বিশ্ব দরবারে তাঁকে এক ডাকে চেনেন প্রায় সকলেই। বলিউডে ইতিমধ্যেই কাটিয়ে ফেলেছেন প্রায় তিন-তিনটি দশক। বিশ্বের তাবড় ব্যক্তিত্বরাও তাঁর প্রশংসায় পঞ্চমুখ। তিনি আর কেউ নন, অনুরাগ কাশ্যপ। ‘ব্ল্যাক ফ্রাইডে’র হাত ধরে পরিচালক হিসাবে বলিউডে পথচলা শুরু করেন। এরপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ‘দেব ডি’, ‘গুলাল’, ‘গ্যাংস অফ ওয়াসেপুর’-এর মতো দুর্দান্ত সব ছবি দর্শকদের উপহার দিয়েছেন তিনি। তবে ছবি বানাতে-বানাতে পরিবারকে ঠিকমতো সময় দেওয়া ওঠা হয়নি। মেয়ে যে কখন দেখতে-দেখতে বড় হয়ে গিয়েছে, তা মালুমই হয়নি বাবা অনুরাগের। এখন শুধুই আফসোস, খানিকটা অপরাধবোধও তাঁকে কুরে-কুরে খায়।
কেরিয়ার ও পারিবারিক জীবন, এক হাতে সবটা সামলানো সহজ নয়, একথা আকছার আমরা শুনে থাকি। কেউ-কেউ এই লড়াইটা জিতে যান, কেউ হারেন। আর এই হেরে যাওয়ার তালিকাতেই নিজেকে রেখেছেন পরিচালক অনুরাগ কাশ্যপ। এক কথায় উজ্জ্বল কেরিয়ার তাঁর। রামগোপাল বর্মার ‘সত্য’ ছবির চিত্রনাট্য লিখে কেরিয়ারের শুরু, এরপর আসেন পরিচালনার কাজে। আর তাতে বরাবরই ছক্কা হাঁকিয়েছেন। তিনি এতটাই কাজ পাগল মানুষ যে, মেয়েকেই আর সময় দিয়ে ওঠা হয়নি। অনুরাগ ও তাঁর প্রাক্তন স্ত্রী আরতির বাজাজের একমাত্র কন্যা আলিয়া কাশ্যপ। পেশায় একজন সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সর তিনি। ২২ বছর বয়সেই প্রেমিক শেন গ্রেগোয়ারের সঙ্গে বাগদান সেরে জীবনের নতুন অধ্যায়ে পা রেখেছেন। তবে বাবা অনুরাগ এখনও বুঝে উঠতেই পারেন না, কী করে এত তাড়াতাড়ি বড় হয়ে গেল মেয়ে। এ বিষয়ে তাঁর বক্তব্য, “আমি বাবা হওয়ার দিক থেকে হয়তো একটু প্রাচীনপন্থী। শুধু দায়িত্বই পালন করে গিয়েছি। এতটাই কাজ নিয়ে পাগল ছিলাম যে, বুঝেই উঠতে পারিনি কখন বড় হয়ে গেল আমার মেয়েটা। ”
এখন বড্ড আফসোস করেন তিনি। সাম্প্রতিক এক সাক্ষাৎকারে এমন কথাই শেয়ার করেছেন অনুরাগ। মেয়ে আলিয়ার কাছে ক্ষমা চাওয়ারও আর সময় নেই বলেই মানেন তিনি। মেয়ে এখন বাবার অভিভাবক। যেমনটা সন্তান বড় হলে হয় আর কি! তাই মেয়েও বাবাকে ক্ষমা করেই দিয়েছে। তবে খানিক অভিমানের সুরেই শুধু মাঝেমধ্যে বাবাকে বলে ফেলেন, “তুমি সারাক্ষণ কেন এত কাজ করো বাবা?” উত্তরে বাবা জানান, তিনি লো-বাজেটের ছবি বানান, তাই অনেক বেশি কাজ করতে হয় তাঁকে। লক্ষ্মী মেয়েও বাবার কথা বোঝে।
এই প্রসঙ্গে অনুরাগের বক্তব্য, মেয়ে বাবার থেকে বেশি বাবারই বন্ধু ইমতিয়াজ আলির সঙ্গে বেশি সময় কাটিয়েছেন। কারণ ইমতিয়াজ আলির কন্যা ও আলিয়া দুই বন্ধু। এ বিষয়ে একটি গল্পও শেয়ার করেছেন অনুরাগ। তাঁর কথায়, “একবার ইমতিয়াজের বাড়িতে আমরা সবাই গল্প করছিলাম। তখন আগের সব ছবি দেখতে-দেখতে ছবির সঙ্গে জড়িত নানা মুহূর্তের কথা শেয়ার করছিল সবাই। আমি একেবারেই চুপ ছিলাম। খানিকটা অবাকও। কারণ আমার তো কিছু মনেই নেই। শুধু ভাবছিলাম কোথায় ছিলাম আমি। কখন হল এত কিছু? আমি কাজ সামলাতে গিয়ে এসব কিছুরই স্বাদ পেলাম না।”