
বেঙ্গালুরু: কর্নাটকে ভোট গণনা এখনও চলছে। তবে, গণনার একেবারে শুরু থেকে ফলের প্রবণতা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা বাসবরাজ বোম্মাই হার স্বীকার করে নিয়েছেন। এখনও পর্যন্ত ফলের যা প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, তাতে একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে আবির্ভূত হতে চলেছে কংগ্রেস। হারের দায় নিজের ঘাড়ে নিয়ে, বাসবরাজ বোম্মাই বলেছেন, বিজেপি ভোটারদের মনে ছাপ ফেলতে পারেনি। বস্তুত, বোম্মাইয়ের নেতৃত্বে রাজ্যে বিজেপি সরকার বেশ কিছু বড় পরিবর্তন এনেছিল। যা নিয়ে রাজ্যে বড় মাপের বিতর্ক হয়েছে। বিশেষ করে শিক্ষাঙ্গনে হিজাব পরা নিষিদ্ধ করা নিয়ে দীর্ঘ জলঘোলা হয়। বিরোধীরা দাবি করেছিল, ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতির কথা মাথায় রেখেই এক নির্দিষ্ট সম্প্রদায়কে নিশানা করে এই নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে বোম্মাই সরকার। এদিনের ভোটের ফল প্রকাশের পর, রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিজেপির এই পদক্ষেপের কোনও ইতিবাচক প্রভাব পড়েনি মানুষের উপর। বরং, বিরোধীরা নিপুনভাবে হিজাব নিষিদ্ধকরণকে বিজেপির বিরুদ্ধে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে পেরেছে।
২০২২ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি, কর্নাটক সরকার সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে হিজাব, গেরুয়া চাদর-সহ সমস্ত ধরণের ধর্মীয় বস্ত্র পরিধান করা নিষিদ্ধ বলে ঘোষণা করা হয়েছিল। তার আগেই একদল মুসলিম ছাত্রীকে হিজাব ও বোরখা পরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রবেশে বাধা দেওয়া নিয়ে বিতর্ক চলছিল। মুসলিম ছাত্রীদের বিক্ষোভের পাল্টা, একদল ছাত্র-ছাত্রী গেরুয়া চাদর পরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসা শুরু করেছিল। এই বিক্ষোভ-পাল্টা বিক্ষোভের মধ্যেই এই নির্দেশিকা জারি করেছিল কর্নাটক সরকার। কর্নাটক হাইকোর্ট সরকারি নির্দেশ বহাল রাখলেও, বর্তমানে এই নিষেধাজ্ঞাটি সুপ্রিম কোর্টের বিবেচনাধীন। তবে, হিজাব বিতর্কের শুরু থেকেই এই বিষয়ে কঠোর অবস্থান নিয়েছিল কংগ্রেস। কংগ্রেস বিধায়িকা কানিজ ফতিমা বিধানসভা কক্ষে সরকারকে খোলাখুলি চ্যালেঞ্জ করেছিলেন, যাতে তাঁকে হিজাব খুলতে বলা হয়।
ফতিমা বলেছিলেন, “আপনারা জানেন আমিও হিজাব পরি এবং আমি বিধানসভার একজন সদস্য। যদি কারও সাহস থাকে, তারা আমায় থৈামিয়ে দেখাক। যারা হিজাব ও বোরখা পরতে চান, তারা সেগুলি পরবেন। এই পোশাক পরা আমাদের অধিকার। হিজাব পরা আমাদের সংস্কৃতি। এতে বাধা দেওয়ার অধিকার কারও নেই। এই অধিকার রক্ষা করতে আমরা যতদূর যেতে হয় যাব।”
বস্তুত, এই বিষয়ে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে গিয়েছিল গোটা রাজ্য। নির্বাচনের প্রচার পর্বে অবশ্য কংগ্রেস বা বিজেপি – কোনও দলই হিজাব বিতর্ককে বড় ইস্যু করে তোলেনি। তবে, রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, রাজ্যের জনগণ যে এই হিজাব নিষিদ্ধকরণ ভালভাবে নেননি, তার সবথেকে বড় প্রমাণ গুলবর্গা উত্তর কেন্দ্র থেকে কানিজ ফতিমার জয়। নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে এখনও তাঁর জয় ঘোষণা না করা হলেও, বেসরকারিভাবে জানা যাচ্ছে, বিজেপির চন্দ্রকান্ত বি পাতিলকে তিনি ২,৭০০ ভোটের কিছু বেশি ভোটে পরাস্ত করেছেন। শুধু তাই নয়, হিজাব নিষিদ্ধের পক্ষে সবথেকে সোচ্চার যিনি ছিলেন, রাজ্যের সেই বিদায়ী শিক্ষামন্ত্রী বিসি নাগেশ বড় ব্যবধানে পরস্ত হয়েছেন। তিপতুর কেন্দ্রে কংগ্রেসের কে শদাক্ষরীর বিরুদ্ধে ১৭,৬৫২ ভোটে পরাস্ত হয়েছেন তিনি। হিজাব নিষিদ্ধকরণের মুখের হার এবং হিজাব নিষিদ্ধের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রধান মুখের জয়ই বলে দিচ্ছে, এই বিষয়ে স্পষ্ট মত দিয়েছেন রাজ্যের মানুষ।