Women’s Day 2022: শুভ্রকে প্রপোজ় করেছিলাম আমিই, শরীর পুড়লেও মন তো পোড়ে না: সঞ্চয়িতা যাদব
Women’s Day 2022: যে পথ ফেলে এসেছেন সেই পথে আর ফিরে তাকাতে চান না তিনি। এগিয়ে যেতে চান সামনে। এখন তাঁর ভরা সংসার। তিনি সঞ্চয়িতা দে যাদব। আন্তর্জাতিক নারী দিবসে তাঁর মুখোমুখি টিভিনাইন বাংলা...
অতিমানবীর সংজ্ঞা আমার জানা নেই, আর পাঁচটা মেয়ের মতোই সাজানো জীবনের স্বপ্নে বিভোর ছিলাম আমি। মধ্যবিত্ত পরিবার। সুখের আশ্রয়। সাল ২০১৪। এক ঝটকায় জীবনটা বদলে গেল হঠাৎই। কী দোষ ছিল আমার তা আজও জানি না। দিনের পর দিন অকথ্য অত্যাচার সহ্য করতে না পারার পরিণাম এই হয় বুঝি? নাহ, পিছন ফিরে তাকাতেও আর ইচ্ছে করে না আজ। কোর্ট কেস, আদালত, অনন্ত প্রতীক্ষার বিভীষিকাময় দিনগুলো আবার ঝালাই করার খুব কি দরকার? তার চেয়ে বরং আমার কথা বলি, আমার নতুন জন্মের কাহিনী শোনাই আপনাদের.. . আমি সঞ্চয়িতা। অনেকেই হয়তো আমাকে চিনে থাকবেন। খবরের কাগজে আমার ঝলসে যাওয়া মুখ দেখে কেউ-কেউ হয়তো বছর কয়েক আগে হয়েছিলেন সমব্যথী। আবার কেউ বা কেন আমাকেই অ্যাসিড ছোঁড়া হয়েছিল এই প্রশ্নের অনুসন্ধানেই ছিলেন মশগুল। এই কয় বছরে আমি বেশ বুঝেছি জীবন থেমে থাকে না। যে মুহূর্তে ভেবেছি এই বুঝি হেরে গেলাম, কখনও মা কখনও বাবা আবার কখনও বা শুভ্র মানে আমার বর শক্ত করে হাত ধরেছে। এখন তো হাত ধরার জন্য আরও একজন এসে গিয়েছে। আমার মেয়ে অর্ণা। গত বছরে নবমীতে হয়েছিল বলে শ্বশুরমশাই ওই নাম রেখেছিলেন। মা দুর্গার আর এক নাম– দুর্গা নারীজাতির শক্তির প্রতীক। আর অর্ণা আমার।
মেয়ে হওয়ার পর কিছুদিন মাতৃত্বকালীন ছুটি নিয়েছিলাম। এই জানুয়ারি থেকে আবার কাজে যোগ দিয়েছি। অফিস থেকে তাড়াতাড়ি ফিরে আসি এখন। মেয়ের ডাক্তারের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা, সংসার কাজ… আমার জীবন এখন ওই চার মাসের জ্যান্ত দুর্গাকে ঘিরেই। তবে শ্বশুরবাড়ি বড় ভাল, নয়তো কী করে যে সব দিক সামলাতাম। আমি আর শুভ্র যেদিন বিয়ে করি সেদিন ‘খবর’ হয়েছিল। হওয়ারই কথা। তবে কী জানেন? শরীর পুড়লেও, মন পোড়েনি। চোখ নষ্ট হলেও অনুভূতিগুলো আজও এক।
ও আমায় দিদি বলে ডাকত। যেহেতু আমার এনসিসির সার্টিফিকেট ছিল, তাই একটা ক্লাবে আমি প্যারেড করাতাম বাচ্চাদের। শুভ্র ওখানে খেলতে যেত। সেখান থেকেই আলাপ। তখনও কিন্তু আমি ‘অ্যাসিড সারভাইভার’ নই। দমদমের অতি সাধারণ ছিমছাম এক মেয়ে। আমি তখন অন্য সম্পর্কে। যে সম্পর্ক আমার মনে-শরীরে ক্ষত করে দিয়ে চলে গিয়েছিল। আমার উপর অ্যাসিড ছোঁড়া হল। অনেক লোক মুখ ফিরিয়ে নিল। এরকমই এক টালমাটাল সময়ে আমার তথাকথিত ‘ভাই’ কখন যে প্রিয়বন্ধু হয়ে উঠল বুঝতেই পারলাম না।
ডাক্তার বলেছিল আমি ডান চোখে আর দেখতে পারব না। দমদম থেকে আরজিকর অনেকটা দূরে। অ্যাসিড পোড়া মেয়েটাকে আগলে সাইকেলে বসিয়ে ফ্লাইওভার ঠেঙিয়ে হাসপাতাল নিয়ে গিয়েছে যে ছেলেটি সেই শুভ্র। মুখ ঢেকে রাখা মেয়েটাকে যে নতুন দুনিয়ার সঙ্গে আলাপ করিয়েছিল সেই শুভ্র। শুভ্র যে আমায় পছন্দ করতো কোনওদিন বলেনি। আমি ওকে প্রপোজ় করি প্রথম। ব্যস, আমাদের রূপকথার গল্পের সেই শুরু। প্রথম দিকে ওর বাড়িতেও মেনে নিতে সমস্যা যে হয়নি তা নয়। কিন্তু ওই যে, প্রেমের কাছে নতিস্বীকার করে স্বয়ং আল্পসও। আর এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে আমার শ্বশুরবাড়িই আমার সব শক্তির আধার। ২০২০-তে আমাদের বিয়ে হয়। শাহরুখ খান আমাদের বিয়ের ছবি শেয়ার করেছিলেন। সে এক দারুণ ব্যাপার। বিয়ের ঠিক আগেই যদিও মা চলে যান আমার। বিয়ে দেখে যেতে পারেননি। সেই কষ্ট রয়েছে আজও। তবে আমরা তিনজন এই বেশ দিব্যি আছি।
ওহ, জানিয়ে রাখি আমার অপরাধী গতবছর সাজা পেয়েছে। ১৪ বছর জেল হয়েছে তার। খারাপ লাগা একটাই, বিচার পেতে সাত বছর লেগে গেল। এই কয় বছরে বহু মানুষের ভালবাসা পেয়েছি। নতুন করে নিজেকে ভালবাসতে শিখেছি। জার্নিটা সোজা ছিল না একেবারেই। তবে কী জানেন? ঝলসে গিয়েছে যে মেয়ে সেই মেয়ের ‘আগুনপাখি’ হতে সমস্যা কী?