অভিনেতা কল্যাণ চোখ বুজতেই মুখ খুললেন বোন, সামনে চলে এল বিরাট প্রশ্ন!
আশা করতেন,ফিল্ম দুনিয়ার লোকেরা তাঁর খোঁজ নেবেন। অন্তত একটা ফোন করবেন। কিন্তু সেই আশা, নিরাশায় বদলেছে বার বার। যে মানুষটি কনভেন্ট স্কুলে পড়েছেন, পুণে ফিল্ম ইনস্টিটিউট থেকে অভিনয় শিখেছেন, যাঁর সহপাঠীরা ছিলেন, জয়া বচ্চন, শত্রুঘ্ন সিনহা, আসরানি। যিনি মৃণাল সেন, তপন সিনহার মতো পরিচালকের পছন্দের অভিনেতা, বেঁচে থাকতে সবাই ভুলে গেলেন! হ্যাঁ, শশ্মানে দাঁড়িয়ে পর পর যেন এই প্রশ্নগুলোই তুললেন কল্য়াণ চট্টোপাধ্য়ায়ের বোন কেয়া মুখোপাধ্য়ায়।

যতটা সম্মান পাওয়ার কথা ছিল, ততটা কী সম্মান পেলেন টলিউডের বর্ষীয়ান অভিনেতা কল্য়াণ চট্টোপাধ্য়ায়? নাকি কালের অন্ধকারে, সোশাল মিডিয়ার দাপটে হারিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। নাকি শো-অফ, শো বিজের আলোকে মুঠোতে ধরতে না পেরে, পিছিয়ে পড়েছিলেন। হয়তো তাই, সেই কারণেই তো খোঁজ রাখেননি তাঁর কেউ। খোঁজ রাখেনি সে কেমন আছেন? তাঁর কী প্রয়োজন? তাঁর শরীরের খবর? তাঁর মনের খবর? জানতে চায়নি কেউ! গত রবিবার রাত ১১টা নাগাদ টলিউডের কানে এল অভিনেতা কল্য়াণ চট্টোপাধ্য়ায়ের মৃত্যুর খবর। সোশাল মিডিয়ায় তাঁর চলে যাওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়তে বেশি দেরি হয়নি। একের পর এক ছবির কোলাজে টেলিপাড়ার ‘কানাইদা’কে শেষশ্রদ্ধা জানাতে ভোলেননি তাঁর সহকর্মীরা। কিন্তু ‘এক আকাশের নীচে’র সেই কানাইদার খোঁজ রাখে হাতেগোণা কজন।
মৃত্যুর কয়েকদিন আগেও দুহাতে ফোন ঘাঁটতেন অভিনেতা। আশা করতেন,ফিল্ম দুনিয়ার লোকেরা তাঁর খোঁজ নেবেন। অন্তত একটা ফোন করবেন। কিন্তু সেই আশা, নিরাশায় বদলেছে বার বার। যে মানুষটি কনভেন্ট স্কুলে পড়েছেন, পুণে ফিল্ম ইনস্টিটিউট থেকে অভিনয় শিখেছেন, যাঁর সহপাঠীরা ছিলেন, জয়া বচ্চন, শত্রুঘ্ন সিনহা, আসরানি। যিনি মৃণাল সেন, তপন সিনহার মতো পরিচালকের পছন্দের অভিনেতা, বেঁচে থাকতে সবাই ভুলে গেলেন! হ্যাঁ, শশ্মানে দাঁড়িয়ে পর পর যেন এই প্রশ্নগুলোই তুললেন কল্য়াণ চট্টোপাধ্য়ায়ের বোন কেয়া মুখোপাধ্য়ায়। দাদার শেষকৃত্য সেরে সোজা তাঁর অভিযোগের আঙুল উঠল সিনেপাড়ার দিকেই। চোখে জল নিয়ে কেয়া বললেন, মৃত্যুর পর সবাই আহা উহু করছে…
পুণে ফিল্ম ইনস্টিটিউট থেকে অভিনয় শিক্ষা শেষ করে, প্রথমে নাটকের মঞ্চে। পরে সিনেমার পর্দায় আসেন অভিনেতা। তাঁর প্রথম ছবি তপন সিনহার আপনজন। প্রথম ছবি থেকেই পরিচালকদের নজরে পড়েন তিনি। এরপর দিলীপ কুমারের সঙ্গে সাগিনা মাহাতো, উত্তম কুমারের সঙ্গে ধন্যি মেয়ে-এর মতো ছবিতে অভিনয় করে দর্শকদের মন জয় করেন।
গোটা কেরিয়ারে প্রায় ৪০০ -এর মতো ছবিতে অভিনয় করেছেন কল্যাণ চট্টোপাধ্যায়। সৌমিত্র চট্টোপাধ্য়ায়, রঞ্জিত মল্লিক, দীপঙ্কর দে-এর মতো দাপুটে নায়কের পাশে দাঁড়িয়ে একের পর এক ছবিতে চমক দিয়েছেন।
তবে শুধুই বড় পর্দায় নয়, বেশ কিছু ধারাবাহিকেও কাজ করেছেন তিনি। সুজয় ঘোষ পরিচালিত ‘কাহানি’ ছবিতেও দেখা গিয়েছিল তাঁকে। শুধু তাই নয়, জ্য়াকি চ্যান অভিনীত ‘দ্য মিথ’ ছবিতেও কাজ করেছিলেন অভিনেতা। তাঁর শেষ অভিনীত সিরিজ হল ‘তানসেনের তানপুরা’। তবে দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ থাকার কারণে সম্প্রতি অভিনয় থেকে দূরেই ছিলেন। বোনের আক্ষেপ তাঁর শরীরিক অবস্থার কথা জেনেও, ফিল্মি দুনিয়ার কেউ একবারটির জন্য়ও যোগাযোগ রাখেননি। দেখতে আসা তো দূরের কথা, ফোনও করতেন না কেউই। অভিনেতার বোন বলেন, ”মানুষ বেঁচে থাকলে কেউ খোঁজ নেয় না। দাদার সময়েও সেটা হল। হাতে গোণা কয়েকজন আসত। কিন্তু বেশিরভাগই কোনও খোঁজ নিত না। দাদার আক্ষেপ ছিল। ফোন হাতে বসে থাকত। কিন্তু কেউ খোঁজ নেয়নি। এখন মৃত্যুর পর শ্রদ্ধা জানিয়ে কী লাভ! ”
