
নন্দীগ্রাম: একুশের পর ছাব্বিশের নির্বাচনেও ‘হটসিট’ নন্দীগ্রাম। গত বিধানসভা নির্বাচনেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও শুভেন্দু অধিকারীর নজিরবিহীন লড়াই দেখেছে বাংলা। গণনা মাঝেই ওয়েবসাইট আপডেট হওয়া ব্যাহত, বিদ্যুৎ বিভ্রাট- এরকম হাজারও জটিলতার শেষে দেখা যায় জয়ী হন শুভেন্দু অধিকারী। আগামী ছাব্বিশের নির্বাচনেও ফোকাল পয়েন্ট নন্দীগ্রাম। যে মাটিতে রাজ্যের শাসকদল বিরোধীর ভূমিকায়। শাসক-বিরোধী জোর টক্কর। বিজেপিকে মাত দিতে এবার শাসকদলের একের পর এক স্ট্র্যাটেজি, গেম প্ল্যানিং, পাল্টা রণকৌশল বিজেপির। এই পরিস্থিতিতে নন্দীগ্রামের মাটিতে জোর গুঞ্জন শুরু হয়েছে। রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতাকে মাত দিতে এক অনুগামী নেতাকে তৃণমূল প্রার্থী করার জোর জল্পনা শুরু হয়েছে জমি আন্দোলনের মাটিতে। বিজেপির এক প্রভাবশালী নেতার দলবদলের খবরে এই গুঞ্জন এখন তুঙ্গে, যা নিয়ে রাজনৈতিক পারদ ক্রমশ চড়ছে ইতিমধ্যে।
এ নিয়ে পাড়ার ক্লাব কিংবা চায়ের দোকানের আড্ডায় আলোচনার ঝড় উঠলেও, তৃণমূল বা বিজেপি – উভয় দলের স্থানীয় নেতৃত্বই এ বিষয়ে বিশেষ কোনও খবর নেই বলে জানিয়েছেন। নন্দীগ্রাম বিধানসভা দু’টি ব্লক নিয়ে গঠিত। শুধুমাত্র নন্দীগ্রাম ২ ব্লকে বিজেপি এগিয়ে। এক্ষেত্রে দলবদলের জল্পনা যাঁকে ঘিরে, তিনিও এই ব্লকেরই বাসিন্দা। তিনি একজন জনপ্রতিনিধি এবং তমলুক সাংগঠনিক জেলা বিজেপির অন্যতম পদাধিকারীও। এলাকায় তাঁর যথেষ্ট নামডাক রয়েছে এবং তৃণমূলে থাকার সময় থেকেই তিনি রাজনীতির জনপ্রিয় মুখ।
একুশের নির্বাচনের আগে তিনি শুভেন্দু অধিকারীর অনুগামী হয়ে দলবদল করেছিলেন। তবে বর্তমানে গেরুয়া শিবিরে আদি-নব্যের দ্বন্দ্ব প্রকট হওয়ায় তিনি ক্রমশ নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন বলে বিজেপি সূত্রের খবর। এরই মধ্যে, তৃণমূলের ভোট কৌশলী সংস্থা আইপ্যাকের সঙ্গে তাঁর গোপন বৈঠকের কথা ছড়িয়ে পড়ে। রাজনৈতিক মহলে কান পাতলে শোনা যায়, ছাব্বিশের নির্বাচনে তৃণমূল তাঁকে শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে প্রার্থী করতে চায় রাজ্যের শাসক দল।
এদিকে বিজেপির একটি সূত্রের খবর, এই খবর জানার পর শুভেন্দু অধিকারীও তাঁর এই অনুগামী নেতার সঙ্গে গোপন বৈঠক করেছেন। সম্প্রতি হরিপুরের একটি দলীয় কর্মসূচির ফাঁকে নিরাপত্তারক্ষীদের ছাড়াই অন্য গাড়িতে করে শুভেন্দু অধিকারী তাঁর বাড়িতে যান। সব মিলিয়ে ভোটের হিসেব-নিকেশ সহ নন্দীগ্রাম ২ ব্লক এলাকার এই বিজেপি নেতার দলবদলের সম্ভাবনা ক্রমশ জোরাল হচ্ছে। তবে ঘাসফুল বা পদ্মফুল শিবিরের স্থানীয় নেতানেত্রীরা এ ব্যাপারে স্পষ্ট কিছু বলতে চাননি।
বিজেপির তমলুক সাংগঠনিক জেলার সাধারণ সম্পাদক মেঘনাদ পাল ক্যামেরার সামনে মুখ না খুললেও ফোনে জানান, “গুজবে কান না দেওয়াই ভাল। আগেও অনেক নেতাকে নিয়ে এমন খবর ছড়িয়েছে। কিন্তু বিজেপিতে ভাঙন বিপর্যয় ঘটেনি।”
তৃণমূলের তরফে তমলুক সাংগঠনিক জেলা সম্পাদক জমি আন্দোলের নেতা আবু তাহের বলেন, “নন্দীগ্রামে এবার বদলের সুর স্পষ্ট। বিজেপির অনেক নেতাই স্বস্তির খোঁজে তৃণমূলের পথে পা বাড়াচ্ছেন। শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগও রেখে চলেছে অনেকে। যার কথা বলছেন তিনিও আসতে পারেন।”