Tripura Election Result: ত্রিপুরার মসনদে ফের বিজেপি, কোন কোন ফ্যাক্টরে জয় হাসিল পদ্ম শিবিরের

Tripura Election Result: ত্রিপুরার মসনদে ফের বিজেপি। এই নির্বাচনে মোট ৩২ টি আসন পেয়েছে ভারতীয় জনতা পার্টি।

Tripura Election Result: ত্রিপুরার মসনদে ফের বিজেপি, কোন কোন ফ্যাক্টরে জয় হাসিল পদ্ম শিবিরের
গ্রাফিক্স সৌজন্যে: অভীক দে
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Mar 03, 2023 | 12:04 AM

আগরতলা: ত্রিপুরা বিধানসভা নির্বাচনের (Tripura Assembly Election 2023) ফলাফল প্রকাশিত হল বৃহস্পতিবার। এখানে ফের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে বিজেপি (BJP)। ২৫ বছরের বামেদের লাল দুর্গ ভেঙে ত্রিপুরায় বিজেপি জয় যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০১৮ সালেই। ২৩-র বিধানসভা নির্বাচনের পর থামল না সেই জয়রথ। বরং আরও আগামী পাঁচবারের জন্য ত্রিপুরার মসনদে বসার লাইসেন্স পেল ভারতীয় জনতা পার্টি। নির্বাচন কমিশন কর্তৃক ফলাফল অনুযায়ী, ৬০ টি আসনের মধ্যে ৩২ টি আসনে জয়ী হয়েছে বিজেপি। আর একটি আসনে জয়ী হয়েছে তাদের জোটসঙ্গী আইপিএফটি। অর্থাৎ ৩৩ টি আসন নিয়ে সরকার গড়ার পথে বিজেপি জোট।

তবে এই লড়াইয়ের পথ বিজেপির জন্য খুব একটা সুগম ছিল না। বিজেপিকে মসনদ থেকে হারানোর জন্য় চিরশত্রু বাম-কংগ্রেস জোট বেঁধেছিল ত্রিপুরায়। পাশাপাশি আদিবাসী ভোট কেড়ে নেওয়ার জন্য এবারের নির্বাচনে ময়দানে নেমেছিল ত্রিপুরার রাজ পরিবারের ছেলে প্রদ্যোৎ বিক্রম মাণিক্য দেববর্মা। এই দেববর্মার উপজাতি সম্প্রদায়ের মধ্যে বেশ ভাল দখল রয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছিল। আর ত্রিপুরায় মোট ২৬ টির কাছাকাছি আদিবাসী অধ্যুষিত বিধানসভা কেন্দ্র রয়েছে। যার মধ্যে ১৩ টি আসন পেয়েছে তিপ্রা মোথা। এদিকে বাম-কংগ্রেস জোট পেয়েছে ১৪ টি আসন। এই নির্বাচনে তিপ্রা মোথা বিজেপির জয়রথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারত বলেই মনে করা হচ্ছিল। তবে আদতে এর উল্টোটাই হয়েছে। আর তৃণমূল বিজেপিকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ জানালেও এবং গত দু’বছর ধরে সেখানে নানান কর্মসূচি করলেও এই নির্বাচনে খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি। তবে যে রাজ্যে এত বছর ধরে বাম-কংগ্রেস শাসন করেছে গত ৫ বছর শাসনের পর এই গেরুয়া ঝড় নিঃসন্দেহে বিজেপির জন্য একটা বড় সাফল্য। যদিও গতবারের তুলনায় আসন সংখ্যা কমেছে বিজেপির। কমেছে ভোটের হারও। যেখানে ২০১৮-র নির্বাচনে বিজেপি ৪৩.৫৯ শতাংশ সেখানে এই নির্বাচনে বিজেপি পেয়েছে ৩৮.৯৭ শতাংশ।

বিজেপির জয়ের কারণ কী কী?

১. বাম-কংগ্রেস জোট: ত্রিপুরায় নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে মোদী-শাহ বারংবার বাম ও কংগ্রেস জমানার অরাজকতার কথা তুলে ধরেছেন ত্রিপুরাবাসীর কাছে। বামদের বিরুদ্ধে বিষোদগার করেছেন তাঁরা। চাঁদার জমানা, গুন্ডা রাজের কথা তুলে ধরে ত্রিপুরার জনগণের ভয়াবহ স্মৃতি উসকে দিয়েছেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতারা। এর লাভ পেয়েছে বিজেপিই। এছাড়া এই নির্বাচনে বিজেপিকে রাজ্য থেকে হঠাতে হাত মিলিয়েছিল বাম ও কংগ্রেস। সেই জোট জনগণ ভালভাবে নেয়নি বলেই মত রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের।

নরেন্দ্র মোদী টিলার রাজ্যে প্রচারে গিয়ে বাম-কংগ্রেস জোটকে মোদী আক্রমণ করে বলেছিলেন, “কেরলে কুস্তি, ত্রিপুরায় দোস্তি।” অমিত শাহ আবার গিয়ে বলেছিলেন, বিজেপি মানুষের কাছে গিয়ে উন্নয়নের রিপোর্ট কার্ড দিচ্ছে। আর বাম-কংগ্রেসের জোট মানুষকে বোঝাতে বোঝাতেই তাদের সময় চলে যাচ্ছে। আর এই শাপেই বর হয়েছে বিজেপির।

২. তিপ্রা মোথার ভোট কাটাকাটি: নির্বাচনের আগে তিপ্রা মোথাকে বিজেপির সরকার গঠনের পথে কাঁটা হিসেবে দেখছিল রাজনৈতিক মহল। মনে করা হচ্ছিল বিজেপির জোট সঙ্গীর থেকে আদিবাসী ভোট সবটাই কেড়ে নিতে পারে তিপ্রা মোথা। সেই আঁচ পেয়েছিল বিজেপিও। আইপিএফটি-র অবস্থা খুব একটা ভাল না বুঝতে পেরে ৬০ টি আসনের মধ্যে কেবলমাত্র ৫ টি আসন দেওয়া হয় আইপিএফটিকে। আর ৪৫ টি আসনে লড়ে বিজেপি। তার মধ্যে ৩২ টি আসন জিতেছে তারা।

তবে এই আশঙ্কা সত্যি হয়নি। রাজনীতির কারবারিরা ভোটের হিসেব ব্য়াখ্যা করে দেখিয়েছেন, তিপ্রা মোথা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায় বিজেপির জয়ের পথ সুগম হয়েছে। ত্রিপুরায় ২৪ টা আসনে বিজেপিকে জিততে সাহায্য করেছে তিপ্রা মোথার কাটা ভোট। অর্থাৎ এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি আসনে তাদের এগিয়ে দিয়েছে তিপ্রা মোথাই।

৩. বিজেপির উন্নয়নের খতিয়ান: কেন্দ্রীয় নেতারা ত্রিপুরায় প্রচারে এসে তাদের ৫ বছরের সরকারের উন্নয়নের খতিয়ান তুলে ধরেছে জনগণের সামনে। কার্যত তারা ৫ বছরের রিপোর্ট কার্ড খুলে দিয়েছে ত্রিপুরাবাসীর সামনে। যেমনটা বাংলায় ২১-র বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল করেছিল। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা, আয়ুষ্মান ভারত, ডিজিটাল ইন্ডিয়া সহ একাধিক উন্নয়নমূলক প্রকল্প ছাড়াও আগামীর জন্য ভিন্ন ভিন্ন প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বিজেপি। ত্রিপুরাকে উত্তর-পূর্বের করিডর করে সেখানে ব্যবসা-বাণিজ্যের সুবিধা দেওয়ার সঙ্কল্প করেছে বিজেপি। এই উন্নয়নে ভরসা করেও অনেকে ভোট দিয়েছেন বলে মনে করছে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ।

৪. প্রতিষ্ঠান বিরোধী হাওয়াকে রুখে দেওয়া: বরাবরই প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে নজর দিয়েছে বিজেপি। এই কারণে অতীতেও উত্তরাখণ্ড, গুজরাটে নির্বাচনের আগে মুখ্যমন্ত্রী বদল করেছিল বিজেপি। এর ফলে প্রতিষ্ঠান বিরোধী হাওয়াকে রুখে দিতে সক্ষম হয় পদ্ম শিবির। ত্রিপুরার ক্ষেত্রেও তেমনটাই ঘটেছে। উত্তর -পূর্বের এই রাজ্যে গত বছর জুন মাসে মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে বিপ্লব কুমার দেবকে সরিয়ে ডাঃ মানিক সাহাকে মুখ্যমন্ত্রী পদে বসায় বিজেপি। এর ফলে প্রতিষ্ঠান বিরোধী হাওয়া দমিয়ে দেওয়া গিয়েছে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। যার ফল পড়েছে বিজেপির ভোটবাক্সে।

৫. সুনীল দেওধরের জনসংযোগ: ২০১৮ সালে লাল দুর্গে ফাটল ধরিয়ে পদ্মফুল ফুটিয়েছিল বিজেপি। আর সেই অসম্ভবকে সম্ভব করার নেপথ্যে ছিলেন অধুনা ত্রিপুরায় বিজেপির ভারপ্রাপ্ত নেতা সুনীল দেওধর। তিনি বুথে বুথে গিয়ে জনসংযোগ কর্মসূচি করেছিলেন। ১৮-র নির্বাচনের আগে এক সময় তিনি বলেছিলেন, “সিপিএম-কে হারাতে গেলে বুথ জিততে হবে। আমি সেই চেষ্টাই করছি।” যেরকম বলা সেরকম কাজ। এক প্রকার সেখানে মাটি কামড়ে পড়েছিলেন তিনি। আর তার ফলনও পেয়েছিলেন। দীর্ঘ ২৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটিয়ে সেখানে জেতে বিজেপি। তবে এই নির্বাচনে সুনীল দেওধরকে দেখা যায়নি টিলার রাজ্যে। তবে তাঁর পূর্ব জনসংযোগের ফলাফল এই নির্বাচনেও বিজেপি পেয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।