নন্দীগ্রাম: প্রথম থেকেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) বলে আসছিলেন নন্দীগ্রামে তাঁর পায়ের চোট আসলে বড় চক্রান্ত। ইচ্ছা করে ভিড় বাড়িয়ে দুষ্কৃতীরা তাঁর গাড়ির দরজা ঠেলে দিয়েছিল। তাতেই ভোটের মুখে ৪৮ ঘণ্টা হাসপাতালে পড়ে থাকতে হয়েছে তৃণমূল সুপ্রিমোকে। তবে এতদিন সরাসরি কারও নাম করেননি এ ইস্যুতে। সোমবার ভোটপ্রচারে নারায়ণচকে গিয়ে এ নিয়ে বেলাগাম নিশানা সাধলেন শুভেন্দু অধিকারীর দিকে। স্পষ্ট বললেন, “ইলেকশনের সময় তুই আমার পা জখম করেছিস।”
মঙ্গলবার দ্বিতীয় দফার ভোটের শেষ প্রচার। সোমবার মুখ্যমন্ত্রীর তিনটি জনসভা ছিল নন্দীগ্রামে। ঠাকুরচকের পর নারায়ণচক এবং শেষে আমদাবাদ। তিন সভা থেকেই মমতার তোপের অভিমুখ ছিলেন শুভেন্দু। মীরজাফর, গদ্দার, দালাল, হরিদাস, রাবণ, দানব-কোনও উপমাই বাদ দেননি। এদিন মমতা বলেন, তিনি বাংলার মুখ্যমন্ত্রী অথচ তাঁকেই নন্দীগ্রামে বাইরের বলা হচ্ছে। এরপরই সরাসরি শুভেন্দুকে আক্রমণ করে মমতা বলেন, “আমি বাংলার মুখ্যমন্ত্রী, আমি বাইরের মেয়ে? আর তুই ব্যাটা হরিদাস কাঁথির ছেলে কী করে বেড়াস, তুই নন্দীগ্রামের ছেলে হলি কবে? তুই কবে হলি নন্দীগ্রামের ভূমিপুত্র ভাই। তোর তো এটা ভূমিও নয়, জমিও নয়। তুই তো দালালি করে গিয়েছিস। সিপিএমের সময় সিপিএমের সঙ্গে দালালি করেছিস, বিজেপির সঙ্গে দালালি করেছিস, কী দিইনি। বড় বড় কথা। লঞ্চ, পেট্রোল পাম্প থেকে শুরু কী নেই। তবে মনুষ্যত্বটা একেবারে নেই।”
মমতার দাবি, তিনি অধিকারী, বিশেষ করে শুভেন্দুকে কী দেননি। ‘আমিই বুঝতে পারিনি’, বলতে বলতে মমতার সংযোজন, “যে ছেলেটাকে আমি ইরিগেশন মিনিস্ট্রি দিয়েছি, আমি এনভায়রনমেন্ট মিনিস্ট্রি দিয়েছি, আমি ট্রান্সপোর্ট মিনিস্ট্রি দিয়েছি, ভাইকে কাঁথি মিউনিসিপ্যালিটির চেয়ারম্যান করেছি, একাধিক ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান। একজনের ১০টা পোস্ট। এত কিছুর পর এখন অনেক টাকা হয়ে গিয়েছে। এখন বিজেপি ধরছে। ওরা তো বলছে, হয় বিজেপি কর, না হলে গলায় দড়ি দিয়ে মরো। তো দেখল কী আর হবে, টাকা তো বাঁচাতে হবে। এখন টাকা চাই টাকা, তাই বিজেপি বড় বন্ধু হয়েছে।”
এমনকী নন্দীগ্রামে পায়ে চোটের জন্যও শুভেন্দুকেই দোষী ঠাওরে মমতা বলেন, “আমাকে তোরা চোট করেছিস, আমি কিছু বলিনি ভদ্রতা করে। আমার পা ভাঙা, হুইল চেয়ারে মিটিং করতে হচ্ছে, ইলেকশনের সময় তুই আমার পা জখম করিয়েছিস। তোমার নির্দেশ ছাড়া এ জিনিস হতে পারে না। কোনও নন্দীগ্রামের লোক করেনি, বহিরাগত গুন্ডাদের দিয়ে করেছো তুমি।”
আরও পড়ুন: নন্দীগ্রাম জমি আন্দোলনে ছিলেনই না শুভেন্দু, বিস্ফোরক দাবি মমতার
ভোট চুরির জন্য স্থানীয় আইটিআই-এ বিহার, উত্তর প্রদেশের গুন্ডা লুকিয়ে রাখা হয়েছে, এদিন অভিযোগ করেন মমতা। এরপরই চ্যালেঞ্জের সুরে বলেন, “একটা ভোট লুঠে দেখো! আপনারা কি ভয়ে গুটিয়ে যাচ্ছেন? আমি এটা আশা করি না নন্দীগ্রামের মানুষের কাছে। আমি জানি নন্দীগ্রাম জ্বলে ওঠে। এক পা চোট করে দিয়েছিল আমার, যাতে নন্দীগ্রামে আসতে না পারি। অত সোজা না। ভেবেছিল ঘরে ঢুকিয়ে দাও। ওদের টার্গেট মমতাকে মেরে ফেল। আমি রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার। অত সোজা না আমাকে মারা।”
এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, নন্দীগ্রামের জমি আন্দোলনের সময় ‘যে নব সামন্তর বাড়ি থেকে গুলি চলেছিল, সে এখন গদ্দারের ডান হাত। সোনাচূড়ার দায়িত্ব দিয়েছে। আমি যাকে এতদিন দুধ কলা দিয়ে পুষেছি, সে গদ্দার এখন বলছে হিন্দু-মুসলমান আলাদা করে দাও। আজ ভোটের আগে হঠাৎ জাম্বুবান হয়ে গেলে। ভয় দেখাচ্ছে। চুরির টাকায়গুন্ডা পুষছে, বাইক কিনে দিয়েছে ওদের। ও ক্ষমতায় আছে বলে অমিত শাহ দেখাচ্ছে। আরে কাল তোর কোমরটা প্রথমে ভাঙবে। কই নন্দীগ্রামে এত লোকের নামে কেস হল সুফিয়ান, তাহেরের নামে কেস, আবদুর সামাদের নামে কেস উনি যদি সেদিন ঘটনা না জানতেন ওনার নামে কেস নেই কেন। এসব বলে আমাকে লাভ নেই।”