
কলকাতা: একটা সিনেমা দেখলে নাকি মানুষ মরে যায়! ভাবছেন নিশ্চয় এরকম আবার হয় নাকি? কিন্তু অন্তর্জালের দুনিয়ায় ঘাঁটাঘাঁটি করলে এই একটা সিনেমা নিয়ে উঠে আসে কত শত তথ্য। ২০১৮ সালে ছবিটি মুক্তি পেলেও একাংশের দাবি এটি আসলে ১৯৭০-এর দশকের হারিয়ে যাওয়া এক চলচ্চিত্র। শোনা যায়, ফেলে আসা শতাব্দীতে যতবারই ছবিটি স্ক্রিনে এসেছে ততবারই নাকি ঘটে গিয়েছে ভয়ানক সব দুর্ঘটনা। শোনা যায় ১৯৭৯ এবং ১৯৮৮ সালে বহু মানুষের মৃত্যু হয়েছে এই ছবিকে দেখার কারণে। কথা হচ্ছে ‘Antrum’ কে নিয়ে। লোকে বলেন ছবিটি অভিশপ্ত। কিন্তু একটা সিনেমা কী করে অভিশপ্ত হতে পারে?
শোনা যায় ১৯৭৯ সালে একটি ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে যখন ছবিটিকে পাঠানো হয়েছিল তখন তা বাতিল করে দেওয়া হয়। অর্থাৎ, যাঁরা বাছাইয়ের দায়িত্বে ছিলেন তাঁরা তা দেখে তারপরই বাতিল করেন। শোনা যায় যাঁরা ছবিটি বাতিল করে দেন তাঁরা নাকি অস্বাভাবিকভাবে মারা যান। যদিও এ নিয়েও নানা মাহল থেকে নানা মতামত উঠে আসে। এরপর ১৯৮৮ সালে ঘটে যায় আর এক কাণ্ড। ওই বছর হাঙ্গেরির বুদাপেস্টে এক থিয়েটারে ছবিটির স্ক্রিনিং হয়। যখন ছবিটি চলছিল তখন আচমকা থিয়েটারে আগুন লেগে যায়। সূত্রের খবর, সেই আগুনে প্রায় ৫৬ জন মানুষ মারা যান। এরপর থেকেই এই অভিশপ্ত সিনেমাটির নাম আরও বেশি ছড়াতে থাকে। মানুষের মধ্যে কৌতূহল তৈরি হয়।
এরইমধ্যে শোনা যায় ছবিটির সব কপি নাকি নষ্ট হয়ে গিয়েছে, বা হারিয়ে গিয়েছে। তবে ১৯৯৩ সালে আবার সিনেমাটা আবার সামনে আসে। যেটা নাকি একটা নিলাম থেকে পাওয়া গিয়েছিল। ১৯৯৩ সালে সান ফ্রানসিসকোর একটি সিনেমা হলে ফের এটির স্ক্রিনিং হয়। শোনা যায় সেখানে হলের মধ্যে আচমকা মানুষের আচরণ বদলাতে শুরু করে। দর্শকরা নিজেদের মধ্যে মারপিট করতে শুরু করে। তাঁরা যখন হল থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করে তখন দরজাটা বাইরে থেকে বন্ধ হয়ে যায়। যদিও তদন্ত এগোলে জানা যায় হলে দর্শকরা যে পরকর্ন খেয়েছিল যার মধ্যে এলএসডি ছিল। কিন্তু এলএসডি কোথা থেকে এল তা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়। এরইমধ্যে কোনও এক থার্ড পার্টি এর একটা নতুন ভার্সন বানায়। পরবর্তীতে এই শতাব্দীতেও ফের বাইরে আসে। তবে সেখানে বেশ কিছু ছোটখাটো বদল হয় মূল গল্প এক রেখে। যা ছবিটিকে আরও ভয়াবহ করে তুলেছে।
কী বলছে ছবির গল্প?
ছবির গল্প মূলত দুই বাচ্চাকে নিয়ে। তারা সম্পর্কে ভাই-বোন। তাঁর এক প্রিয় কুকুরের মৃত্যু এবং তাঁকে কেন্দ্র করে এগোতে থাকে ছবির গল্প। তবে মেনস্ট্রিম হরর ছবির গ্রোত্রে এই ছবি না পড়লেও ছবির দৃশ্যায়ন, গল্প বলার ধরন, মেকিং সবটাই ছবিটিকে একেবারে অন্যদের থেকে আলাদা করে ফেলেছে বলেই মত সিনে বিশেষজ্ঞদের বড় অংশের। ছবির মাঝে মাঝে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে রহস্যময় আবহ, ছবিটির রহস্যের আধারে বুনোট, হঠাৎ ভেসে আসা বিকৃত ফুটেজ, গথিক আবহ সঙ্গীতের যথাযথ ব্যবহার, যা অবচেতন মনে প্রভাব ফেলার জন্য যথেষ্ট।
যদিও সিনে বিশেষজ্ঞ বড় অংশের মত, ছবিটিকে কেন্দ্র করে বিশ্বজুড়ে তৈরি হওয়া রহস্যের বাতাবরণ আসলে এটির মার্কেটিং স্টাইল। সেই দিক থেকে দেখলে ‘Antrum’ আসলে এক অসাধারণ মার্কেটিংয়ের উদাহরণ। ছবির কন্টেন্ট যতটা ভয়ংকর, তার চেয়ে বেশি ভয় তৈরি করেছে এর প্রচার কৌশল—যা মানুষের মনে কৌতূহল ও আতঙ্ক দুটোই জাগিয়ে তুলেছে। হররপ্রেমীরা সামাজিক মাধ্যমে এ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন। কেউ বলছেন, এটি তাঁদের দেখা সবচেয়ে ভয়ের সিনেমা, আবার কেউ একে নিছকই গিমিক বলে উড়িয়ে দিয়েছেন।