Bhagwant Mann: রাজনীতিকদের নিয়ে মজা করতে করতেই ‘কমেডিয়ান’ হয়ে উঠলেন জন প্রতিনিধি, কে এই ভগবন্ত মান?

Bhagwant Mann: কেরিয়ারের শুরুতে ছিলেন কমেডিয়ান। রাজনীতিকদের নিয়ে তাঁর মুখে মজার কথা শুনতে পছন্দ করতেন অনেকেই। আর আজ তিনিই এক রাজনৈতিক দলের মুখ।

Bhagwant Mann: রাজনীতিকদের নিয়ে মজা করতে করতেই 'কমেডিয়ান' হয়ে উঠলেন জন প্রতিনিধি, কে এই ভগবন্ত মান?
পঞ্জাবে আপের মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী ভগবন্ত মান (অলংকরণ- অভিজিৎ বিশ্বাস )
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jan 18, 2022 | 3:53 PM

তুলনামূলকভাবে দেশের রাজনীতিতে নব্য দল আম আদমি পার্টি। পঞ্জাবে কেজরীবালের লড়াইও খুব বেশিদিনের নয়। তবে ২০১৪-র লোকসভা নির্বাচনেই আশার আলো দেখতে শুরু করেছিল আপ। অপ্রত্যাশিতভাবে পঞ্জাবের ১৩ টি লোকসভা আসনের ৪ টিতে জিতে যায় তারা। তিনটি আসন কান ঘেঁষে বেরিয়ে যায়। এরপরই আরও জোরকদমে শুরু হয় সংগঠন তৈরির কাজ। পঞ্জাবে উত্তরণের সেই শুরু। আর এবার আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে আপের লড়াই বেশ গুরুত্বপূর্ণ।

২০১৭ বিধানসভা নির্বাচনে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে কেজরীবাল কারও নাম সামনে না আনলেও, এবার তিনি ঘোষণা করেছেন ভগবন্ত মানের নাম। পঞ্জাবের রাজনীতিতে আপ যখন গুরুত্বপূর্ণ দল হিসেবে জায়গা করে নিচ্ছে, তখন কেজরীবাল যে অত্যন্ত বিচক্ষণতার সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী বাছাই করেছেন, তেমনটাই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। মনে করা হচ্ছে আপের সামনে পঞ্জাব দখলের এটাই সুবর্ণ সময়। আর এরকম সময় ভগবন্তকে কেন সামনে রাখলেন কেজরীবাল? চিরঞ্জিৎ সিং চন্নি বা নভজ্যোৎ সিং সিধুর মতো রাজনীতিকদের সঙ্গে টক্কর দিতে পারবেন মান?

নাম শুনলেই মুখে হাসি!

রাজনৈতিক জনপ্রিয়তা তো অনেকেরই রয়েছে। কিন্তু ভগবন্ত মানের সঙ্গে পঞ্জাবিদের অন্তরের সম্পর্ক। রাজনীতিতে আসার অনেক আগে থেকেই ঘরে ঘরে পরিচিতি রয়েছে এই সর্দারজির। অতি অল্প বয়স থেকেই মানুষকে হাসানো তাঁর পেশা।

ইউটিউব-এর জমানা তখনও আসেনি। ফেসবুকে ব্লগারের ভিড় ছিল না তখনও। স্ট্যান্ড আপ কমেডিয়ান হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছিলেন যাঁরা, তাঁদের মধ্যে অন্যতম ভগবন্ত। পঞ্জাবি ভাষায় একের পর এক কমেডি শো করে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন তিনি। তাঁর কমেডি যখন মানুষের কাছে পরিচিত হতে শুরু করে তখনও ক্যাসেটের জমানা চলছে।

একের পর এক কমেডি অ্যালবাম প্রকাশ করেছিলেন তিনি। এমনকি পঞ্জাবের মাঠে ট্রাক্টারে কান পাতলেও শোনা যেত মানের কমেডি অ্যালবামের ক্যাসেট বাজছে। পঞ্জাবের মানুষের ভাষায় তাঁদেরকে আনন্দ দিতেন ভগবন্ত। তাঁর কমেডির অন্যতম বিষয় ছিল রাজনীতি। রাজনৈতিক নেতাদের নিয়ে মজার কথা বলতেন তিনি। আজও পঞ্জাবের বহু মানুষের মুখে হাসি ফোটে তাঁর নাম শুনলেই। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রাজনীতি নিয়ে মজা করা সেই মানুষটিই হয়ে উঠেছেন পঞ্জাবের অন্যতম রাজনৈতিক নেতা। বহু বছরের সেই জনপ্রিয়তাকেই সম্ভবত কাজে লাগাতে চাইছেন কেজরীবাল।

কলেজের পাঠ শেষ হওয়ার আগেই শুরু অভিনয়

কলেজে পড়ার সময় কমেডি ফেস্টিভ্য়ালে অংশ নিয়ে দুটি সোনার মেডেল জেতেন তিনি। কলেজের পাঠ সম্পূর্ণ করেননি তিনি। অভিনয়কেই বেছে নেন পেশা হিসেবে। টেলিভিশনে ‘জুগনু কেন্দা হ্যায়’ নামে একটি কমেডি শো করতেন তিনি। পরে পঞ্জাবের একটি চ্য়ানেলে ‘জুগনু মস্ত মস্ত’ নামেও একটি শো করেছেন। অংশ নিয়েছিলেন ‘গ্রেট ইন্ডিয়ান লাফটার চ্যালেঞ্জে’। শুধু দেশে নয়, কানাডা ও ব্রিটেনের মাটিতেও কমেডি শো করে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন। একটি জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত ছবিতে অভিনয়ও করেন তিনি।

পঞ্জাবের মাটিতে আপকে আশা দেখিয়েছিলেন ভগবন্তই

পঞ্জাবের মাটিতে যখন প্রথম পা ফেলেছিল আপ, তখন ভগবন্ত যোগদান করেন। যদিও তাঁর রাজনৈতিক কেরিয়ার শুরু হয়েছে তার আগেই। ২০১১ সালে ভগবন্ত পিপলস পার্টি অব পঞ্জাবে যোগ দিয়েছিলেন। যোগ দেওয়ার পর বিধানসভা নির্বাচনে হেরে যান তিনি। এরপর আম আদমি পার্টি যখন পঞ্জাবের রাজনীতিতে প্রবেশ করতে শুরু করে, তখন কেজরীবালের হাত ধরেন মান। ২০১৪ লোকসভা নির্বাচনে পঞ্জাবের সাংরুর লোকসভা কেন্দ্র থেকে তাঁকে টিকিট দেয় আম আদমি পার্টি।

কংগ্রেস ও অকালি দলের মতো প্রতিপক্ষ থাকা সত্ত্বেও ২ লক্ষের বেশি ভোটে জয়ী হয়েছিলেন তিনি। সেই তখন থেকেই ভগবন্ত মানকে সামনে রেখে পঞ্জাবে আশার আলো দেখতে শুরু করে আম আদমি পার্টি। ২০১৯-এ ওই একই কেন্দ্র থেকে আপের টিকিটের জয়ী হন ভগবন্ত। তাই রাজনৈতিক মহলে আগে থেকেই কানাঘুষো শোনা যাচ্ছিল, আপ ক্ষমতায় এলে খুব স্বাভাবিকভাবেই ভগবন্ত মানকে মুখ্যমন্ত্রীর জায়গা দেওয়া হবে। আর মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে সেই নামই ঘোষণা করেছেন আপ সুপ্রিমো।

মদ্যপ অবস্থায় সংসদে! বিতর্কে জড়ান মান

এক দশকের বেশি সময় ধরে রাজনীতিতে রয়েছেন ভগবন্ত মান। একাধিকবার বিতর্কে জড়িয়েছেন তিনি। তাঁর বিরুদ্ধে মদ্যপ অবস্থায় সংসদে যাওয়ার অভিযোগ ওঠে। সেই অভিযোগের ড্যামেজ কন্ট্রোল করতে হয়েছিল তাঁকে। নিজের মাকে পাশে দাঁড় করিয়ে তিনি বলেছিলেন তাঁর স্বভাবের জন্য দলকে যাতে অস্বস্তিতে পড়তে না হয়, সেই কারণে মদ খাওয়ায় সম্পূর্ণ ছেড়ে দিচ্ছেন তিনি। অরবিন্দ কেজরীবালের সঙ্গে জনসভায় দাঁড়িয়ে তিনি স্বীকার করেছিলেন মাঝে মধ্যে মদ খাওয়ার অভ্যাস ছিল তাঁর।

শুধু তাই নয়, সংসদে দাঁড়িয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় লাইভ স্ট্রিম করেছিলেন ভগবন্ত মান। ২০১৬- তে সেই ঘটনার জেরে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে সংসদের নিরাপত্তা ক্ষুণ্ণ করার।

উল্লেখ্য, জনতার জবাবের ওপর ভিত্তি করে পঞ্জাব বিধানসভা নির্বাচনের মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে ভগবন্ত মানকে বেছে নিয়েছেন কেজরীবাল। ‘জনতা চুনেগি আপনা সিএম’ নামে এক উদ্যোগ নিয়েছিলেন তিনি। সাধারণ মানুষকে পছন্দের মুখ্যমন্ত্রীর নাম জানানোর কথা বলেছিল আপ। ২১ লক্ষ মানুষ জবাব দিয়েছেন সেখানে। আপের দাবি, ৯৭ শতাংশেরই পছন্দ ভগবন্ত মানকে। তাই মঙ্গলবার মানের নাম ঘোষণা করে কেজরী।

আরও পড়ুন: Punjab Assembly Election 2022: ৯৭ শতাংশ ভোট পেয়ে আপের মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী ভগবন্ত মান