এক কাকিমা একবার বলেছিলেন, আমি গেলে চটি ছুড়ে মারবেন: নন্দিনী চট্টোপাধ্যায়
পরপর ভিলেনের চরিত্র করতে তাঁর আপত্তি। কেন? মুখোমুখি আড্ডায় জানালেন অভিনেত্রী।
‘যূথিকা’। হ্যাঁ, ‘অপরাজিতা অপু’র ‘যূথিকা’। প্রতিদিন টেলিভিশনের পর্দায় আপনি তাঁকে দেখেন। কখনও দিদিকে কুবুদ্ধি দেওয়া, কখনও বা সকলের সামনে মেয়ের বাড়ির লোককে অপমান করা… সবেতেই ‘যূথিকা’ বাজিমাৎ করছেন। কিন্তু ‘যূথিকা’ অর্থাৎ নন্দিনী চট্টোপাধ্যায় (Nandini Chatterjee) বাস্তবে কেমন? স্কুলে পড়ার সময় থেকেই থিয়েটার করেছেন। ধীরে-ধীরে টেলিভিশনে জনপ্রিয়তা পেয়েছেন। একটা নেগেটিভ চরিত্রে অভিনয় করার পর একটা পজিটিভ চরিত্র করার চেষ্টা করেন তিনি। পরপর ভিলেনের চরিত্র করতে তাঁর আপত্তি। কেন? মুখোমুখি আড্ডায় জানালেন অভিনেত্রী।
টেলিভিশনে ধারাবাহিক তো দীর্ঘ সময় চলে। টানা নেগেটিভ চরিত্র করতে-করতে বাস্তব জীবন কি প্রভাবিত হয়?
চরিত্রের প্রভাব থাকে। কিন্তু আমি বলব, নিজের কন্ডিশনিংটা ওভাবে করে নিতে হয়।
একটু বুঝিয়ে বলুন…
আমি যেমন প্রতিদিন যোগা, মেডিটেশন করি। শুটিং করে এসে একটা ক্লিনজিং প্রসেসের মধ্যে দিয়ে যাই। পুজোর ঘরে ধ্যানে বসি। অর্থাৎ ধীরে-ধীরে শুটিংয়ের পর সেই চরিত্রকে ঝেড়ে ফেলে দিই।
আরও পড়ুন, মা আর বরের কাছে আমি পৃথিবীর সেরা ভিলেন: কাঞ্চনা মৈত্র
যে কোনও চরিত্রে অভিনয় করার সময় তার রেফারেন্স কি বাস্তব থেকে তুলে নেন?
অবশ্যই। এত চরিত্র দেখেছি জীবনে, হয়তো তার কোনও একটির কথা ভেবে কোনও চরিত্র সাজালাম। তার ব্যাক স্টোরিটা ভেবে নিয়ে শুট করলাম। আমার এক পিসি ভীষণ নেগেটিভ ছিলেন। তাঁর ব্যবহার, অ্যাপ্রোচ ভীষণ নেগেটিভ ছিল। হয়তো তাঁর কথা ভাবলাম। ‘বধূবরণ’ আমার এক পিসি-শাশুড়ির কথা ভেবে করতাম। তাঁর হাবভাব, কথাবার্তা…। যখন সকালে গিয়ে কস্টিউম পরি, তখন সেই মানসিকতা তৈরি করে নিলাম। তার ব্যাকস্টোরি আমার কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ। কোন-কোন অ্যাকশন কোন-কোন কারণে হবে, সেই লজিকটা ঠিক করে নিই। ওই নির্দিষ্ট চরিত্রের একটা ইনসিকিওরিটি আছে, তার একটা থট প্রসেস আছে। কিন্তু প্যাক-আপের পর সেটা ঝেড়ে ফেলে আসি। সেটা ক্যারি করি না।
আমার স্ট্রং লাইকস আর ডিজলাইকস আছে, বললেন নন্দিনী।
ওই ডিটক্স প্রসেসটার মধ্যে দিয়ে এটা সহজ হয়, তাই তো?
হ্যাঁ। মেক-আপ রুমে কস্টিউম ছাড়ার পর আমি অন্য মানুষ। কারণ যে চরিত্রগুলোয় আমি অভিনয় করি, সেগুলো জাজ করি না। আর এই চরিত্রদের বাস্তব জীবনে খুব অপছন্দ করি।
আপনার পারফরম্যান্স দেখার পর নেগেটিভ ফিডব্যাক পেয়েছেন ?
হ্যাঁ, নেগেটিভই তো পজিটিভ। একটা ঘটনার কথা বলি… তখন ‘মায়ার বাঁধন’ চলছিল। সেখানে স্ট্রং নেগেটিভ ছিল। আমি চেষ্টা করি একটা নেগেটিভ করার পর একটা পজিটিভ করতে। কারণ পরপর নেগেটিভ করে যাওয়াটা আমার সিস্টেমের জন্য খুব ভাল নয়। আমার আমহার্স্ট স্ট্রিটের এক দাদা বলেছিলেন, “গাড়ি থেকে যখন নামবি তখন নীচে ডেকে নিস।” কারণ পাশের বাড়ির এক কাকিমা থাকেন, তিনি বলেছেন, আমি গেলে নাকি চটি ছুড়ে মারবেন। কারণ আমাকে সহ্য করতে পারতেন না (হাসি)। আমি দেখেছি উত্তর কলকাতার লোকেরা অনেক বেশি ইনভলভড হয়ে যায়।
আরও পড়ুন, আমাকে কি খুব বদমাইশদের মতো দেখতে?: রুকমা রায়
আর দক্ষিণ?
দক্ষিণ কলকাতার কিছু-কিছু অঞ্চলের দর্শকের হয়তো সেই ইনভলভমেন্টটা রয়েছে। দক্ষিণ কলকাতায় আমার বাড়ির পিছনের বস্তি আছে। সেখান থেকে আমার পরিচারিকা আসেন। তাঁর কাছ থেকে তাঁর পাড়ার লোকেদের ফিডব্যাক পাই।
বাস্তবে নেগেটিভিটি সামলানোর স্ট্র্যাটেজি কি?
আমার স্ট্রং লাইকস আর ডিজলাইকস আছে। বাস্তবে এত চরিত্র দেখেছি। অনেক সময় পজিটিভ মানুষ কোনও-কোনও পরিস্থিতিতে নেগেটিভলি রিঅ্যাক্ট করেন। তাঁরা রেগে যায়, খারাপ কথা বলেন, কিন্তু আসলে মানুষটা পজিটিভ। কিন্তু কিছু মানুষের সত্ত্বাই নেগেটিভ। আমি তাঁদের থেকে দূরে থাকতে চেষ্টা করি। প্রচুর এরকম দেখেছি। দেখে-দেখে ক্লান্ত।
ফটোশুটে নন্দিনী।
ইন্ডাস্ট্রির নেগেটিভিটির কোনও অভিজ্ঞতার কথা বলবেন?
এই ইন্ডাস্ট্রিতে কেউ নিজেকে প্রুভ করার চেষ্টা করলে কিছু-কিছু আর্টিস্ট নেগেটিভলি রিঅ্যাক্ট করেন। হয়তো প্রযোজকের কাছে আমার নামে খারাপ কথা বললেন। দিনের পর দিন। টেকনিশিয়ানরা হিংসে করেন না। কিন্তু আর্টিস্টদের মধ্যে এটা রয়েছে। এগুলো অনেক ফেস করেছি। এগুলো নিয়ে ডিরেক্ট কিছু বলি না। প্রার্থনা করি, ঈশ্বর সুবুদ্ধি দাও। অথবা ওই পরিস্থিতি থেকে নিজেকে সরিয়ে নিই। হয়তো মেক-আপ রুমে বসলাম না। ফ্লোরে গিয়ে ডায়লগ মুখস্থ করলাম…।
আরও পড়ুন, মেয়ে বলেছে, মা তুমি কিন্তু ঝগড়া করবে না: অর্পিতা মুখোপাধ্যায়
তাহলে ইন্ডাস্ট্রিতে কোনও বন্ধু নেই?
সহকর্মী বেশি। বন্ধু কম। জানাশোনা অনেক। হাই হ্যালো আছে। বন্ধু কম। তবে মিঠু চক্রবর্তী আমার বন্ধু, আত্মীয়ও। সোমা চক্রবর্তীর কথা বলব। ওর সঙ্গে আগে এত ঘনিষ্ঠভাবে মেশার সুযোগ হয়নি।