নন্দীগ্রাম: বিধানসভা নির্বাচনে কার্যত এ বার সবার নজর নন্দীগ্রামের দিকে। তৃণমূল জিতলে যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী হবেন, এ কথা মোটামুটি স্পষ্ট। আর বিজেপি জয়ী হলে শুভেন্দু যে মুখ্যমন্ত্রী হতে পারেন সেই জল্পনাও ঘোরাফেরা করছে রাজনৈতিক মহলে। সুতরাং শুধু ক্ষমতায় কোন দল আসবে সেটাই নয়, মুখ্যমন্ত্রীও নির্বাচিত করতে পারে নন্দীগ্রামই। আর সেই নন্দীগ্রামের সভায় দাঁড়িয়ে মমতার মূল প্রতিপক্ষ শুভেন্দুকে একের পর এক তোপ দাগলেন অভিষেক। শিবির বদলের পর থেকে শুভেন্দু একের পর এক সভায় ‘তোলাবাজ ভাইপো’ বলে কটাক্ষ করেছেন শুভেন্দু। আর প্রথমবার নন্দীগ্রামে গিয়ে সেই শুভেন্দুকে ‘ফোর-টোয়েন্টি অধিকারী’ বলে কটাক্ষ করলেন অভিষেক। একের পর এক জবাব দিলেন এক সময়ের সহযোদ্ধা শুভেন্দুকে। তাঁকে জবাব দিতে গিয়ে এ দিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর একটি চিঠিও তুলে ধরেন ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ।
নন্দীগ্রামের সভা থেকে অভিষেকের দাবি, এটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে মুখ্যমন্ত্রী করা বা তৃতীয়বার ক্ষমতায় আনার লড়াই নয়, নন্দীগ্রামের মাটিকে যারা কলুষিত করেছে তাদের জবাব দেওয়ার সময়। দিন কয়েক আগে এই নন্দীগ্রামে ভোটারের সংখ্যার হিসেব দেন বিজেপি প্রার্থী শুভেন্দু। তিনি বলেছিলেন, “৬২ হাজারের ওপর ভরসা করে ভোটে দাঁড়িয়েছেন মমতা। কিন্তু বিজেপির দিকে রয়েছেন ২ লক্ষ ১৩ হাজারের সমর্থন।” আর শুভেন্দুর এই হিসেবকে কটাক্ষ করে অভিষেক বলেন, “সংখ্যার বিচারে মানুষকে ভাগ করা হচ্ছে। মানুষকে যদি সংখ্যা দিয়ে বিচার করা হয় তাহলে কারও নাম হত ২ লক্ষ ১৩ হাজার আর কারও নাম হত ৬২ হাজার। আর নিজের নাম হত ফোর-টোয়েন্টি অধিকারী।” শুভেন্দু বলেছিলেন “কার ভরসায় ভোটে লড়বেন মমতা।” অভিষেকের জবাব, “কন্যাশ্রী-যুবশ্রীর ভরসায় ভোটে লড়বেন মমতা।”
নন্দীগ্রামে প্রচার গিয়ে পাকিস্তান প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন বিজেপি প্রার্থী শুভেন্দু। বলেছিলেন, “যারা পাকিস্তান জিতলে বোমা ফাটায় তারাই তৃণমূল।” আর এই প্রসঙ্গে জবাব দিতেই এ দিন মোদীর চিঠির কপি সভা থেকে তুলে ধরেন অভিষেক। সম্প্রতি পাকিস্তান ডে উপলক্ষে পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে চিঠি লিখেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মোদী লিখেছেন প্রতিবেশী হিসেবে পাকিস্তানের মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখতে চায় ভারত। সেই চিঠির কথাই এ দিন উল্লেখ করেন অভিষেক। মঞ্চ থেকে উপস্থিত সমর্থকদের সামনে চিঠি দেখিয়ে তাঁর দাবি, এক দিকে যখন নন্দীগ্রামে ভারত-পাকিস্তানের কথা বলা হচ্ছে, অন্য দিকে তখন পাকিস্তানকে প্রেমপত্র লিখছেন মোদী। অভিষেকের বার্তা, “যারা আমাদের সেনাদের মারল, তাদের সঙ্গে সহযোগিতা!এই দ্বিচারিতা আপনারা মানবেন?”
আরও পড়ুন: ‘টাকা লুকনোর জন্য বিজেপিতে! যাও, গেট আউট’, শুভেন্দুকে তোপ মমতার
আগামী ১ এপ্রিল নন্দীগ্রামে নির্বাচন। বিজেপিকে এপ্রিল ফুল করে জোড়া ফুলে ভোট দেওয়ার বার্তা দেন তৃণমূল সাংসদ। কেন নন্দীগ্রাম থেকে মমতার লড়াই সেই ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে অভিষেক বলেন, ২০১১-তে ক্ষমতায় আসার ক্ষেত্রে যে নন্দীগ্রামের ভূমিকা রয়েছে, তাদের সম্মান দেওয়ার জন্যই এমন সিদ্ধান্ত। আপনারা প্রথমবার নন্দীগ্রাম থেকে মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত করবেন। তাঁর দাবি, বুথে বুথে বিশ্বাসঘাতক জমানত জব্দ হবে। গোটা পূর্ব মেদিনীপুর জেলা জুড়ে বিজেপি হারবে বলেও দাবি তাঁর। শুভেন্দুকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে অভিষেক বলেন, ১০ বছরের রিপোর্ট কার্ড নিয়ে আসুন। এক দিকে আপনি, আর এক দিকে আমি। আপনাকে যদি ১০-০ গোলে না হারাতে পারি, তাহলে রাজনীতির ময়দানে পা রাখব না।