Street Art Exhibition: মোহরকুঞ্জের ফুটপাথে ‘ছবিওয়ালা’! শীতের সন্ধ্যায় চোখে পড়ুক ছবিদের কথা
ফুটপাথকে আর্ট গ্যালারি করে তুললেন একদল 'স্বশিক্ষিত-অশিক্ষিত' শিল্পীরা। একাডেমি অফ ফাইন আর্টসের বিপরীতে, মোহরকুঞ্জের ফুটপাথই আজ আর্ট গ্যালারি ছবিওয়ালাদের। ফুটপাথ জুড়ে ঝুলছে রঙ-তুলির গল্প।
শিল্প মানুষের জন্য। শিল্পীদের কাজ যদি মানুষের কাছে না পৌঁছায়, তাহলে অনেক কিছুই জীবনে অসম্পূর্ণ থেকে যায় বলে মনে করেন বহু শিল্পী। কিন্তু সাধারণ মানুষের কাছে নিজের শিল্পকে নিয়ে যাব কীভাবে? সবাই কি শিল্পের মর্ম বুঝবেন? শিল্পী তাঁর সৃষ্টির মধ্যে দিয়ে যে মনের ভাবকে প্রকাশ করেন, সেটা কি পথের ধারে থাকা ওই দিনমজুর বুঝতে পারবেন? এর উত্তর হ্যাঁ হোক বা না, তবুও শিল্পীর দায়িত্ব থেকে যায় তাঁর কাজকে মানুষের কাছে নিয়ে যাওয়ার। তাই-ই তো কোমর বেঁধে ফুটপাতে নেমে পড়েছে ‘ছবিওয়ালা’।
এখন নিউ ইয়ারের সময়। কলকাতার রাজপথ সেজে উঠেছে আলোয়। এরই মাঝে ফুটপাথকে আর্ট গ্যালারি করে তুললেন একদল ‘স্বশিক্ষিত-অশিক্ষিত’ শিল্পীরা। একাডেমি অফ ফাইন আর্টসের বিপরীতে, মোহরকুঞ্জের ফুটপাথই আজ আর্ট গ্যালারি ছবিওয়ালাদের। ফুটপাথ জুড়ে ঝুলছে রঙ-তুলির গল্প। ভিড় জমাচ্ছেন পথ চলতি সাধারণ মানুষও। বছরের প্রথম দিন তিলোত্তমা সাক্ষী থাকবে স্ট্রিট আর্ট প্রদর্শনীর। তবে প্রথম নয়, এই নিয়ে তৃতীয়বার আয়োজিত হচ্ছে স্ট্রিট আর্ট প্রদর্শনী ‘রংগলি’।
এই পথ প্রদর্শনীর ধারণা কীভাবে এল? উত্তর খুঁজতে গিয়ে TV9 বাংলা কথা বলল ‘ছবিওয়ালা’র কর্ণধার ও সদস্য বিপ্লব ধরের সঙ্গে। তিনি বললেন, “প্রত্যন্ত এলাকায় যে সব মানুষ থাকেন, যে সব মানুষ ‘গ্যালারি’ কী জিনিস সেটা জানেন না, কিংবা কেউ কেউ গ্যালারিতে যেতে অভ্যস্ত নন, সেখানে আমাদের লক্ষ্য একটাই গ্যালারি মানুষের কাছে পৌঁছবে।”
২০১৯ সালের ২৮ জুন কলকাতার গ্যালারি গোল্ডে প্রথম চিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয় ছবিওয়ালার। সাফল্যও পেয়েছিল ছবিওয়ালা এবং তখনই তাঁরা লক্ষ্য করেন যে, এক শ্রেণির মানুষই শুধু গ্যালারিতে আসেন এবং ছবি দেখেন। ‘ছবিওয়ালা’র কর্ণধার সৌরভ মিত্রের কথায়, “ছবিওয়ালার যে প্রথম চিত্র প্রদর্শনী হয় এবং এর আগেও বহু প্রদর্শনীতে লক্ষ্য করি যে শুধুমাত্র এক শ্রেণির মানুষই গ্যালারিতে এসে ছবি দেখতে অভ্যস্ত। বহু মানুষেরই এই অভ্যাস নেই, এমনকি অনেকে জানেনও না যে আর্ট গ্যালারি কী, সেখানে কী ধরনের প্রদর্শনী হয়। সেখান থেকে দেখলাম যে বেশির ভাগ মানুষই পুরোপুরি শিল্পবিমুখ। একটা দায়িত্ব ছিল যে, ধীরে-ধীরে এবার তাঁদের কাছে পৌঁছতে হবে। তখন ঠিক করলাম যে তাহলে রাস্তায় নামা যাক ছবি নিয়ে। স্ট্রিট প্রদর্শনী প্রথম হয় ২০১৯ সালের ২৩ ও ২৪ ডিসেম্বর, কলকাতার মোহরকুঞ্জের ফুটপাথে।”
কলকাতা শহর জুড়ে এত ফুটপাথ, তাহলে কেন একাডেমি অফ ফাইন আর্টসের উল্টো দিকের ফুটপাথকেই বেছে নিল ছবিওয়ালা? এই প্রসঙ্গে সৌরভ বললেন, “আমরা যখন ছবি আঁকতাম, তখন একটা বৈষম্য দেখতাম, যে সব শিল্পীদের ‘ডিগ্রি’ নেই, তাঁদের একটা অবহেলার চোখে দেখা হয়। বহু ক্ষেত্রে প্রেফারেন্সের জায়গা থেকে অনেকটা দূরে রাখা হয়। একটা ভ্রান্ত ধারণা হয়ে গিয়েছে যে, ‘ডিগ্রি’ না থাকলে সে শিল্পী নয়। এগুলো কোথাও গিয়ে খারাপ লাগত। তাহলে যাঁদের ‘ডিগ্রি’ নেই, যাঁরা কোথাও আঁকা শেখেননি, নিজে থেকে আঁকেন বা আঁকার চেষ্টা করেন, সেই সব শিল্পীরা কী করবেন? এখান থেকে এই সংগঠন তৈরির ধারণা আসে, যে এখানে এই সব শিল্পীরাই শুধু কাজ করবেন।”
এখন ছবিওয়ালার সদস্য বহু মানুষ। তাঁদের বয়সেরও যেমন পার্থক্য রয়েছে, তেমনই তাঁদের মধ্যে কেউ পেশায় চাকুরীজীবী, কেউ বা চিকিৎসক, কেউ বা পড়ুয়া, আবার কেউ ছবি এঁকেই দিন কাটান। এঁদের মধ্যে যেটা মিল, সেটা হল এঁরা সকলেই ছবি আঁকতে ভালবাসেন। আর তাঁদের এই শিল্পকে মানুষের কাছে তুলে ধরতে সাহায্য করছে ছবিওয়ালা। ১ ও ২ জানুয়ারি এমন ১২ জন শিল্পীর আঁকা ছবি প্রদর্শিত হচ্ছে মোহরকুঞ্জের ফুটপাথে।
ছবিওয়ালাদের ট্যাগ লাইন, “একটি স্বশিক্ষিত ও অশিক্ষিত শিল্পীদল”। ছবিওয়ালা হল সেই সব মানুষের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, যাঁরা ‘স্বশিক্ষিত’ শিল্পীদের ‘অশিক্ষিত’ বলে দাগিয়ে দেন অনায়াসে। একাডেমি অফ ফাইন আর্টসের গ্যালারিতে যখন ঝুলছে কোনও নামী শিল্পীর কাজ, তারই উল্টো দিকে নিজেদের আঁকা ছবি টাঙিয়েছে একদল ‘ডিগ্রি’হীন মানুষ।
কলকাতায় প্রথম স্ট্রিট প্রদর্শনী। স্মরণীয় কিছু ঘটনা বলতে গিয়ে, ছবিওয়ালার সদস্য তৌসিফ হক জানালেন, তাঁদের এই প্রদর্শনীতে এসেছেন পুলিশকর্মী, স্কুল ফেরত কচিকাঁচা থেকে শুরু করে গৃহিণী, দিনমজুর এবং বহু সাধারণ মানুষ, যাঁরা কোনওদিন গ্যালারির মুখই দেখেননি বা কোনও প্রদর্শনীর অংশ হননি। এটাই শিল্পী হিসাবে উপরি পাওনা।
তবে কলকাতাতেই থেমে নেই ছবিওয়ালাদের স্ট্রিট আর্ট প্রদর্শনী। ইতিমধ্যেই বীরভূমের সিউড়ির ফুটপাথকেও গ্যালারি বানিয়ে নিয়েছে ছবিওয়ালা। এবং আগামী দিনে বাংলার প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের মানুষের কাছে শিল্পকে পৌঁছে নিয়ে যাওয়াই হল এই ‘স্বশিক্ষিত ও অশিক্ষিত শিল্পীদল’-এর লক্ষ্য।
আরও পড়ুন: কলকাতায় ফের জমকালো র্যাপ সিন, সিজির মুখ থেকে শুনে নিন কেমন ছিল সেই অভিজ্ঞতা…