এক দিকে শুভেন্দুর গড় থেকে বার্তা দিয়ে গেলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বললেন “২ মে দিদি যাচ্ছে।” অন্য দিকে, বুধবারই বাঁকুড়ায় পরপর তিনটি সভা থেকে বার্তা দেবেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিষ্ণুপুরে প্রথম সভা থেকেই মমতার বার্তা শুভেন্দুকে। নন্দীগ্রামে তাঁর প্রতিপক্ষ শুভেন্দু অধিকারীকে প্রায় প্রত্যেকটি সভা থেকেই তোপ দাগছেন মমতা। এবার ফের একবার বললেন, ‘আমার দলের দু-একটা গদ্দার বিজেপিতে গিয়েছে। তারা অনেক টাকা করেছে। সেই টাকা লুকনোর জন্য ভাবছে বিজেপিকে ভাগ দিতে হবে। বেরিয়ে যাও, গেট আউট। চোরেদের দরকার নেই আমরা ভাল লোক নিয়ে কাজ করব।’
সভা থেকে আর কী বার্তা দিলেন মমতা, একনজরে:
একাধিক প্রচার সভা থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, বিজেপি ভোটের জন্য টাকা বিলোচ্ছে। তিনি আগেও বলেছেন চাকা দিলে নিতে পারেন, কারণ ওটা মানুষের টাকা। বাঁকুড়ার ওন্দার সভা থেকে মমতা বললেন, ‘বিজেপি অন্ধকারে টাকা ছড়াচ্ছে, এটা যদি ধরিয়ে দিতে পারেন তাহলে একটা পুরস্কার, একটা চাকরি।’ তিনি আরও বলেন, ‘মনে রাখবেন ওই টাকা বিজেপির নয়। ওটা রেল বিক্রির টাকা, বিএসএনএল বিক্রির টাকা, পিএম কেয়ারের টাকা।’ সম্প্রতি বিজেপি দাবি করেছে, বাংলার সরকার গঠনের পর প্রথম মন্ত্রিসভার বৈঠকেই সরকারি বেতনভূকদের জন্য সপ্তম বেতন কমিশন গঠন করা হবে। সেই প্রসঙ্গ টেনে মমতা ত্রিপুরার বিজেপি সরকারের উদাহরণ টেনে বলেন, ত্রিপুরায় কোনও প্রতিশ্রুতিও রাখা হয়নি। গ্রুপ ডি পদেরও বেসরকারিকরণ হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
বিষ্ণুপুর থেকে ফের একবার বহিরাগত ইস্যুতে তোপ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। বহিরাগত কাদের বলা হয়, সেই ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলায় যারা থাকে, তাদের আমরা বহিরাগত বলি না। সে রাজস্থানী হোক, পাঞ্জাবী হোক, মাড়োয়ারি হোক।’ তৃণমূল নেত্রীর দাবি, ‘উত্তপ্রদেশ থেকে গুণ্ডা পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কপালে তিলক, পরণে গেরুয়া পোশাক আর পানবাহার চিবোতে চিবোতে বাংলার সংস্কৃতিকে ধ্বংস করছে।’
ফের আদানি গোষ্ঠীর নাম উল্লেখ করে নরেন্দ্র মোদীকে তোপ দাগলেন মমতা। তিনি বলেন, ‘নরেন্দ্র মোদীর তিনটি সিন্ডিকেট। একটা নরেন্দ্র মোদী, একটা অমিত শাহ ও একটা আদানি।’ মমতার দাবি, সব চাষের জমি নিয়ে যাবে আদানি, শুধু নরেন্দ্র মোদী খাবে, অমিত শাহ খাবে আর আদানি খাবে। বাকি দেশের মানুষ কেঁদে কেঁদে বেড়াবে।
প্রচারে প্রত্যেক সভা থেকে ভোট মেশিন পাহারা দেওয়ার কথা বলছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ দিন বিষ্ণুপুরের সভা থেকেও একই বার্তা দিলেন তিনি। ভোটারদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘ভোট মেশিনে বিজেপির ভুয়ো ভোট ঢুকে থাকতে পারে। তাই মেশিন দু’বার অন করতে হবে, দু’বার বন্ধ করতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ভোটারদের সমস্যায় ফেলার জন্য মেশিন খারাপ করে দেওয়া হতে পারে। মা-বোনেরা ফিরে যাবেন না। অপেক্ষা করবেন। এ দিনও তিনি মেশিন পাহারা দেওয়ার কথা বলেন। আরও একবার সাবধান করে বলেন, ‘কেউ বিরিয়ানি খাবেন না, চা দিলে খাবেন না। ওতে বিষ মিশিয়ে দিতে পারে। বাড়িতে মায়ের মোটা ভাত খাবেন।’
জঙ্গলমহল ভাল আছে। ক্ষমতায় আসার পর থেকে বারবার একথা প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন মমতা। বিভিন্ন সময় এমন দাবি করেছেন। একুশের ভোটের আগে ফের একবার সেই বার্তা দিলেন মমতা। বিষ্ণুপুরের সভা থেকে বললেন, ‘জঙ্গলমহল ভাল আছে। ‘জঙ্গলমহলে কেউ মারা গিয়েছে বলুন তো? কেউ খুন হয়েছে বলুন তো? পাহাড়ে গণ্ডগোল বন্ধ করে দিয়েছি, জঙ্গলমহলেও গণ্ডগোল বন্ধ করে দিয়েছি। ৪০ হাজার পুলিশকে চাকরি দিয়েছি, যাতে ভাই-বোনেরা ভালো থাকে। মাওবাদীদেরও স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে চাকরি দিয়েছি, আগামিদিনে আরও দেব।’
ত্রিপুরার প্রসঙ্গ তুলে বিজেপিকো তোপ দাগলেন মমতা। বললেন, ত্রিপুরায় কী করেছ, গ্র্যাচুইটি বন্ধ করে দিয়েছ। ১০ হাজার শিক্ষককে স্থায়ী করবে বলেছিলে, তাদের তাড়িয়ে দিয়েছ। এই ভাষাতেই ত্রিপুরার বিপ্লব দেব নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকারের উদাহরণ টানলেন তিনি। তাঁর দাবি, এ সব করা সত্ত্বেও ভয়ে কেই প্রতিবাদ করতে পারছেন না।
আমরা যদি খাবার বিনা পয়সায় দিতে পারি তাহলে গ্যাসও বিনামূল্যে দিতে হবে। বিষ্ণুপুরের সভা থেকে কেন্দ্রকে বার্তা দিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ক্ষমতায় এলে রেশন বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হবে, ফের একবার আশ্বাস দিলেন নেত্রী। বললেন, আমাকে ভোট দিন, ‘তবেই আমি বিনামূল্যে খাবার দিতে পারব।’ মা-বোনেরা কাজ করে যান অথচ তাঁদের হাতে কোনও টাকা থাকে না। তাই তৃণমূল সরকার গঠন করলে মা-বোনেরা ৫০০ টাকা করে পাবেন বলে উল্লেখ করলেন মমতা।