বাংলার অভিনয় দুনিয়ায় নক্ষত্র পতন। মনোজ মিত্র ১৯৩৮ সালের ২২ ডিসেম্বর ব্রিটিশ ভারতের সাতক্ষীরা জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। এখন যা বাংলাদেশের মধ্যে। ১৯৫৭ সালে নাটকে তাঁর অভিনয় শুরু। বাবা যে চেয়েছিলেন মনোজ অভিনয় করুন, তা নয়। তাই শুরুর দিকে অভিনয় করার জন্য কিছুটা লড়াই করতে হয়েছিল। পাশাপাশি অধ্যাপনা করার ইচ্ছা ছিল তাঁর। নাটকে বেশ দাপটের সঙ্গে অভিনয় করতে শুরু করার অনেকটা পরে চলচ্চিত্রে কাজ। তবে প্রথম ছবিতেই দর্শকের নজর কেড়ে নিয়েছিলেন। প্রথম নাটক লিখেছিলেন ১৯৫৯ সালে। সেই বগলধীমান-এর সূত্রে পরিচিতি আসে।
তবে ১৯৭২-এ তাঁর চাক ভাঙা মধু নিয়ে চর্চা শুরু হয়। সেই নাটকে মঞ্চ নির্দেশক ছিলেন মনোজের বন্ধু বিভাস চক্রবর্তী। ১৯৭৭-এ মনোজের কালজয়ী নাটক সাজানো বাগান অভিনীত হয়। ১৯৮০-তে পরিচালক তপন সিনহা সেই নাটক অবলম্বনেই তৈরি করেন বাঞ্ছারামের বাগান। মনোজ মিত্র বহু চর্চিত ছবির অংশ হয়েছেন পরবর্তীকালে। যার মধ্যে রয়েছে শত্রু, বৈদুর্য রহস্য, ঘরে বাইরে, গণশত্রু, রাখি পূর্ণিমা, মধু মালতী, আদালত ও একটি মেয়ে, ময়নাতদন্ত, অন্তর্ধান, দামু, চরাচর, হুইল চেয়ার, আজব গাঁয়ের আজব কথা। শেষ কয়েক বছরে খুব বেশি ছবিতে অভিনয় করেননি। উমা ছবিতে অতিথি শিল্পী হিসাবে তাঁর অভিনীত দৃশ্যটিও নজর কেড়েছিল। তাবড় পরিচালকদের সঙ্গে কাজ করেছেন মনোজ।
সত্যজিত্ রায়, তরুণ মজুমদার, গৌতম ঘোষ, বাসু চট্টোপাধ্যায়, অরবিন্দ মুখোপাধ্যায়, তপন সিনহা, বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত থেকে রাজা সেনের সঙ্গে কাজ করেছেন। তিনি প্রধান চরিত্রে যেমন অভিনয় করেছেন, তেমনই পার্শ্বচরিত্র করতেন দাপটের সঙ্গে। দূরদর্শনের ধারাবাহিকে মনোজ মিত্র থাকলে, দর্শক টিভির পর্দা থেকে চোখ ফেরাতেন না। ১০০-র কাছাকাছি নাটক লিখেছিলেন মনোজ। সেই নাটকের সমাজভাবনা আজও প্রাসঙ্গিক। নরক গুলজার, কেনারাম বেচারাম, বৃষ্টির ছায়াছবি যার মধ্য়ে অন্য়তম। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে নাট্যকলা বিভাগের অধ্যক্ষ হিসাবে যোগ দেওয়ার আগে, তিনি বিভিন্ন কলেজে দর্শন বিষয়ে শিক্ষকতা করেছেন। মনোজের কলমে লেখা নাটকের বিভিন্ন বই বিভিন্ন প্রজন্মকে সমৃদ্ধ করেছে। তাঁর ঝুলিতে এসেছিল বহু পুরস্কার। তাঁর মৃত্যুতে নাট্যজগতে যে শূন্যস্থান তৈরি হল, তা পূর্ণ হবে না, এমনই মত বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বদের।