কলকাতা: খবর করতে গিয়ে আক্রান্ত TV9 বাংলার সাংবাদিক, চিত্র সাংবাদিক। উত্তর দমদমের ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে TV9 বাংলার চিত্র সাংবাদিক দীপঙ্কর জানাকে মারধরের ঘটনায় তিন জনকে আপাতত গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ডানলপের একটি নার্সিংহোমে চিকিৎসাধীন রয়েছেন আমাদের আক্রান্ত সহকর্মী। তাঁর সিটি স্ক্যান করা হচ্ছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তাঁর অভ্যন্তরীণ আঘাত রয়েছে।
উত্তর দমদমে আক্রান্ত TV9 বাংলার সাংবাদিক
এদিন ভোট শুরু হওয়ার এক ঘণ্টার মধ্যেই উত্তর দমদমে ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে আক্রান্ত হতে হয় সংবাদমাধ্যমকে। সংবাদমাধ্যমের ওপর চড়াও হন একদল মুখাবৃত পুরুষ-মহিলা। চিত্র সাংবাদিকের হাত থেকে ক্যামেরা কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা চলে। বন্ধ করে দেওয়া হয় ক্যামেরা। ধুন্ধুমার কাণ্ড হয় ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের আলিপুর এলাকায়। খবর করে গিয়ে আক্রান্ত হন সাংবাদিক সৌরভ দত্তও।
ঘটনাটি ঠিক কী ঘটেছিল?
উত্তর দমদমের ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম প্রার্থী শিবশঙ্কর ঘোষ সকাল থেকেই অভিযোগ করছিলেন, ভোট দিতে বাধা দিচ্ছে তৃণমূল। আলিপুর মোড়ে তৃণমূল কর্মী সমর্থকরা সিপিএম কর্মীদের ধাওয়া করেছেন বলে অভিযোগ। সে সময় সংবাদমাধ্যমের উপস্থিতিতে আবারও সিপিএমের প্রার্থী, এজেন্টরা বুথমুখী হওয়ার চেষ্টা করেন। আলিপুর ফ্রেন্ডস ক্লাবের সামনে তৈরি হয়েছে নির্বাচনী বুথ। সে দিকেই সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে এগোচ্ছিলেন সিপিএম কর্মী সমর্থকরা। সঙ্গে ছিলেন প্রার্থীও। সেখানে মুখে মাস্ক পরা একাধিক ব্যক্তি ও সালোয়ার কামিজ পরা এক মহিলা পথ আটকান। প্রথমে সিপিএম কর্মী সমর্থকদের তাঁদের কথা কাটাকাটি হয়। সেই ছবি লাইভ দেখাচ্ছিল TV9 বাংলা। সিপিএমের সঙ্গে তৃণমূল কর্মীদের হাতাহাতির ছবি লাইভ দেখানোর সময়েই চিত্র সাংবাদিক দীপঙ্কর জানার ওপর হামলা চালান কয়েকজন দুষ্কৃতী। মাটিতে ফেলে ২০-২৫ জন দীপঙ্কর জানার ওপর হামলা চালান। লাথি, ঘুষি মারতে থাকেন। ক্যামেরাও ছিনতাই করে নিয়ে যাওয়া হয়। তাদের প্রত্যেকেই মুখই মাস্কে ঢাকা। যে কয়েকজন মহিলা ছিলেন, তাঁরা সালোয়ার কামিজের ওড়না দিয়ে মুখ ঢাকেন।
আক্রান্ত TV9 বাংলার অপর সাংবাদিক
এদিকে, খবর করতে গিয়ে আক্রান্ত হন TV9 বাংলার অপর সাংবাদিক অর্ঘ চট্টোপাধ্যায়ও। কাঁচরাপাড়ায় তাঁর ওপর হামলা হয়। হালিশহরের ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের একটি বুথে দেদার ছাপ্পা মারার অভিযোগ ওঠে। বিজেপি প্রার্থী রবিশঙ্কর সিং তৃণমূলের বিরুদ্ধে ছাপ্পার অভিযোগ তোলেন। তিনি প্রতিবাদ করতে গেলে তৃণমূল কর্মীরা তাঁর ওপর চড়াও হন বলে অভিযোগ। সংবাদমাধ্যমের কর্মীরা সেই ছবি তুলতে যান। তখন TV9 বাংলার অপর চিত্র সাংবাদিক অর্ঘ্য চট্টোপাধ্যায়ের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন তৃণমূল কর্মীরা। তিনি ক্যামেরা বাঁচাতে একটি গলিতে ঢুকে পড়েন। তখন তাঁর পিঠে, মাথায় ঘুষি মারা হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে লাঠিচার্জ শুরু করে পুলিশ। তখন আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন তৃণমূল কর্মীরা। পুলিশের সামনেই TV9 বাংলার চিত্র সাংবাদিককে মারধর করতে থাকেন তাঁরা। হুমকি দিতে থাকেন। প্রিসাইডিং অফিসার, পুলিশের সামনেই ‘দেখে নেওয়া’র হুমকি দিতে থাকে তৃণমূল।
আক্রান্ত গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ
শুধু TV9 বাংলাই নয়, খবর করতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছেন অনান্য সংবাদমাধ্যমের কর্মীরাও। বিরোধীরা আক্রান্ত হচ্ছেন, ছাপ্পা ভোটের অভিযোগ-এ হেন একাধিক ইস্যুতে খবর-ছবি সংগ্রহ করতে গিয়ে আক্রান্ত হতে হয়েছে সংবাদমাধ্যমকে। পুরভোটের এই দফায় একাধিক জায়গায় সংবাদমাধ্যমের ওপর ‘হামলা’র অভিযোগ উঠেছে শাসকদলের বিরুদ্ধে। কেন বারংবার আক্রান্ত হতে হচ্ছে সংবাদমাধ্যমকে? কেন মার খেতে হচ্ছে গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভকে? উত্তর দেয়নি শাসকদলও।