কলকাতা: রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল পদত্যাগ করুন। এমনটাই দাবি করল গেরুয়া শিবির। বৃহস্পতিবারই হাইকোর্টে হাওড়া পুরভোট সংক্রান্ত মামলার প্রথম শুনানি ছিল। সেখানে এজি সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় স্বীকার করেন তিনি ভুল তথ্য পেশ করেছিলেন। হাওড়া-বিলে সই করেননি রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। কেন ভুল তথ্য পেশ তা হলফনামা দিয়ে আদালতকে জানাবেন এমনটাই জানিয়েছেন অ্যাডোভোকেট জেনারেল। আর এতেই সরাসরি এজি-কেই তোপ দেগেছেন বিজেপির মুখপাত্র জয়প্রকাশ মজুমদার।
অ্যাডভোকেট জেনারেলের পদত্যাগের দাবি
জয়প্রকাশ এদিন টেলিফোনে TV9 বাংলাকে বলেন, “অ্যাডভোকেট জেনারেল একটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও সম্মানীয় পদ। সেই পদের ওঁ যে অমর্যাদা করলেন সেটা কি কাঙ্খিত? ওঁর তো পদত্যাগ করা উচিত।” তাঁর আরও সংযোজন, “তবে একদিকে ভাল খবর অ্যাডভোকেট জেনারেল যে নিজের ভুল স্বীকার করেছেন। কিন্তু, তাঁর অপরাধ শাস্তিযোগ্য। সাধারণ কোনও মানুষ হাইকোর্টে ভুল তথ্য পেশ করলে তার জন্য জরিমানা দিতে হয় মোটা অঙ্কের, সেখানে তিনি অ্যাডভোকেট জেনারেলের মতো এত গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে কী করে এমন ভুল করতে পারেন! তাও হাওড়া পুরভোটের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ মামলায়?”
সরকারের বিরুদ্ধে মিথ্যাচারের অভিযোগ
বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, “অ্যাডভোকেট জেনারেল নিজে স্বীকার করেছেন তিনি ভুল তথ্য দিয়েছেন। সরকার যে মিথ্যা কথা বলেছে এবং রাজ্যপাল যে সঠিক তথ্য় দিয়েছেন তা প্রমাণ হয়ে গেল। অ্যাডভোকেট জেনারেলের তো দোষ নেই। তাঁকে রাজ্য যা তথ্য দেবে তিনি তাই পেশ করবেন। এর থেকেই প্রমাণ হয়ে গেল যে এই সরকার একটা মিথ্যাবাদী সরকার।” যদিও তৃণমূলের তরফে এখনও কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি।
আইনজীবীদের পর্যবেক্ষণ
অন্যদিকে, আইনজীবীদের একাংশের দাবি, অ্যাডভোকেট জেনারেল কেবল তথ্য পেশ করেন। নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে তিনি যে তথ্য পাবেন তাই তিনি পেশ করবেন। সেক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন যদি ভুল করে থাকে তাহলে অ্যাডভোকেট জেনারেলের কিছু করার নেই। একইসঙ্গে তাঁদের এও অভিমত, অ্যাডভোকেট জেনারেল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি পদ। সেই পদে আসীন থেকে এই ধরনের ভুল পরিহারযোগ্য নয়।
কেন এই মামলা?
আদালত সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবার বিচারপতি শম্পা সরকার ও বিচারপতি বিভাস রঞ্জন দে’র ডিভিশন বেঞ্চে পুরভোট-বিতর্কের প্রথম শুনানি হয়। বৃহস্পতিবার, রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল জানান, রাজ্যপাল হাওড়া-বিলে সম্মতি দেননি। পাশাপাশি এও জানান, তিনি ভুল তথ্য পেশ করেছিলেন। রাজ্যপাল সই করেছিলেন বিলে এমনটাই জানিয়েছিলেন এজি। কিন্তু, রাজ্যপাল সেই বিলে সই করেননি। সেকথা আজ স্বীকার করে নেন অ্যাডভোকেট জেনারেল। কেন ভুল তথ্য পেশ তা সবিস্তারে হলফনামা দিয়েই গোটা বিষয়টি তিনি আদালতে পেশ করবেন। মামলার পরবর্তী শুনানি হবে নতুন বছরে আগামী ৬ জানুয়ারি। সেদিন, প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে মূল মামলাটির শুনানি।
রাজ্যে আগামী ২২ জানুয়ারি যে চারটি পৌরসভা নির্বাচনের আয়োজন করা হয়েছে সেখান থেকে কেন বাদ গেল হাওড়ার নাম এই মর্মেই মামলা দায়ের করেছিলেন জনস্বার্থ মামলার অন্যতম মামলাকারী মৌসুমী রায়। পুর নির্বাচন সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তিকে চ্যালেঞ্জ করে মামলা দায়ের করেন তিনি। দ্রুত সেই মামলার শুনানি চাওয়া হয় মামলাকারীর তরফে। বৃহস্পতিবার বিচারপতি শম্পা সরকার ও বিচারপতি বিভাস রঞ্জন দে-র ডিভিশন বেঞ্চে মামলার প্রথম শুনানি হয়।
বিতর্কের সূত্রপাত
সোমবার সাংবাদিক বৈঠক করেন রাজ্য নির্বাচন কমিশনার সৌরভ দাস। মঙ্গলবার প্রকাশিত হয় বিজ্ঞপ্তি। শিলিগুড়ি, বিধাননগর, আসানসোল, চন্দননগরে ভোট হচ্ছে ২২ জানুয়ারি। কিন্তু সেই তালিকায় ছিল না হাওড়া পুরনিগমের নাম। কারণ বিল-বিতর্ক। গত শুক্রবার, হাইকোর্টে রাজ্যের তরফে অ্যাডভোকেট জেনারেল সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় জানান, হাওড়া পুরসভার বিলে সই করে দিয়েছেন রাজ্যপাল। তাই হাওড়া পুরভোটে কোনও বাধা নেই। কিন্তু, শনিবার সকালেই টুইট করেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। স্পষ্ট তিনি টুইটে জানান, হাওড়া পুরসভা সংক্রান্ত বিল এখনও তাঁর বিবেচনাধীন। পাশাপাশি এও জানান, হাওড়া-বিলে তিনি সই করেননি।
পরবর্তীতে উত্তরবঙ্গে সফরকালেও একই দাবি করেন ধনখড়। তিনি ষ্পষ্টই জানান, হাওড়া পুরবিল সংক্রান্ত কোনও বিলেই সই করেননি। এমনকী, হাওড়া পুরবিল সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য চেয়ে তিনি নির্বাচন কমিশনের কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন। কিন্তু, তার কোনও উত্তর আসেনি বলেই অভিযোগ করেন তিনি। সেই বিতর্কের জল গড়ায় অবশেষে নির্বাচন কমিশন পর্যন্ত।