চার দশক ধরে বলিউড ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে অভিনয় করছেন অনুপম খের। যে পরিবারের তিনি সদস্য ছিলেন, তা ছিল বেশ দরিদ্র। ১৪জন সদস্যের পরিবার ছিল সেটি। একমাত্র রোজগেরে ছিলেন অনুপম খেরের বাবা। পরিবারে অর্থাভাব থাকতেও তাঁরা কেউ দুঃখে ছিলেন না। এমন অবস্থায় তাঁর ঠাকুরদা কিছু উপদেশ দিয়েছিলেন অনুপমকে। সেই উপদেশ পাল্টে দিয়েছিল অভিনেতার জীবন।
অনুপম বলেছিলেন, “আমাদের পরিবার খুব গরিব ছিল। আমরা একান্নবর্তী পরিবারে থাকতাম। ছোট্ট একটা ঘর ছিল আমাদের। ১৪জন মানুষ থাকত সেই ঘরে। আমার ঠাকুরদা-ঠাকুমা, কাকু- কাকিমা, তুতো ভাই-বোনেরা। আমার বাবাই ছিল সেই পরিবারের একমাত্র রোজগেরে ব্যক্তি। ৫-৬০-এর দশকে আমার বাবার মাসিক আয় ছিল মাত্র ৯০ টাকা। এই অর্থেই ১৪টা পেট চলত। এত অর্থাভাবেও আমাদের পরিবারের সকলে খুব আনন্দে ছিল।”
অনুপম বলেছেন, “আমি ভাবতাম, এত দরিদ্র হওয়া সত্ত্বেও আমরা কেন এবং কীভাবে ভাল আছি। ছোটবেলার প্রত্যেকটা ঘটনা আমার ছবির মতো মনে আছে। ছোট্ট শহর থেকে আসা ব্যক্তিদের বোধহয় সবকিছু মনে রাখার একটা ক্ষমতা থাকে। আমার ঠাকুরদাকে এই প্রশ্ন আমি করেছিলাম। ঠাকুরদা আমাকে বলেছিলেন, ‘মানুষ যখন খুব দরিদ্র হয়, তখন সবচেয়ে সস্তা জিনিসে সে খুশি হতে শিখে যায়। তাই ছোট্ট বয়স থেকেই দরিদ্র হওয়ার ভয় আমার জীবন থেকে চলে গিয়েছিল।”
তারপরে শুরু হলো মুম্বইয়ে অনুপমের জীবন সংগ্রাম। অভিনেতা হওয়ার জন্যই মুম্বই এসেছিলেন অনুপম খের। রাতের পর-রাত রেলের প্লাটফর্মে ঘুমতেন তিনি। বলেছিলেন, “এই ঘটনা কিন্তু আমার মা-বাবা জানতেন না। কোনওদিনও বলিনি তাঁদের। আমি চাইনি আমার এই অবস্থার কথা জেনে তাঁরা দুঃখ পাক। তবে আমার ঠাকুরদাকে সব কথা জানিয়েছিলাম।”
একটা সময় পর মানুষ অনুপমকে জিজ্ঞেস করতে শুরু করেন, মুম্বইতে তিনি কোনও কাজ পাচ্ছেন কি না। বলেছেন, “সক্কলকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্যই ভীড়ের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকতাম আমি। সঙ্গে থাকতেন কোনও নামী অভিনেতার ছবি। সকলের মনে হত, আমি সেই অভিনেতার সঙ্গে দেখা করেছি। আমার অভিনেতা হওয়ার লড়াইকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য এইভাবেই সান্তনা দিতাম নিজেকে এবং সকলকে। আমার জন্য পরিবারের সদস্যদের চোখে আশা জাগিয়ে রাখতাম। তবে ঠাকুরদার সঙ্গে সবকিছু শেয়ার করতাম আমি। তাঁকে কাশ্মীরে চিঠি লিখে বলতাম, এভাবে বেঁচে থাকার নরকের মতো।”
বলে চলেন অনুপম, “ঠাকুরদাকে বলতাম, এখানে থাকতে আমার একেবারেই ভালো লাগছে না। সিমলা কিংবা লখনউ বা দিল্লিতে চলে যেতে চেয়েছিলাম। একজন অভিনেতাকে, একজন মানুষকে ক্রমাগত অপমানিত হতে হয়েছে মুম্বই শহরে। দিনের পর-দিন রেলওয়ে প্লাটফর্মে কাটাতে হয়েছে। ১.৪০শে শেষ ট্রেন চলে যাওয়ার পর ঘুমতাম প্ল্যাটফর্মে। ভোর ৪.৪০শে প্রথম ট্রেন আসা পর্যন্ত ঘুমতাম। মনে-মনে প্রশ্ন করতাম নিজেকে, কেন এসেছি এখানে? তখনই ঠাকুরদা আমাকে বলতেন, অনেক পরিশ্রম করেছ তুমি। বাবা-মা অনেক কষ্ট করে তোমায় মুম্বই পাঠিয়েছেন। দেড় বছর ধরে তুমি মুম্বইতেই আছ। সব সময় মনে রাখবে, ভেজা মানুষ বৃষ্টিতে ভয় পায় না। এখনও আমার ঠাকুরদার বলা এই লাইনটা মনে পড়লে শিহরণ জাগে।”