‘বন্দে মাতরম’-এর নিজস্ব ভার্সান তৈরি করে সেনসেশন তৈরি করেছিলেন তিনি। তাঁর হাত ধরে ২০০৯-এর অস্কারে ‘শ্রেষ্ঠ ওরিজিনাল সং’ বিভাগে এসেছিল বিশ্বসেরার সম্মান, সৌজন্যে ‘দ্য স্লামডগ মিলিয়নেয়ার’-এর ‘জয় হো’। সেই এআর রহমানই এবার কাঠগড়ায়। কাজী নজরুল ইসলামের লেখা ‘কারার ওই লোহ কপাট’কে স্বকীয় স্টাইলে নিজের ইউটিউব চ্যানেলে আপলোড করেছেন রহমান। তা শুনে ক্ষুব্ধ দুই বাংলার জনগণ। সোশ্যাল মিডিয়ায় চলছে নিন্দার তীব্র ঝড়। ‘বিদ্রোহী কবি’র আইকনিক গানের রূপান্তর ঘটিয়ে বাঙালির আবেগকে আগাত করেছেন রহমান, অভিযোগ উঠছে এমনটাই। ‘রহমানিয়া’-জ্বরে আক্রান্ত মিউজ়িকপ্রেমীরা এবার রহমানকে কার্যত একহাত নিচ্ছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়।
গানটির গায়কও আবার বাঙালি। তীর্থ ভট্টাচার্য, রাহুল দত্ত, শালিনী মুখোপাধ্যায়ের মতো গায়কেরা যখন গানটিকে গাইলেন এইভাবে তখন তাঁদেরও কি একবারের জন্যও খটকা লাগল না, প্রশ্ন ছুড়ে দিচ্ছেন সঙ্গীতপ্রেমীরাই। TV9 বাংলা শুক্রবার (১০ নভেম্বর) সকাল থেকেই যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছিল রাহুল, তীর্থ ও আর এক গায়ক পীযূষ দাশের সঙ্গে। রাহুলের ফোন বন্ধ। এই প্রতিবেদন লেখা অবধি একাধিক বার ফোন করা হলেও বেজে গিয়েছে পীযূষ ও রাহুলের? ব্যস্ত নাকি প্রশ্নের সম্মুখীন হওয়ায় আপত্তি? উঠছে প্রশ্ন।
গান নিয়ে পরীক্ষা অতীতে কম হয়নি। সাল ২০০৬। ছবির নাম ‘বং কানেকশন’। গানের নাম ‘পাগলা হাওয়ার বাদল দিনে’। কবিগুরুর সেই গান নিয়ে রিমিক্স ও বিতর্কের ঝড় মনে করিয়ে দেওয়া যাক। ছবির জন্য গানকে নতুন ভাবে গড়ে ‘জেন ওয়াই’দের পছন্দসই করার চেষ্টা করা হয়েছিল সেই বার। ‘পাগলা হাওয়ার…’ রিমিক্স গেয়ে নিন্দিতও হয়েছিল নচিকেতা চক্রবর্তী। রবীন্দ্রভক্তরা প্রতিবাদ করেছিলেন। তবে পাল্টা মতও দিয়েছিলেন অনেকে। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আসবে পরিবর্তন– এতে সমস্যা কোথায়? প্রশ্ন তুলেছিলেন তাঁরা। আবার বছর দুয়েক আগে রতন কাহারে ‘বড়লোকের বিটি লো’লে যখন ‘প্রচলিত গান’ তকমা বলিউড গায়ক বাদশা ও পায়েল দেব রিলিজ করলেন, তা নিয়েও তো কম আলোচনা হয়নি। ১৯৭২ সালে শিল্পী রতন কাহার ওই গান তৈরি করেছিলেন। স্বপ্না চৌধুরী ১৯৭৬ সালে অশোকা কম্পানির লেবেলে এই গান রেকর্ড করেছিলেন। বীরভূমের প্রত্যন্ত গ্রাম্য জীবনের ঝলক ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছিলেন রতন, অভিযোগ উঠেছিল বাদশাহ সেই অনুভূতিটাই বুঝতে পারেননি। পরে অবশ্য রতন কাহারের সঙ্গে দেখা করে বাদশা ক্ষমা চেয়ে নেন তবে এ ক্ষেত্রে রহমান এখনও চুপ। আর তাতেই আরও বাড়ছে ক্ষোভ।
ইংরেজদের অত্যাচারের প্রতিবাদে নজরুলের কলম গর্জে উঠেছিল, ডাক দিয়েছিলেন নতুন সকালের… রহমানের রিমেক ভুলে গিয়েছে সেই সব আগুনে প্রতিবাদের কথা, বুঝে উঠতেই পারেনি নির্মম দহনের অব্যক্ত অনুভূতি, এমনটাই অভিযোগ এনে আপাতত সরব সমাজের বিভিন্ন মহল।