
কাঁথি: বিধানসভা নির্বাচনের আর মাস পাঁচেক বাকি। তার আগে বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর জেলা পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথি পৌরসভার বিরুদ্ধে বড় পদক্ষেপ পৌর ও নগর উন্নয়ন দফতরের। একাধিক অভিযোগ পেয়ে কাঁথি পৌরসভাকে শোকজ করল ফিরহাদ হাকিমের দফতর। সাত দিনের মধ্যে শোকজের জবাব দিতে বলা হয়েছে। যথাযথ উত্তর না পেলে কাঁথির পৌরবোর্ড ভেঙে দেওয়া হবে কি না, তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে।
তৃণমূল পরিচালিত কাঁথি পৌরসভার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ শহরবাসীর। তাঁদের বক্তব্য, কাঁথি শহরের প্রতিটি মোড় এখন অন্ধকার। নর্দমার গন্ধে নাভিশ্বাস ওঠে। এরই মধ্যে গোদের উপর বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে চড়া হোল্ডিং ট্যাক্স। সমস্যার সমাধান চাইতে গিয়ে চেয়ারম্যানের দরবারে সাধারণ মানুষকে অপমানিত হতে হয়েছে বলেও অভিযোগ। সাধারণ মানুষের ক্ষোভের কথা পৌঁছেছে রাজ্য সরকারের কাছে।
এই অভিযোগ পাওয়ার পর বড়সড় পদক্ষেপ করল রাজ্য প্রশাসন। কেন বর্তমান বোর্ড অফ কাউন্সিলর্সকে ভেঙে দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে সাত দিনের সময়সীমা বেঁধে শোকজ নোটিশ পাঠিয়েছে পৌর ও নগর উন্নয়ন দফতর। মঙ্গলবার সেই শোকজ নোটিসে বলা হয়েছে, রাস্তা রক্ষণাবেক্ষণ থেকে শুরু করে বাড়ি বাড়ি জল পৌঁছে দেওয়া, সব ক্ষেত্রেই এই বোর্ড চূড়ান্ত অবহেলা করেছে। যদি এক সপ্তাহের মধ্যে এই ব্যর্থতার কোনও সদুত্তর না পাওয়া যায়, তবে আইনের কোপে পড়বে পৌরবোর্ড।
এই শোকজের নেপথ্যে রয়েছে শহরবাসীর গণস্বাক্ষর সম্বলিত আবেদন। তাতে অভিযোগের তির মূলত পৌরসভার চেয়ারম্যানের সুপ্রকাশ গিরির দিকে। প্রথমত, কোনও আলোচনা কিংবা যুক্তি ছাড়াই হোল্ডিং ট্যাক্স বা গৃহকর অস্বাভাবিক হারে বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, এই খামখেয়ালি সিদ্ধান্তের ফলে সাধারণ মানুষের উপর অসহনীয় আর্থিক বোঝা চেপেছে। দ্বিতীয়ত, এই সমস্যার কথা বলতে গেলে নাগরিকদের কপালে জুটেছে চূড়ান্ত দুর্ব্যবহার ও অপমান। এতে পৌর আইন লঙ্ঘিত হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে । পৌর আইন অনুযায়ী, নাগরিক দায়িত্ব পালনে এই বোর্ড পুরোপুরি অযোগ্য বলে গণ্য হয়েছে। তাই এই শোকজ নোটিশ জারি করা হয়েছে। এর সন্তোষজনক উত্তর না মিললে আইনি পথেই এই বোর্ড ভেঙে দেওয়া হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
যদিও এখনও এই শোকজ নিয়ে চেয়ারম্যান সুপ্রকাশ গিরির কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে তৃণমূলের কাঁথি সাংগঠনিক জেলার চেয়ারম্যান তরুণ মাইতি বলেন, “কাঁথি পৌরসভা এলাকায় থাকলেও পৌরসভার পরিচালনার সঙ্গে কোনওভাবেই জড়িত নই। আমাদের চেয়ারম্যান যিনি আছেন, তিনি নিশ্চয় উত্তর দেবেন। আশা করি, তাঁর উত্তরে রাজ্য সন্তুষ্ট হবে। তারপর রাজ্য যা ব্যবস্থা নেওয়ার, তা নেবে। আর বিরোধীরা কী বলছে, তা আমাদের বিচার্য নয়।”
শোকজ নিয়ে তৃণমূলকে আক্রমণ করেছে গেরুয়া শিবির। বিজেপির কাঁথি সাংগঠনিক জেলার সহ সভপাতি অসীম মিশ্র বলেন, “কাঁথি পৌরসভা তো ছাপ্পা ভোটে জিতেছে তৃণমূল। মানুষের ভোটে জেতেনি। তারা পরিষেবা দিতে ব্যর্থ। তাই, নিজেদের সরকারই শোকজ করছে।” একইসঙ্গে তাঁর কটাক্ষ, কাটমানি ঠিকমতো পৌঁছে দিতে পারেননি বলেই হয়তো সরানো হতে পারে চেয়ারম্যানকে। যাতে কাটমানির টাকা সরাসরি পৌঁছে যেতে পারে, সেজন্য প্রশাসক বসানো হতে পারে বলেও মন্তব্য করেন অসীম মিশ্র। কাঁথি পৌরসভায় ফের ভোটের দাবি জানান তিনি।