
কথায় বলে ‘শেখার কোনও বয়স হয় না’। এই কথাকেই জীবনের মূলমন্ত্র বলে স্বীকার করেছিলেন শ্রীকান্ত জিচকার। কে এই শ্রীকান্ত জিচকার? এক কথায় বললে ভারতের সবচেয়ে শিক্ষিত ব্যক্তি বললে ভুল বলা হয় না। এই উপাধিই অর্জন করেছেন তিনি। একটা মানুষের পড়াশোনা এবং পাণ্ডিত্য থাকতে পারে তা বিশ্বাস করাই কঠিন।
ভারতের অন্যতম সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষা বলে গণ্য করা হয় সিভিল সার্ভিসের পরীক্ষাকে। যা ইউপিএসসি বা ইউনিয়ন পাবলিক সার্ভিস কমিশন নামেও পরিচিত। বারবার চেষ্টা করেও এই পরীক্ষায় পাশ করতে পারেন না অনেকে। সেখানে সেভিল সার্ভিসের পরীক্ষায় দুবার হেলায় উর্ত্তীর্ণ হয়েছেন শ্রীকান্ত। ঝুলিতে রয়েছে ২০ বেশি ডিগ্রি। এই প্রতিবেদনে রইল সেই ব্যক্তিরই কীর্তি।
১৯৫৪ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর, মারাঠী পরিবারে জন্ম হয় শ্রীকান্ত জিচকারের। ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনায় ছিল তুখোড়। প্রথমে ঠিক করেন চিকিৎসক হবেন। সেই মতোই শুরু করেন পড়াশোনা। ডাক্তারি পরীক্ষায় পাশ করে ডাক্তার হয়ে ওঠেন। MBBS এবং MD হিসাবে নিজের পড়াশোনা শেষ করে তিনি।
এখানেই শেষ নয়। ডাক্তার হিসাবে বেশিদিন কাজ করেননি শ্রীকান্ত। বরং পড়াশোনাই ছিল তাঁর ধ্যান জ্ঞান। বিশ্বের ২০টি বেশি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নানা বিষয়ে অসংখ্য ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন তিনি। যার মধ্যে আছে ওষুধ সংক্রান্ত পড়াশোনা, আইন নিয়ে পড়াশোনা, সাংবাদিকতা, বিজনেজ ম্যানেজমেন্ট এবং সংস্কৃত সাহিত্যে একাধিক ডিগ্রি।
নিজের জীবদ্দশায় ৪২টি বিশ্ব বিদ্যালয়ে নানা পরীক্ষায় বসেছিলেন তিনি। পেয়েছেন বহু বিষয়ে স্বর্ণপদকও।
ডাক্তারি পড়াশোনা শেষ করে আরও জ্ঞান আহরণের খিদে থেকে পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন, সমাজবিদ্যা, অর্থনীতি, ইতিহাস, ইংরেজি সাহিত্য, দর্শন, পলিটিক্যাল সাইন্স, ভারতের প্রাচীন ইতিহাস, সংস্কৃতি নিয়ে করেন পড়াশোনা। এই সব বিষয়ে তাঁর অগাধ পান্ডিত্য। শিক্ষাক্ষেত্রে এই অভূতপূর্ব সাফল্যের জন্য তাঁকে ভারতের সবচেয়ে শিক্ষিত ব্যক্তিও বলা হয়।
কেবল পড়াশোনাতেই থামেনি শ্রীকান্তের বিজয় রথ। দু-দু’বার পাশ করেছেন সিভিল সার্ভিসেসের পরীক্ষায়। কিছুদিন আইপিএস হিসাবে কাজও করেছেন। তবে তারপর তিনি ইস্তফা দিয়ে দেন।
১৯৭৩ থেকে ১৯৯০ সালের মধ্যে ২০টিরও বেশি ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৭৮ সালে আইপিএস হিসাবে কাজে যোগ দেন। ১৯৮০ সালে সেখান থেকে পদত্যাগ করে আইএএস হওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকেন। তবে সেই শখ অবশ্য পূরণ হয়নি। রাজনীতিতে পা রাখেন শ্রীকান্ত। নির্বাচনে জিতে বিধায়ক হন। ১৪টি আলাদা আলাদা মন্ত্রক সামলেছেন তিনি।
তিনি মহারাষ্ট্র সরকারের প্রতিমন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮০ থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত মহারাষ্ট্র বিধানসভার সদস্য ছিলেন। ১৯৮৬ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত তিনি মহারাষ্ট্র বিধানসভার সদস্য হিসেবেও প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। ১৯৯২ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত তিনি রাজ্যসভার সংসদ সদস্য ছিলেন। ১৯৯২ সালে, শ্রীকান্ত জিচকর নাগপুরে সন্দীপানি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। দুঃখজনকভাবে, ২০০৪ সালের ২ জুন, নাগপুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে কোন্ধালির কাছে এক গাড়ি দুর্ঘটনায় ৪৯ বছর বয়সে মৃত্যু হয় তাঁর।