‘নন্দীগ্রামের মতো এটাও গণহত্যা, একটু মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিল না’, ‘জেদ’ দেখালেন মমতা

তিনি নিজের নির্বাচনী প্রচার থেকে যে টাকা বাঁচবে তাও তুলে দেবেন নিহতদের পরিবারের হাতে।

'নন্দীগ্রামের মতো এটাও গণহত্যা, একটু মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিল না', 'জেদ' দেখালেন মমতা
ছবি- ফেসবুক
Follow Us:
| Updated on: Apr 11, 2021 | 11:48 AM

শিলিগুড়ি: পূর্ববর্তী ৩ দফায় বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ হয়েছিল। কিন্তু চতুর্থ দফা যেন রক্তে রক্তময়। ভোটের বলি ৫ জন। কেন্দ্রীয় বাহিনী ‘আত্মরক্ষার’ জন্য গুলি চালায় কোচবিহারের শীতলকুচিতে (Shitalkuchi)। সেখানেই মৃত্যু হয় ৪ জনের। যা নিয়ে গোটা বাংলা শোকস্তব্ধ। পাশাপাশি শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতরও। বিজেপি সম্পূর্ণ ঘটনার জন্য দায়ী করছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) উস্কানিকে। পাল্টা তৃণমূল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করে বিজেপিকে দুষছে। এরই মধ্যে শিলিগুড়িতে সাংবাদিক বৈঠক করে ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় ‘কালা দিবস’ পালন করার কথা বলেন মমতা। সাংবাদিক বৈঠকে সরাসরি বিজেপিকে নিশানা করলেন তিনি। পাশাপাশি ভিডিয়ো কলে নিহতদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে বললেন, “এটা আমার জেদ।” পরবর্তী ৭২ ঘণ্টা শীতলকুচিতে কোনও রাজনীতিক প্রবেশ করতে পারবেন না। মমতাও বুঝিয়ে দিলেন এ ভাবে তাঁকে আটকানো যাবে না। তিনি ১৪ তারিখ শীতলকুচি যাবেন। আর সরকার যা টাকা দেওয়ার তো দেবেই, তিনি নিজের নির্বাচনী প্রচার থেকে যে টাকা বাঁচবে তাও তুলে দেবেন নিহতদের পরিবারের হাতে।

চতুর্থ দফার ভোটে সারাদিন সংবাদ শিরোনামে ছিল শীতলকুচি। সেখানে ভোটের লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা ভোটারদের ওপর গুলি চালিয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনী, এমনটাই তৃণমূলের অভিযোগ। কমিশন অবশ্য জানিয়েছে ৩০০-৪০০ গ্রামবাসী অস্ত্র নিয়ে তেড়ে এলে আত্মরক্ষার জন্য গুলি ছোড়ে কেন্দ্রীয় বাহিনী। আর এখানেই বিজেপি হাতিয়ার করেছে মমতার ‘কেন্দ্রীয় বাহিনীকে ঘেরাও করার’ নিদানকে। ৫ জনের মৃত্যু পর রাতে নির্বাচন কমিশন নির্দেশ দেয়, পরবর্তী ৭২ ঘণ্টা শীতলকুচিতে কোনও রাজনীতিবিদ প্রবেশ করতে পারবেন না এবং পঞ্চম দফা থেকে প্রচার শেষ করতে হবে নির্বাচনের ৭২ ঘণ্টা আগে।

এ বিষয়ে মমতার কড়া প্রতিক্রিয়া, “কোড অব কনডাক্ট এখন বিজেপির কোড অব কনডাক্ট হয়ে গিয়েছে। নির্বাচন কমিশন যা করছে নজিরবিহীন। আমাকে যেত দেওয়া হল না শীতলকুচি। একটু দেখা করতে যাব বলে যেতে চেয়েছিলাম ৭২ ঘণ্টা আটকে দিল।”  তবে দেখা তিনি করবেনই। সাফ জানালেন, ১৪ তারিখ  শীতলকুচি যাবেন। সঙ্গে সঙ্গে সেখান থেকেই ভিডিয়ো কলে কথা বলেন নিহতদের পরিবারের সঙ্গে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এটা জেনোসাইড। গুলি করতে হলে কোমরের নীচে করতে হয়, প্রত্যেকটা গুলি গলায় বা বুকে লেগেছে। গুলি স্প্রে করেছে। এরা মিষ্টি মুখে খুন করতে পারে, রসগোল্লা খেতে খেতেও।” কোচবিহারের এসপি গতকাল কার্যত ক্লিনচিট দিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় বাহিনীকে। তিনি জানিয়েছিলেন, কেন্দ্রীয় বাহিনী আত্মরক্ষার জন্য গুলি চালিয়েছে। সে বিষয়ে মমতার দাবি, এসপিকে বিজেপি বসিয়েছে তাই তাঁর এমন বয়ান।

ভিডিয়ো কলে নিহতদের সঙ্গে কথা বলে মমতা জানান, যাঁরা মারা গিয়েছেন তাঁদের মধ্যে পেশায় রাজমিস্ত্রি ব্যক্তি রয়েছেন। আবার কেউ রয়েছেন, যাঁর স্ত্রী অন্তসত্ত্বা। ঘরে শিশু রয়েছে। সমবেদনার সুরে মমতা বলেন, “যেখানে নির্বাচন শেষ সেখানে কেন আমি যেতে পারব না। একটু গিয়ে সমবেদনা প্রকাশ করতে পারব না। আমি যদি সামনে গিয়ে একটু মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে পারতাম, একটু বাচ্চাকে কোলে তুলে নিতে পারতাম, তাহলে অসুবিধা কী? এ ভাবে কী আটকানো যায়? যে ভাবে নন্দীগ্রাম জেনোসাইড হয়েছিল, এটাও জেনোসাইড।” ছবি দেখিয়ে মমতা জানান, এই ছবি তিনি দেখতে পারবেন না। গতকাল রাতে বারবার এই রক্তাক্ত ছবি তাঁর মাথায় ঘুরেছে, মনে হয়েছে তাঁকেই যেন গুলি স্প্রে করা হয়েছে। তিনি নির্বাচনী প্রচারে গিয়েই ‘কালা দিবস’ পালন করবেন, মোমবাতি জ্বালাবেন।

আরও পড়ুন: ‘বন্দুক ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছিল, ৩০০ জন ঘিরে ধরে, তারপরই চলে গুলি,’ ব্যাখ্যা পুলিশ সুপারের