৫টি তরতাজা প্রাণ, দুধের শিশুর জন্য মায়ের বুকভাঙা কান্না, শীতলকুচির ঘটনায় জবাব দেবে কে?

ভোট দিতে এসে সন্তান কেড়ে নেওয়ার ঘটনা সম্পর্কে ওই মহিলা বলেছিলেন, “আমি সবেমাত্র ভোট দিতে গিয়েছিলাম। বুথের ভিতর ঢুকেছি। বোতামও টিপি নি দাদা। হঠাৎ মারপিট বুথের ভিতর। আমার চুলের মুঠি ধরে মারা হল। বুক থেকে বাচ্চাটাকে কেড়ে নিল।"

৫টি তরতাজা প্রাণ, দুধের শিশুর জন্য মায়ের বুকভাঙা কান্না, শীতলকুচির ঘটনায় জবাব দেবে কে?
মৃত্যু-মায়ের কান্না, এই ঘটনাগুলির জন্য দায়ী কে?
Follow Us:
| Updated on: Apr 11, 2021 | 11:05 AM

জ্যোতির্ময় রায়: চতুর্থ দফার ভোটে রক্তাক্ত হল বাংলা, কলঙ্কিত হল গণতন্ত্র। ভোটের মাঝেই রাজনৈতিক হিংসায় প্রাণ হারালেন ৫ জন। সকাল থেকেই দফায় দফায় সংঘর্ষে উত্তপ্ত হয়ে ওঠা শীতলকুচিতে কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুলিতে ৪ জন প্রাণ হারান। জীবনে প্রথমবার ভোট দিতে এসে প্রাণ হারায় ১৮ বছরের এক যুবক। বিশৃঙ্খলার কারণে ১২৬ নম্বর বুথের ভোটগ্রহণ পর্ব বন্ধ করে দেওয়া হয়।

শুধু তাই নয়, শীতলকুচিতে ভোট দিতে গিয়ে একজন মায়ের বুক থেকে ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে তাঁর দুধের শিশুকে। নিখোঁজ তাঁর এক আত্মীয়ও। সেই মায়ের কাতর আর্তি, “আমি কোন সরকার চাইনা, আমার সন্তান কে তোমরা ফিরিয়ে দাও” হয়তো সহজে ভোলা যাবে না।

ইতিমধ্যেই সংঘর্ষ ও মৃত্যুর ঘটনার জেরে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ(Amit Shah)-র ইস্তফার দাবি করেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee)। তিনি বলেন, “আজকের ঘটনার জন্য দায়ী অমিত শাহ। উনিই ষড়যন্ত্রকারী। কেন্দ্রীয় বাহিনীকে দায়ী করব না। তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশে চলে। নির্বাচন কমিশনের কথায় চললেও ওরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের অধীনে। এখানে অঘোষিত ৩৫৬ জারি করা হয়েছে”। প্রত্তুত্তরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi) বলেছেন, “দিদি, সমস্যা কেন্দ্রীয় বাহিনীকে নিয়ে নয়, সমস্যা আপনার হিংসার রাজনীতিকে নিয়ে”।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে গৃহবন্দি করার দাবি তুলেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষও। তিনি বলেছেন, “যাঁরা মারা গিয়েছেন, তাঁদের মৃত্যুর দায় পুরোপুরি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তিনিই মানুষকে বলেছেন কেন্দ্রীয় বাহিনীকে ঘিরতে, ইভিএম আটকাতে”। একই সুরে ভারতী ঘোষের দাবি, এই ঘটনার জন্য নির্বাচন কমিশনের উচিত ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৩৫ আর ১৩৫ এ অন্তর্গত মামলা দায়ের করা এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে গৃহবন্দি করে রাখা। উনি আরও জানান, আজহার মাসুদের উস্কানি দিয়ে সন্ত্রাস ছড়ানোর মতোই মুখ্যমন্ত্রীর আচরণ।

গোটা ঘটনার পরে নির্বাচন কমিশন (Election Commission) তাঁর বিবৃতিতে জানিয়েছেন, আত্মরক্ষা ও সরকারি সম্পত্তি বাঁচাতে গুলি চালাতে হয়েছে সিআইএসএফ-কে। ইতিমধ্যেই রিপোর্ট দিয়েছেন বিশেষ পুলিশ পর্যবেক্ষক বিবেক দুবে। সেই রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, বাহিনীর হাত অস্ত্র কাড়তে এসেছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারা, সেই কারণেই গুলি চালাতে বাধ্য হয় সিআইএসএফ।

তবে যে যাই বলুক, সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়ার সম্মুখীন হতে হবে কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই। কারণ প্রথম থেকেই তিনি উস্কানিমূলক নির্বাচনী ভাষণ দিচ্ছিলেন। নির্বাচনী প্রচারে শীতলকুচির সভাতেই তিনি খেলার প্রসঙ্গ তুলে বলেছিলেন, “কী মা বোনেরা একটু হাতা-খুন্তি নিয়ে খেলা হবে নাকি?”

শীতলকুচির ঘটনাক্রম বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, তৃণমূলের সমর্থক মা- বোনেরা সেই ডাকই সাড়া দিয়েছেন। কোচবিহারের এসপি প্রাথমিক রিপোর্টে পরিস্কার জানিয়েছেন, বাহিনীর সদস্যদের চারিদিক থেকে ঘিরে ফেলা হয়েছিল। মহিলারা হাতা-খুন্তি-দা নিয়ে বাহিনীর জওয়ানদের উপর চড়াও হয়েছিলেন। তাঁদের অস্ত্র ছিনতাই করার চেষ্টা হয়েছিল। প্রাণ সংশয়ের ভয়েই বাধ্য হয়ে আত্মরক্ষার্থে গুলি চালাতে হয়েছিল বাাহিনীকে।

মৃত্যু ঘিরে রাজনীতি নতুন নয়। এই মৃত্যুকে নিয়েও রাজনীতি হবে, দোষারোপ হবে, তদন্ত হবে। কিন্তু এই ঘটনার জন্য দায়ী কে? সেই জবাব আছে কি নির্বাচন কমিশনের কাছে? কি জবাব দেবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়? তবে এর শেষ জবাব কিংবা শেষ বিচার যে জনগণই করবে, তা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের থেকে ভাল আর কে বুঝবেন। ইতিহাস সাক্ষী রয়েছে, ২০০৭ সালে নন্দীগ্রামের রক্তবন্যার প্রতিশোধ কিন্তু জনগণই নিয়েছিলেন।

(মতামত ব্যক্তিগত)

আরও পড়ুন: ‘বন্দুক ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছিল, ৩০০ জন ঘিরে ধরে, তারপরই চলে গুলি,’ ব্যাখ্যা পুলিশ সুপারের