‘লগান’-এর কুড়ি বছর পার, রঘুবীর যাদব হাঁটলেন ডাউন মেমরি লেনে

শুভঙ্কর চক্রবর্তী |

Jun 15, 2021 | 12:49 PM

এত বড় দলে কখনও কোনও লড়াই-ঝগড়া মনোমালিন্য হয়নি। এক দারুণ পরিবেশ ছিল। আসলে শুটিংয়ের সময় নিজেদের স্টার মনে হয়নি। স্টার-ফার আমরা ছিলাম না। আমরা ছিলাম শ্রমিক। সিনেমার শ্রমিক।

Follow Us

মুছে যাওয়া দিনগুলি…

সাড়ে পাঁচ মাসের টানা শুটিং। শুধু আমার নয়, আমরা প্রত্যেকে যে আবেগ, যে সততা দিয়ে কাজ করেছিলাম, তার ফল ‘লগান’। আজও ছবিটা দেখলে ততটাই সজীব মনে হয়, যা আজ থেকে বিশ বছর আগে ছিল। ২০ বছর কীভাবে কেটে গেল এখনও ঠাহর করতে পারি না… যখন ছবিটার শুটিং শুরু করেছিলাম, তখন ভাবতাম কবে যে শুটিং শেষ হবে! রোজ সকাল সাড়ে চারটেয় ঘুম থেকে উঠতে হত আর ফিরতে-ফিরতে সন্ধে সাড়ে ছ’টা। গুজরাটের কচ্ছ-এ এক বিস্তর মরুপ্রান্তরে সেট তৈরি হয়েছিল। আড়াই ঘণ্টা তো যেতে-আসতেই সময় লেগে যেত। এসবের কোনও অভ্যেস ছিল না তখন আমার। কিন্তু ঠিক যে দিন শেষ হল শুটিং, মনটা একেবারে অন্য়রকম হয়ে গেল। মনে হতে লাগল শুটিং শেষ কেন হল? আসলে আমাদের দেখে তো অভিনেতা বলে মনে হচ্ছিল না। তা আমির হোক বা আশুতোষ (পরিচালক) কিংবা আমরা। মনে হত যেন আমরা প্রত্যেকে ওই গ্রামের এক-একজন বাসিন্দা। এমনকি ওই গ্রামের মানুষরাও ভাবতেন আমরা ওঁদেরই একজন। রোজ ৫০০-৮০০ গ্রামবাসী আসতেন শুটিং দেখতে। একটা সম্পর্ক তৈরি হয়ে গিয়েছিল ওঁদের সঙ্গে। মাঝে-মাঝে তো এটাও মনে হত আমরা গ্রামবাসী এবং ইংরেজদের যুগে বাস করছি।

 

ভুরা আর মুরগী

আমি গ্রামের ছেলে। তাই মুরগির পিছনে ধাওয়া করা এবং শেষমেশ সেটাকে ধরার এই বিষয়টার সঙ্গে ছোটবেলা থেকেই আমি পরিচিত। আমাদের বাড়ির কাছে একজন ছিল যিনি মুরগী পুষতেন। অনেক সময় মুরগীগুলো রাস্তায় উঠে পড়ত। আমরা ছোটরা সবাই ধাওয়া করতাম। আমাকে ভুরা (‘লগান’ ছবিতে রঘুবীর অভিনীত চরিত্রের নাম) সেই ছোটবেলার দিনে টেনে নিয়ে গিয়েছিল। আমার অভিনীত চরিত্রগুলো আমাকে সবসময়ই কিছু না কিছু শিখিয়েছে। ভুরা আমাকে শিখিয়েছে যে একজন অভিনেতাকে সব কিছু শিখতে হবে। এমন কোনও কাজ ফেলে রাখলে চলবে না, যা আপনি শেখেননি। কারণ আপনি জানেন না জীবনে কোন পরিস্থিতির মুখোমুখি আপনাকে হতে হবে। শেখার কোনও অন্ত নেই। শেখার কোনও বয়স নেই।

 

 

টাকার জন্য ছবি করিনি

আজ হয়তো অনেকে বিশ্বাস করবেন না, কিন্তু সত্যিই টাকাপয়সার কথা ভেবে ‘লগান’-এ অভিনয় করিনি। আমি কেন? আমরা কেউই করিনি। আমরা সবাই থিয়েটার থেকে উঠে আসা অভিনেতা ছিলাম। আমাদের কাছে প্রায়োরিটি ছিল কাজ করে আনন্দ যেন মেলে, ব্যস। টাকাপয়সায় কোনও আনন্দ ছিল না আমাদের। কাজে ছিল।

 

‘রাধা ক্যায়সে না জ্বলে’ গানে আমি ছিলাম না

আমার পাঁচ ইঞ্চি পেট কেটে ফেলা হয়েছিল! হ্যাঁ সত্যিই। শুটিংয়ের সময় আমার ফুড পয়েজ়নিং হয়ে যায়। তারপর ধরা পড়ল অ্যাপেন্ডিক্স। তারপর আমার পেটে পাঁচ ইঞ্চি কেটে তারপর অ্যাপেন্ডিক্স বাদ পড়ল। এক দিকে শুটিং চলছে আর আমি তখন হাসপাতালে ভর্তি। আমার পেটে এখনও দাগ রয়েছে। ‘লগান’-এর দাগ এখনও পেটে নিয়ে ঘুরছি। ‘রাধা ক্যায়সে না জ্বলে’ গানে আমি ছিলাম না। কারণ তখন আমি হাসপাতালে দিন কাটাচ্ছি।

 

 

মিস্টার পারফেকশনিস্ট

দীপা মেহতার ‘আর্থ’-এ আমি ও আমির একসঙ্গে কাজ করেছিলাম। তখন উনি আমাকে বলেন যে, ‘‘আমি একটা ছবি করছি, তুমি করবে?’’ আমি তখনই হ্যাঁ করে দিই। আমির এত বড় এক টিমকে যেভাবে পরিচালনা করেছেন, আর কেউ তা করার ক্ষমতা রাখেন না। মাথা ঠাণ্ডা রেখে সব কাজ করে গিয়েছেন। এত বড় দলে কখনও কোনও লড়াই-ঝগড়া মনোমালিন্য হয়নি। দারুণ একটা পরিবেশ ছিল। আসলে শুটিংয়ের সময় নিজেদের স্টার মনে হয়নি। স্টার-ফার আমরা ছিলাম না। আমরা ছিলাম শ্রমিক। সিনেমার শ্রমিক।

 

লগান ২.০

বিশ বছর কেটে গেল! মনে হয় এই তো কালকের ঘটনা। বিশ্বাসই হয় না। আসলে এখনও তৃপ্তি পাইনি। যদি শুনি ‘লগান’-এর সিক্যুয়েল হচ্ছে, আমি তো করবই!

 

 

আরও পড়ুন ‘লগান’-এ ২০,০০০ টাকাতে অভিনয় করতে রাজি ছিলাম, হাতে পাই ২ লাখ: যশপাল শর্মা

মুছে যাওয়া দিনগুলি…

সাড়ে পাঁচ মাসের টানা শুটিং। শুধু আমার নয়, আমরা প্রত্যেকে যে আবেগ, যে সততা দিয়ে কাজ করেছিলাম, তার ফল ‘লগান’। আজও ছবিটা দেখলে ততটাই সজীব মনে হয়, যা আজ থেকে বিশ বছর আগে ছিল। ২০ বছর কীভাবে কেটে গেল এখনও ঠাহর করতে পারি না… যখন ছবিটার শুটিং শুরু করেছিলাম, তখন ভাবতাম কবে যে শুটিং শেষ হবে! রোজ সকাল সাড়ে চারটেয় ঘুম থেকে উঠতে হত আর ফিরতে-ফিরতে সন্ধে সাড়ে ছ’টা। গুজরাটের কচ্ছ-এ এক বিস্তর মরুপ্রান্তরে সেট তৈরি হয়েছিল। আড়াই ঘণ্টা তো যেতে-আসতেই সময় লেগে যেত। এসবের কোনও অভ্যেস ছিল না তখন আমার। কিন্তু ঠিক যে দিন শেষ হল শুটিং, মনটা একেবারে অন্য়রকম হয়ে গেল। মনে হতে লাগল শুটিং শেষ কেন হল? আসলে আমাদের দেখে তো অভিনেতা বলে মনে হচ্ছিল না। তা আমির হোক বা আশুতোষ (পরিচালক) কিংবা আমরা। মনে হত যেন আমরা প্রত্যেকে ওই গ্রামের এক-একজন বাসিন্দা। এমনকি ওই গ্রামের মানুষরাও ভাবতেন আমরা ওঁদেরই একজন। রোজ ৫০০-৮০০ গ্রামবাসী আসতেন শুটিং দেখতে। একটা সম্পর্ক তৈরি হয়ে গিয়েছিল ওঁদের সঙ্গে। মাঝে-মাঝে তো এটাও মনে হত আমরা গ্রামবাসী এবং ইংরেজদের যুগে বাস করছি।

 

ভুরা আর মুরগী

আমি গ্রামের ছেলে। তাই মুরগির পিছনে ধাওয়া করা এবং শেষমেশ সেটাকে ধরার এই বিষয়টার সঙ্গে ছোটবেলা থেকেই আমি পরিচিত। আমাদের বাড়ির কাছে একজন ছিল যিনি মুরগী পুষতেন। অনেক সময় মুরগীগুলো রাস্তায় উঠে পড়ত। আমরা ছোটরা সবাই ধাওয়া করতাম। আমাকে ভুরা (‘লগান’ ছবিতে রঘুবীর অভিনীত চরিত্রের নাম) সেই ছোটবেলার দিনে টেনে নিয়ে গিয়েছিল। আমার অভিনীত চরিত্রগুলো আমাকে সবসময়ই কিছু না কিছু শিখিয়েছে। ভুরা আমাকে শিখিয়েছে যে একজন অভিনেতাকে সব কিছু শিখতে হবে। এমন কোনও কাজ ফেলে রাখলে চলবে না, যা আপনি শেখেননি। কারণ আপনি জানেন না জীবনে কোন পরিস্থিতির মুখোমুখি আপনাকে হতে হবে। শেখার কোনও অন্ত নেই। শেখার কোনও বয়স নেই।

 

 

টাকার জন্য ছবি করিনি

আজ হয়তো অনেকে বিশ্বাস করবেন না, কিন্তু সত্যিই টাকাপয়সার কথা ভেবে ‘লগান’-এ অভিনয় করিনি। আমি কেন? আমরা কেউই করিনি। আমরা সবাই থিয়েটার থেকে উঠে আসা অভিনেতা ছিলাম। আমাদের কাছে প্রায়োরিটি ছিল কাজ করে আনন্দ যেন মেলে, ব্যস। টাকাপয়সায় কোনও আনন্দ ছিল না আমাদের। কাজে ছিল।

 

‘রাধা ক্যায়সে না জ্বলে’ গানে আমি ছিলাম না

আমার পাঁচ ইঞ্চি পেট কেটে ফেলা হয়েছিল! হ্যাঁ সত্যিই। শুটিংয়ের সময় আমার ফুড পয়েজ়নিং হয়ে যায়। তারপর ধরা পড়ল অ্যাপেন্ডিক্স। তারপর আমার পেটে পাঁচ ইঞ্চি কেটে তারপর অ্যাপেন্ডিক্স বাদ পড়ল। এক দিকে শুটিং চলছে আর আমি তখন হাসপাতালে ভর্তি। আমার পেটে এখনও দাগ রয়েছে। ‘লগান’-এর দাগ এখনও পেটে নিয়ে ঘুরছি। ‘রাধা ক্যায়সে না জ্বলে’ গানে আমি ছিলাম না। কারণ তখন আমি হাসপাতালে দিন কাটাচ্ছি।

 

 

মিস্টার পারফেকশনিস্ট

দীপা মেহতার ‘আর্থ’-এ আমি ও আমির একসঙ্গে কাজ করেছিলাম। তখন উনি আমাকে বলেন যে, ‘‘আমি একটা ছবি করছি, তুমি করবে?’’ আমি তখনই হ্যাঁ করে দিই। আমির এত বড় এক টিমকে যেভাবে পরিচালনা করেছেন, আর কেউ তা করার ক্ষমতা রাখেন না। মাথা ঠাণ্ডা রেখে সব কাজ করে গিয়েছেন। এত বড় দলে কখনও কোনও লড়াই-ঝগড়া মনোমালিন্য হয়নি। দারুণ একটা পরিবেশ ছিল। আসলে শুটিংয়ের সময় নিজেদের স্টার মনে হয়নি। স্টার-ফার আমরা ছিলাম না। আমরা ছিলাম শ্রমিক। সিনেমার শ্রমিক।

 

লগান ২.০

বিশ বছর কেটে গেল! মনে হয় এই তো কালকের ঘটনা। বিশ্বাসই হয় না। আসলে এখনও তৃপ্তি পাইনি। যদি শুনি ‘লগান’-এর সিক্যুয়েল হচ্ছে, আমি তো করবই!

 

 

আরও পড়ুন ‘লগান’-এ ২০,০০০ টাকাতে অভিনয় করতে রাজি ছিলাম, হাতে পাই ২ লাখ: যশপাল শর্মা

Next Article