন রান্নার গ্যাসের দাম বাড়তেই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় টুইটে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছেন। তবে সরকারের যুক্তি, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দামের ওঠানামার উপরই রান্নার গ্যাসের দাম নির্ভর করে। এর উপর রাজ্য সরকারগুলিও অতিরিক্ত কর বসায়। তাই গ্যাসের দাম বৃদ্ধি পুরোটাই যে কেন্দ্রের হাতে রয়েছে, তা বলা ভুল।