জামিন পাননি আরিয়ান খান। এনসিবি হেফাজতের পর ১৪ দিনের জেল হেফাজত হয়েছে তাঁর। এরই মধ্যে এক ভাইরাল ভিডিয়ো নিয়ে শুরু হয়েছে জোর চর্চা। মাস্কে ঢাকা দুই ব্যক্তিকে একে অপরকে জড়িয়ে ধরতে দেখা যাচ্ছে। আশ্চর্যজনক ভাবে ভিডিয়োতে উপস্থিত দুই ব্যক্তির সঙ্গে আরিয়ান খান ও শাহরুখ খানের চেহারার হুবহু মিল রয়েছে? তবে কি আদালত চত্বরেই ছেলেকে বহুদিন পর কাছে পেয়ে জড়িয়ে ধরলেন শাহরুখ? উঠেছে সেই প্রশ্নও।
না ভিডিয়োর ওই ব্যক্তি দুজনের কেউই শাহরুখ অথবা আরিয়ান নন। বাবা-ছেলের আলিঙ্গন করার কোনও মুহূর্তই এ দিন তৈরি হয়নি আদালতে।
শাহরুখ সদৃশ যে ব্যক্তিকে দেখা যাচ্ছে তিনি ইব্রাহিম কাদরি, শাহরুখের মতোই দেখতে তাঁকে। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ‘শাহরুখ সেজে’ উপস্থিত হন তিনি। ইনস্টা গ্রামেও তাঁর অনুরাগী রয়েছে। যে ছেলেটিকে তিনি জড়িয়ে ধরছেন তিনিও আরিয়ান নন। আরিয়ান সোমবার আদালত চত্বরে এক নীল রঙের জ্যাকেট পরেছিলেন। সেই ছেলেটির গায়েও অনুরূপ এক জ্যাকেট থাকায় তাকেই আরিয়ানের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলেছেন নেটিজেনদের একটা বড় অংশ।
এ দিন সকাল থেকে ছিল টানটান উত্তেজনা। আরিয়ান কি জামিন পাবেন নাকি তাঁর হেফাজতের মেয়াদ বৃদ্ধি হবে তা নিয়ে উত্তেজনা ছিল তুঙ্গে। সকাল গড়াতেই আদালতে হাজির করা হয় আরবাজ-আরিয়ান সহ বাকি অভিযুক্তদের। প্রথম থেকেই আরিয়ানের এনসিবির হেফাজতের মেয়াদ আরও চার দিন বৃদ্ধির আবেদন জানিয়েছিল নারকোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরো। কারণ হিসেবে তাঁরা বলেন, এনসিবি’র তরফে আদালতে জানান হয়, প্রয়োজনে আরও বেশ কিছু জায়গায় অভিযান চালাতে পারেন তাঁরা। উপযুক্ত প্রমাণ পেলে হতে পারে গ্রেফতারিও। সম্ভাব্য দোষীর সঙ্গে বর্তমানে গ্রেফতার হয়েছেন যারা তাঁদের মুখোমুখি বসিয়ে জেরার প্রয়োজন রয়েছে বলেই হেফাজতের মেয়াদ বৃদ্ধির প্রয়োজন রয়েছে। অন্যদিকে আরিয়ান-আরবাজের কৌঁসুলিরা এ তত্ত্বকে খারিজ করে পাল্টা আদালতে তাঁদের মক্কেলের জামিনের জন্য সরব হন।
আরিয়ানের হয়ে তাঁর আইনজীবী প্রশ্ন তোলেন, যদি তাজ হোটেল থেকে মাদক উদ্ধার হয়, তবে কি তাজ হোটেলে উপস্থিত সবাইকেই দোষী বলে গণ্যা করা হবে? এরই পাশাপাশি, তাঁর মক্কেলের হয়ে সতীশ মানশিন্ডে বলেন, “ওঁরা নিজেদের গ্রুপে অথবা পৃথক পৃথক ঘরে পার্টি করছিল”। পাশাপাশি এনসিবি’র হেফাজত বৃদ্ধির দাবির পাল্টা তিনি প্রশ্ন তোলেন, “এনসিবি কি হেফাজতে না নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবে না?” তিনি আরও জানান, এনসিবি’র কাছে তাঁর মক্কেলের ফোনের যাবতীয় চ্যাট ইতিমধ্যেই রয়েছে। যা ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের কাছে পাঠানোও হয়েছে। তাই এনসিবি যদি নথি নষ্ট করার আশঙ্কা করে থাকে তাও অমূলক। অন্যদিকে মাদককাণ্ডে অন্যতম অভিযুক্ত মোহক জয়সালের আইনজীবী আদালতে দাবি করেন, তাঁর মক্কেল আরিয়ান বা আরবাজকে ব্যক্তিগত ভাবে চেনেন না। মোহক দিল্লিতে থাকেন। এনসিবিকে উদ্দেশ্য করে মোহকের আইনজীবী আরও বলেন, “তাঁরা প্রমাণ করে দেখাক মুম্বইয়ে কোনও মাদক পাচারকারীর সঙ্গে আমার মক্কেলের যোগাযোগ রয়েছে।”
গত শনিবার কর্ডেলিয়া ক্রুজ নামে এক প্রমোদতরীতে তিনদিনের একটি মিউজিক্যাল সফরের আয়োজন করা হয়েছিল। বলিউড, ফ্যাশন ও বাণিজ্যজগতের তাবড় ব্যক্তিত্ব এই সফরে সঙ্গী হন। ক্রে’আর্ক শীর্ষক ওই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল ফ্যাশনটিভি ইন্ডিয়া। ৪ অক্টোবর তা গোয়া ঘুরে ফের মুম্বইতে ফেরত আসার কথা ছিল। এদিকে এই প্রমোদতরণী নিয়ে এনসিবির কাছে আগাম ড্রাগ-মজুতের খবর যায়। সেই ড্রাগ যে এই প্রমোদ-সফরের বড় অংশ হতে চলেছে তাও জানতে পারেন তদন্তকারীরা।
এরপরই একেবারে বলিউডি কায়দা সেই তরণীতে ওঠেন বেশ কয়েকজন এনসিবি কর্তা। কর্ডেলিয়া ক্রুজে তল্লাশি চালাতেই তাঁদের কাছে উঠে আসে একের পর এক মাদকের খোঁজ। কোকেন, এমডিএমএ, এক্সটেসি বাদ ছিল না কিছুই। এরপরই মাদক রাখার প্রমাণ পাওয়ায় আটজনকে আটক করা হয়। সেখানে ছিলেন শাহরুখ খানের বড় ছেলে আরিয়ান খানও। গত শনিবার রাতে সেখান থেকেই গ্রেফতার করা হয় কিং খানের পুত্রকে।
গত ৪ অক্টোবর এই মামলার শুনানি ছিল। সেদিন আদালতে এনসিবি জানায়, আরিয়ান খানের হোয়াটস অ্যাপ চ্যাটে এমন কিছু তথ্য মিলেছে যা ড্রাগ পাচারকারী ও ড্রাগ লেনদেন সংক্রান্ত। তাই তারা আরিয়ানকে হেফাজতে নিয়ে জেরা করতে চায়। আরিয়ান খান, আরবাজ মার্চেন্ট ও মুনমুন ধামেচা-তিনজনকে জেরার জন্য আদালত ৭ অক্টোবর অবধি সময় দেয়। সেই সময়ের মেয়াদ আরও বৃদ্ধি হল আজ। যদিও হেফজত হস্তান্তর হল। এ বার ঘটনা কোন দিকে গড়ায় এখন সেটাই দেখার।