Women’s Day 2022: ‘সিগন্যালে দাঁড়ালে যখন দেখি উৎসুক চোখ আমার দিকে হাঁ করে তাকিয়ে আছে, মজাই লাগে’

Mar 08, 2022 | 4:08 PM

Women’s Day 2022: বয়স ২১, থাকেন পার্ক সার্কাসে, চালান স্পোর্টস বাইক... ইচ্ছে আছে বাইক নিয়ে ঘুরে বেড়াবেন সারা ভারত। বাংলার প্রথম হিজাবি-বাইকার আলিমাকে চেনেন?

Follow Us

 

ফিরতে রাত হয়েছে গতকাল। রাইড ছিল তো, বাবা ঠায় বসে ছিলেন। বাড়ি ঢুকতেই আমায় ইশারা করে বললেন, “যাও, হাত মুখ ধুয়ে সবার আগে মায়ের মুড ঠিক করো। খুব রেগে আছে কিন্তু।” তবে মায়ের রাগ আবার অল্পতেই পড়ে যায়। একটু কাছে গিয়ে গলা জড়িয়ে ধরতেও বরফ গলে জল।

আমি আলিমা রহমান। ওরা বলে আমিই নাকি ‘কলকাতার প্রথম হিজাবি বাইকার’। এক বেসরকারি কলেজের আইনের ছাত্রী। নেশায় রাইডার, বয়স এই ২১ ছুঁয়েছি। জন্মেছি পার্কসার্কাসে। কী ভাবছেন? এত কিছু থাকতে হিজাবি মেয়ের বাইকার হওয়ার ইচ্ছে হল কেন? ফ্ল্যাশব্যাক ২০১০। দাদা সুপারবাইক কিনল। সে সময় আমার বয়সও ১০। দাদার ওই বাইকের আওয়াজটা কেমন যেন ঘোর লাগা। নেশা ধরে গেল। বাবাকে বললাম বাইক চালাতে চাই। বাবা এগিয়ে দিল স্কুটি। বলল পা পাব না। অথচ মাশাল্লাহ, একদিনের মধ্যেই স্কুটি শিখে নিলাম। বাবার কাছে গিয়ে বললাম, ‘এবার’? আমার জেদের কাছে বাবাও আর না বলেনি। শুরু হল বাবা-মেয়ের বাইক শেখানো। আমাদের ফ্ল্যাটের নিচের ফাঁকা জায়গাটাতে ‘ডিসকভার’-এর গিয়ারে চাপ দিয়ে এক নতুন দুনিয়া খুলে গেল আমার সামনে। তখন আমি সবে ১১।

প্রথম-প্রথম আমি আর বাবা দু’জনেই রাইডে বের হতাম। বাবা শিক্ষক আমি তাঁর বাধ্য ছাত্রী। আমি ঠিক করে চালাচ্ছি কিনা, নিজেকে হিরো ভেবে স্টান্টবাজি করছি না, সে বিষয়ে দূর থেকে থাকত তাঁর কড়া নজর। হিজাব পরে বাইক চালানো সবাই যে ভালভাবে নিয়েছিল এমনটা নয়। এখনও মনে পড়ে বাইক নিয়ে বের হলেই টিনএজার ছেলেরা তাদের বাইকগুলো নিয়ে আমার সামনে দাঁড় করিয়ে দিত। যেন এক অব্যক্ত প্রতিযোগিতা। এগোতে না দেওয়ার অনন্ত প্রয়াস। কিন্তু আমি তো প্রতিযোগিতায় নামিনি। বাইক চালানোর মধ্যে দিয়ে সমাজের মজ্জায় বসে যাওয়া পিতৃতন্ত্রের চিরপ্রাচীন ছবিকেও আঘাত দেওয়ার ইচ্ছে ছিল না বিশ্বাস করুন। বাইক চালাতাম কারণ ভাল লাগত। ভারি বাইক ওঠাতে সমস্যা হতো আমারও। নিজেকে হি-ওম্যানও ভাবিনি। জেহাদ ঘোষণা করে কোনও নারীবাদ প্রমাণেরও কোনও ইচ্ছে ছিল না। তবুও ওই প্রতিযোগিতা। মন খারাপ হতো খুব। এখন আর হয় না।

সিগন্যালে দাঁড়ালে যখন দেখি উৎসুক চোখ আমার দিকে হাঁ করে তাকিয়ে আছে, মজাই লাগে। অনেকেই আবার ‘গুড জব’ বলে প্রশংসাও করেন। হিজাব পরে বাইক চালানো নিঃসন্দেহে আমাকে ভিড়ের মধ্যে আলাদা করে দাঁড় করায়। দু’টো জিনিসকে একসঙ্গে মেলাতে পারেন না অনেকেই। তাঁদের কাছে আমার প্রশ্ন, প্যাশন আর ধর্ম– দুটোকে এক পঙক্তিতে মেলানোর কি খুব দরকার? হিজাব আমার চয়েস, নিজের ইচ্ছায় আমি তা গ্রহণ করেছি। আর বাইক চালানো আমার ভালবাসা, আমার ইচ্ছে, আমার খুশি। শিখরাও পাগড়ি বেঁধে বাইক চালান। তাহলে আলিমার হিজাবে সমস্যা কোথায়? বিশ্বাস করুন আমার কিছু যায় আসে না।

আমি উড়তে চাই, দুনিয়াটাকে দেখতে চাই। ইচ্ছে আছে উত্তর ভারতে বাইক নিয়ে চসে বেড়াব। দু’বছর আগেই লাইসেন্স পেয়েছি। তাই সেই ইচ্ছে এখনও পূর্ণ হয়নি। বাবার চিন্তা হয় বুঝি। কিন্তু ভরসাও রয়েছে মেয়ের উপর। বিশ্বাস এমন একটা জিনিস যা জোর করে আদায় করা যায় না, সময় লাগে। সেই সময় আমি জীবনকে দিয়েছি। আমি রেবেল হতে চাইনি, চাইনি আন্দোলনও। নিজের ইচ্ছেকে মান্যতা দিয়ে যাপন করতে চেয়েছি জীবনটাকে। প্রথম ধাপ পেরিয়েছি, এখনও বহুদূর হাঁটা বাকি…।

(এই প্রতিবেদনটি অনুলিখনের ভিত্তিতে লিখিত, লিখেছেন বিহঙ্গী বিশ্বাস )

 

 

আরও পড়ুন- Women’s Day 2022: শুভ্রকে প্রপোজ় করেছিলাম আমিই, শরীর পুড়লেও মন তো পোড়ে না: সঞ্চয়িতা যাদব 

 

 

ফিরতে রাত হয়েছে গতকাল। রাইড ছিল তো, বাবা ঠায় বসে ছিলেন। বাড়ি ঢুকতেই আমায় ইশারা করে বললেন, “যাও, হাত মুখ ধুয়ে সবার আগে মায়ের মুড ঠিক করো। খুব রেগে আছে কিন্তু।” তবে মায়ের রাগ আবার অল্পতেই পড়ে যায়। একটু কাছে গিয়ে গলা জড়িয়ে ধরতেও বরফ গলে জল।

আমি আলিমা রহমান। ওরা বলে আমিই নাকি ‘কলকাতার প্রথম হিজাবি বাইকার’। এক বেসরকারি কলেজের আইনের ছাত্রী। নেশায় রাইডার, বয়স এই ২১ ছুঁয়েছি। জন্মেছি পার্কসার্কাসে। কী ভাবছেন? এত কিছু থাকতে হিজাবি মেয়ের বাইকার হওয়ার ইচ্ছে হল কেন? ফ্ল্যাশব্যাক ২০১০। দাদা সুপারবাইক কিনল। সে সময় আমার বয়সও ১০। দাদার ওই বাইকের আওয়াজটা কেমন যেন ঘোর লাগা। নেশা ধরে গেল। বাবাকে বললাম বাইক চালাতে চাই। বাবা এগিয়ে দিল স্কুটি। বলল পা পাব না। অথচ মাশাল্লাহ, একদিনের মধ্যেই স্কুটি শিখে নিলাম। বাবার কাছে গিয়ে বললাম, ‘এবার’? আমার জেদের কাছে বাবাও আর না বলেনি। শুরু হল বাবা-মেয়ের বাইক শেখানো। আমাদের ফ্ল্যাটের নিচের ফাঁকা জায়গাটাতে ‘ডিসকভার’-এর গিয়ারে চাপ দিয়ে এক নতুন দুনিয়া খুলে গেল আমার সামনে। তখন আমি সবে ১১।

প্রথম-প্রথম আমি আর বাবা দু’জনেই রাইডে বের হতাম। বাবা শিক্ষক আমি তাঁর বাধ্য ছাত্রী। আমি ঠিক করে চালাচ্ছি কিনা, নিজেকে হিরো ভেবে স্টান্টবাজি করছি না, সে বিষয়ে দূর থেকে থাকত তাঁর কড়া নজর। হিজাব পরে বাইক চালানো সবাই যে ভালভাবে নিয়েছিল এমনটা নয়। এখনও মনে পড়ে বাইক নিয়ে বের হলেই টিনএজার ছেলেরা তাদের বাইকগুলো নিয়ে আমার সামনে দাঁড় করিয়ে দিত। যেন এক অব্যক্ত প্রতিযোগিতা। এগোতে না দেওয়ার অনন্ত প্রয়াস। কিন্তু আমি তো প্রতিযোগিতায় নামিনি। বাইক চালানোর মধ্যে দিয়ে সমাজের মজ্জায় বসে যাওয়া পিতৃতন্ত্রের চিরপ্রাচীন ছবিকেও আঘাত দেওয়ার ইচ্ছে ছিল না বিশ্বাস করুন। বাইক চালাতাম কারণ ভাল লাগত। ভারি বাইক ওঠাতে সমস্যা হতো আমারও। নিজেকে হি-ওম্যানও ভাবিনি। জেহাদ ঘোষণা করে কোনও নারীবাদ প্রমাণেরও কোনও ইচ্ছে ছিল না। তবুও ওই প্রতিযোগিতা। মন খারাপ হতো খুব। এখন আর হয় না।

সিগন্যালে দাঁড়ালে যখন দেখি উৎসুক চোখ আমার দিকে হাঁ করে তাকিয়ে আছে, মজাই লাগে। অনেকেই আবার ‘গুড জব’ বলে প্রশংসাও করেন। হিজাব পরে বাইক চালানো নিঃসন্দেহে আমাকে ভিড়ের মধ্যে আলাদা করে দাঁড় করায়। দু’টো জিনিসকে একসঙ্গে মেলাতে পারেন না অনেকেই। তাঁদের কাছে আমার প্রশ্ন, প্যাশন আর ধর্ম– দুটোকে এক পঙক্তিতে মেলানোর কি খুব দরকার? হিজাব আমার চয়েস, নিজের ইচ্ছায় আমি তা গ্রহণ করেছি। আর বাইক চালানো আমার ভালবাসা, আমার ইচ্ছে, আমার খুশি। শিখরাও পাগড়ি বেঁধে বাইক চালান। তাহলে আলিমার হিজাবে সমস্যা কোথায়? বিশ্বাস করুন আমার কিছু যায় আসে না।

আমি উড়তে চাই, দুনিয়াটাকে দেখতে চাই। ইচ্ছে আছে উত্তর ভারতে বাইক নিয়ে চসে বেড়াব। দু’বছর আগেই লাইসেন্স পেয়েছি। তাই সেই ইচ্ছে এখনও পূর্ণ হয়নি। বাবার চিন্তা হয় বুঝি। কিন্তু ভরসাও রয়েছে মেয়ের উপর। বিশ্বাস এমন একটা জিনিস যা জোর করে আদায় করা যায় না, সময় লাগে। সেই সময় আমি জীবনকে দিয়েছি। আমি রেবেল হতে চাইনি, চাইনি আন্দোলনও। নিজের ইচ্ছেকে মান্যতা দিয়ে যাপন করতে চেয়েছি জীবনটাকে। প্রথম ধাপ পেরিয়েছি, এখনও বহুদূর হাঁটা বাকি…।

(এই প্রতিবেদনটি অনুলিখনের ভিত্তিতে লিখিত, লিখেছেন বিহঙ্গী বিশ্বাস )

 

 

আরও পড়ুন- Women’s Day 2022: শুভ্রকে প্রপোজ় করেছিলাম আমিই, শরীর পুড়লেও মন তো পোড়ে না: সঞ্চয়িতা যাদব 

 

Next Article