মেদিনীপুর: অন্যান্য রাজ্যে উন্নয়নের সিঙ্গল উইনডো। এ রাজ্যে সিঙ্গল উইনডো হল ভাইপো উইনডো। তা ছাড়া আর কিছুই চলে না। শনিবার খড়গপুরে নির্বাচনী জনসভা থেকে এভাবেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কটাক্ষ করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (Narendra Modi)। একইসঙ্গে বাম-কংগ্রেস-তৃণমূলকে এক যোগে বিঁধে মোদীর তোপ, প্রায় পাঁচ দশক ধরে বাংলার মানুষকে সর্বক্ষেত্রে বঞ্চনার শিকার হতে হয়েছে। অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে গরীবের। গত ১০ বছরে মানুষকে বঞ্চনা করে এখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল ভোটের ইস্তাহার ১০ অঙ্গীকার করছে।
খড়গপুর সদরের বিজেপি প্রার্থী হিরণ চট্টোপাধ্যায়ের সমর্থনে এ দিন সভা করেন নরেন্দ্র মোদী। সভার শুরুতেই দিলীপ ঘোষের প্রশংসায় পঞ্চমুখ নমো বলেন, “দিলীপ ঘোষের মতো নেতা বিজেপিতে রয়েছেন, এটা সত্যিই সৌভাগ্যের। ওনার ওপর এতবার হামলা হয়েছে, প্রাণ নেওয়ার চেষ্টা হয়েছে, কিন্তু উনি পিছু হঠেননি। দিদির ধমকানিতে দিলীপ ভাঙেননি। চোখে চোখ রেখে লড়াই করে গিয়েছেন।” এই সাহসিকতাই বাংলায় বিজেপির বীজকে ধীরে ধীরে মহীরূহ করে তুলছে বলে দাবি প্রধানমন্ত্রীর।
এ দিন ভোট প্রচারে এসে মোদীর আর্তি, তাঁদের যেন পাঁচ বছর সময় দেওয়া হয়। মানুষের আশীর্বাদের জোরে, গত ৭০ বছরে বাংলার যে ক্ষতি হয়েছে তা তাঁরা পূরণ করে দেবেন বলেই প্রতিশ্রুতি দেন মোদী। মোদীর কথায়, “দিদির পার্টি হচ্ছে নির্মমতার পাঠশালা। এ পাঠশালায় তোলাবাজি, কাটমানি, সিন্ডিকেটবাজি হল সিলেবাস। অরাজকতার প্রশিক্ষণ চলে এখানে।”
এ দিন মোদী বলেন, গোটা দেশ রাষ্ট্রীয় শিক্ষানীতি নিয়ে যখন প্রশংসা করছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার এর বিরোধিতা করছেন। মোদীর যুক্তি, মমতা ভয় পান পাছে লোকে প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা করে ফেলেন। নমো বলেন, “গোটা দেশে রাষ্ট্রীয় শিক্ষানীতির প্রশংসা হচ্ছে। সময়োপযোগী শিক্ষাই এর লক্ষ্য। অনেক নতুনত্ব রয়েছে তাতে। স্থানীয় ভাষায় পড়াশোনা এর অন্যতম ভিত্তি। গ্রামের ছেলে মেয়েরাও ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হোক, সে লক্ষ্যেই এই নীতি আনা হয়েছে। কিন্তু দিদির সরকার নতুন রাষ্ট্রীয় শিক্ষানীতি কার্যকর করতে দিচ্ছে না। এ রাজ্যের ছেলে মেয়েদের ভবিষ্যৎ নিয়ে দিদির আসলে কোনও চিন্তা নেই।” তবে ২ মে’র পর এ ছবিতে বদল আসবে বলে আত্মবিশ্বাসী প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমি ভরসা দিচ্ছি, দিদিকে আর বাংলার যুবাদের ভবিষ্যতের সঙ্গে খেলতে দেব না। দিদি যতই বলুন খেলা হবে, গোটা বাংলা বলছে খেলা শেষ হবে। বিকাশ আরম্ভ হবে।”
শুক্রবারই রাতের দিকে বেশ কিছুক্ষণের জন্য স্তব্ধ হয়ে যায় হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামের পরিষেবা। রীতিমতো হইচই পড়ে যায় দেশজুড়ে। খড়গপুরে এ প্রসঙ্গ তুলে মোদী বলেন, “৫০-৫৫ মিনিটের জন্য হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ডাউন ছিল। মানুষ চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলেন। বাংলায় তো ৫০-৫৫ বছর ধরে বিকাশ, বিশ্বাস, স্বপ্নই ডাউন। প্রথমে কংগ্রেস, তারপর বামেরা, এখন তৃণমূল বাংলাকে পিছিয়ে রেখেছে। সবার অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে।”
নরেন্দ্র মোদীর অভিযোগ, গত দশ বছরে বাংলার মানুষ তৃণমূল সরকারের কাছ থেকে কিছুই পায়নি। তাঁর কথায়, “দিদি আপনাদের দুর্নীতি দিয়েছে, বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। আপনাদের স্বপ্নকে ভেঙেছেন। ১০ বছরে বাংলার ক্ষতি করেছেন। আপনাকে মানুষ ১০ বছর দিল, আপনি তাদের ১০ বছরের ভ্রষ্টাচার, কুশাসন দিলেন। এখানে কেন্দুপাতা বেচতে গেলেও কাটমানি দিতে হয়। বাংলায় এই কাটমানি বন্ধ হওয়া দরকার। মমতার সরকারের বিদায়ই তা বন্ধ করতে পারে।” এ দিন অবৈধ খনন নিয়েও সরব হন প্রধানমন্ত্রী। সুবর্ণরেখা, কংসাবতী নদীতে বেআইনি খনন নিয়ে তিনি বলেন, এ জাল কত দূর ছড়িয়েছে সাধারণ মানুষ জানেন। বিজেপি ক্ষমতায় এলে সব তদন্ত হবে।
গত পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূল মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার লুঠ করেছে বলে এ দিন অভিযোগ তোলেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, “বাংলায় মমতা দিদি ভোটের অধিকার লুঠ করেন। পঞ্চায়েত ভোটে আপনাদের অধিকার কেড়েছে, গোটা দুনিয়া দেখেছে।” প্রধানমন্ত্রী বার্তা, “পুলিশ প্রশাসনকে মাথায় রাখতে হবে সংবিধান রক্ষার থেকে বড় কিছু নেই। আগের ভোটে তৃণমূল যা করেছে, এ বার তা হবে না। আপনারা আশ্বস্ত থাকুন, একসঙ্গে রুখে দাঁড়ান, নির্ভয়ে ভোট দিন। এবার ভয় নয়, শুধুই জয়। মানুষের জয়। ডবল ইঞ্জিন সরকার আসবেই।”