
বেঙ্গালুরু: রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বে ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল কংগ্রেস। জঘন্য ফলের দায় মাথায় নিয়ে সভাপতি পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন রাহুল। তারপর, দীর্ঘদিন সনিয়া গান্ধীকে অন্তর্বর্তীকালীন সভানেত্রী পদে রেখে দিয়েছিল কংগ্রেস। সেই সময়কালে, দিল্লি, বিহার, অসম, কেরল, পশ্চিমবঙ্গ, গোয়া, উত্তরাখণ্ড, পঞ্জাব, মণিপুর, উত্তর প্রদেশ – একের পর এক রাজ্যে লজ্জাজনক ফল করেছে কংগ্রেস। ২০২২-এর অক্টোবরে কংগ্রেসের নয়া সভাপতি নির্বাচিত হন মল্লিকার্জুন খাড়্গে। আর সভাপতি হয়েই দলকে আশাতীত সাফল্য এনে দিলেন খাড়্গে।
তিনি সভাপতি হওয়ার পর গুজরাটের নির্বাচনে পরাজিত হয়েছে কংগ্রেস। তবে, একই সঙ্গে হিমাচল প্রদেশে ক্ষমতা দখল করতে সফল হয়েছিল কংগ্রেস। উত্তর-পূর্বের তিন রাজ্য – ত্রিপুরা, মেঘালয় এবং নাগাল্যান্ডে অবশ্য কংগ্রেস বিশেষ প্রভাব ফেলতে পারেনি। কিন্তু, এদিন তাঁর নিজ রাজ্যে দুর্দান্ত জয় পেল কংগ্রেস। ইতিহাস গেঁটে দেখা যাচ্ছে গত ৩৪ বছরের মধ্যে কর্নাটকে যে কোনও রাজনৈতিক দলের এটাই সবথেকে বড় জয়। ১৯৮৯ সালে বীরেন্দ্র পাতিলের নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস কর্নাটকে ১৭৮ টি আসনে জয়ী হয়েছিল, ভোট পেয়েছিল ৪৩.৭৬ শতাংশ। ১৯৯৪ সাল এইচডি দেবেগৌড়ার জেডি (এস) জিতেছিল ১১৫ আসন, ১৯৯৯-এ এসএম কৃষ্ণর নেতৃত্বে কংগ্রেস জিতেছিল ১৩২ আসন, ২০০৪ সালে বিজেপি জিতেছিল ৭৯ আসন, ২০০৮-এ বিজেপি ১১০ আসন, ২০১৩-তে কংগ্রেস জিতেছিল ১২২ আসন আর ২০১৮ সালে বিজেপি জিতেছিল ১০৪ আসন। এবার কংগ্রেস জিততে চলেছে ১৩৬টি আসন।
কর্নাটকের নির্বাচন ছিল মল্লিকার্জুন খাড়্গের বড় পরীক্ষা। সেই পরীক্ষায় যে তিনি লেটার মার্ক-সহ পাস করলেন, তা বলাই বাহুল্য। ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে কর্নাটকে ২৮টি আসনের মধ্যে কংগ্রেস জিতেছিল মাত্র ১টি আসনে। খাড়্গে দায়িত্ব নেওয়ার পর, কয়েক মাসেই বদলে গেল ছবিটা। আসলে, আগামী লোকসভা নির্বাচনের প্রেক্ষিতে এই জয় অত্যন্তু গুরুত্বপূর্ণ। এই জয়ের পর খাড়্গে বলেছেন, দক্ষিণ ভারত বিজেপি-মুক্ত হয়েছে। বস্তুত, দক্ষিণ ভারতে বিজেপির একমাত্র গড় ছিল কর্নাটকই। এদিনের ভোটের ফলে, দক্ষিণ ভারতের একটি রাজ্যেও ক্ষমতায় থাকল না বিজেপি। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে, এটা গেরুয়া শিবিরের পক্ষে অবশ্যই বড় ধাক্কা। রাজ্যে প্রচার প্রভূত সময় দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। রাজ্যে জনসভা করেছেন গেরুয়া শিবিরের তাবড় কেন্দ্রীয় নেতারাও। তারপরও কংগ্রেসের এই জয় অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। বলা যেতে পারে, এই প্রথম ‘মোদী ম্যাজিকে’র জবাব দিল কংগ্রেস।