২০০৪ সাল। হঠাৎই জানতে পারেন ব্ল্যাড ক্যান্সারে আক্রান্ত তিনি। কিন্তু প্রথমে বুঝতেই পারেননি এর গুরুত্ব। তাঁর ছবির নায়ক ইমরান হাসমির সঙ্গে মদ্যপান করতে চলে যান তিনি হাসপাতালের রুমে। তিনি পরিচালক অনুরাগ বসু (Anurag Basu)। ‘গ্যাংস্টার’, ‘বরফি’, ‘মার্ডার’-এর মতো জনপ্রিয় ছবির পরিচালক ফিরে গেলেন তাঁর জীবনের কঠিন সময়ে। যেখানে তিনি প্রথমে বুঝতেই পারেননি, কতটা ভয়ঙ্কর অবস্থার মধ্যে রয়েছেন। অথচ তাঁর পরিবারের মানুষ জন বুঝতে পারছিলেন তাঁর অবস্থা কতটা খারাপ হয়েছে। সেই সময় তাঁর স্ত্রী সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা। তাঁর নিজের কতটা অনেকটাই সময় লেগেছিল, কতটা খারাপ অবস্থার মধ্যে রয়েছেন তিনি। তাঁর পরিবার, বন্ধু-বান্ধব বুঝলেও তিনি বোঝেননি প্রথমে। সেই কথাই তিনি ভাগ করলেন এতদিন পর।
কিন্তু সেই কঠিন পরিস্থিতি থেকে তিনি জিতে ফিরেছেন। যার জন্য ‘জগ্গা জাসুস’ ছবির পরিচালক নিজের পরিবার, বন্ধু-বান্ধব, ইন্ডাস্ট্রির সহকারী বন্ধু সকলের কাছে কৃতজ্ঞ। সেই সময়ের কথা মনে করে তিনি কথাগুলো জানিয়েছেন। প্রথমে তাঁর মুখে একটা ফোস্কা পড়ে। সেটা বড় হয়ে ওঠায় ডাক্তার ভয় পেয়ে যান। তিনি রক্ত পরীক্ষা করতে দেন। শেষে বলেন কাজ বন্ধ করতে হবে। পরিচালকের কথায়, তখনও তিনি বিষয়টা কতটা গুরুতর তা বুঝতে পারেননি। এমনকি হাসপাতালের রুমে ইমরান হাসমির সঙ্গে মদ্যপানও করেছেন। তাঁর শুধু মাথাব্যথা হয় আর দুর্বল লাগত। তিনি এরপর শুটিং করতে যান। কিন্তু তখন মুকেশ ভাট বলেন, ‘সবকিছু গুজিয়ে নাও’। প্রথমটায় তাঁর কথা শুনে অবাক হয়েছিলেন।
অনুরাগের মতে, “কিন্তু যখন বাবা-মার মুখ দেখলাম, মহেশ ভাট এবং অনুপম খের আমার সঙ্গে হাসপাতালে দেখা করতে এলেন, বুঝলাম কিছু একটা হয়েছে। বিশেষ করে এমনিতে শান্ত মানুষ মহেশ ভাট যখন মাথা হাত রেখে ঝাঁকিয়েছিলেন, বুঝি কিছু একটা হয়েছে”। অনুরাগ জানান, ততদিনে তাঁর অবস্থার অবনতি হতে থাকে। কোনও ওষুধ ঠিক মতো কাজ করছে না। তিনি আরও ভয় পান, যখন তাঁর বাবা-মা আর মুখোমুখি হচ্ছিলেন না। রক্তের পর রক্তে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কিছুই কাজ করছিল না। রক্তের প্লেটলেট দিন দিন কমে যাচ্ছিল।
সেই সময় ভগবানের দূত হয়ে আসেন সুনীল দত্ত। তাঁর সাহায্যে মুম্বইয়ের একটি বেসরকারি ক্যান্সার হাসপাতালে তাঁকে ভর্তি করা হয়। তারপর শুরু হয় কঠিন লড়াই। অবশেষে সেই লড়াই জিতে ফেরেন অনুরাগ। সম্প্রতি তিনি ফিরে দেখলেন সেই কঠিনতম দিনগুলো। একটা সাক্ষাৎকারে এই সব ঘটনার কথা জানান লুডোর পরিচালক। কোভিড পরিস্থিতিতে ওটিটি প্ল্যাটফর্মে মুক্তি তাঁর এই ছবি। যা সমালোকদের কাছে প্রশংসিতও হয়েছে।
১৮ বছর আগে বড় মেয়ে ইশানার জন্মের সময় ধরা পড়েছিল তাঁর ক্যান্সার। সেই কঠিন অসুখ জয় করে তিনি আবারও বাবা হয়েছেন অহনার (১৫)। জীবন-যুদ্ধে লড়াই করে এইভাবেও ফিরে আসা যায়, যার প্রত্যক্ষ প্রমাণ অনুরাগ বসু।